হিজাব আন্দোলনের সেই প্রতবাদি তাবাসসুম দ্বাদশের পরীক্ষায় পুরো রাজ্যে প্রথম
দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কলা বিভাগে প্রথম হয়েছে হিজাব আন্দোলনের সেই তাবাসসুম। পরীক্ষায় ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৯৩ নম্বর পেয়ে তিনি প্রথম হয়েছেন। হিন্দি, সমাজবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানে তিনি ১০০ এর মধ্যে ১০০ পেয়েছেন। তাবাসসুমের ইচ্ছা একটি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি’ পড়ার।
গত বছরের জানুয়ারিতে কর্ণাটকের একটি স্কুল হঠাৎ করে হিজাব নিষিদ্ধ করে। কর্তৃপক্ষ নির্দেশ জারি করেছে, ‘হিজাব বা কোনো ধর্মীয় পোশাকে ক্লাসে যাওয়া যাবে না। প্রতিষ্ঠানে এলেও শ্রেণীকক্ষে বোরকা বা হিজাব খুলে ফেলতে হবে। স্কুলের ইউনিফর্মই সেখানে একমাত্র পোশাক।
এর পরে, রাজ্যের অন্যান্য অংশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই ধরনের নির্দেশ দিতে শুরু করে। পরে এ নিয়ে ধর্মীয় উত্তেজনা দেখা দেয়। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে রাজধানী বেঙ্গালুরুতেও। ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা করেন মুসলিম মেয়েরা। কিন্তু কর্ণাটক হাইকোর্ট বলেছে, হিজাব ইসলামের অপরিহার্য অঙ্গ নয়। স্কুল ইউনিফর্ম শেষ জিনিস. মামলাটি এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
রাজ্যে হিজাব নিয়ে বিতর্ক উঠলে তাবাসসুম এবং তার অন্য পাঁচ বান্ধবী বেঙ্গালুরুতে স্কুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকদিন ঘরে বসে ছিলেন। এরপর পরিবারের পরামর্শে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তারা।
এক সাক্ষাৎকারে তাবাসসুম বলেন, ‘আমি আমার বাবার কথায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি। বাবা বললেন, দেশের আইন মানা জরুরি। নারী শিক্ষাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নারীরা আজ শিক্ষা না পেলে আমাদের জাতি আরও পিছিয়ে যাবে।
তাবাসসুম বলেন, ‘একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পোশাকের ওপর কোনো সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত নয়। শিক্ষা ও ধর্ম দুটোই আমার অধিকার। এটা খুবই অযৌক্তিক যে আমাকে শিক্ষার জন্য হিজাব পরিত্যাগ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের পরামর্শে স্কুলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেই। আমি পাঁচ বছর বয়স থেকেই হিজাব পরে আসছি। আমি হিজাব পরতে পছন্দও করি।
তাবাসসুম বলেন, ‘অনেকে উত্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমি সব সহ্য করেছি। বাবা-মা আর বড় ভাইকে সব সময় মনে রাখতাম। তারা বলতেন, প্রতিবাদের নামে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে, যারা চায় না মেয়েরা শিক্ষা পাক, তাদের উদ্দেশ্যই কিন্তু সফল হবে।’
প্রতিষ্ঠানের ড্রেস কোড নেই। ফলে হিজাব পরে ক্লাস করতে পারবেন তাবাসসুম। তবে রাজনীতির ধরন নিয়ে কিছুটা সন্দিহান সে । ভবিষ্যতে নতুন কোনো আদেশ জারি হবে কি না তা নিয়ে নিশ্চিত নন তাবাসসুম।
2 Comments