March 15, 2025
ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইফতার মাহফিলে নিজ আঞ্চলিক ভাষায় আবেগঘন ভাষণ দেন: কী ছিল ভাষণে,  মূল ভাষণ ও অনুবাদ

ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইফতার মাহফিলে নিজ আঞ্চলিক ভাষায় আবেগঘন ভাষণ দেন: কী ছিল ভাষণে,  মূল ভাষণ ও অনুবাদ

ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইফতার মাহফিলে নিজ আঞ্চলিক ভাষায় আবেগঘন ভাষণ দেন: কী ছিল ভাষণে, সহজ বাংলায় অনুবাদ

ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইফতার মাহফিলে নিজ আঞ্চলিক ভাষায় আবেগঘন ভাষণ দেন: কী ছিল ভাষণে,  মূল ভাষণ ও অনুবাদ

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূস গতকাল জাতিসংঘের মহাসচিবকে সাথে নিয়ে লম্বা টুপি পরিহিত অবস্থায় রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের সাথে ইফতার করেন এবং অনেক আবেগ তাড়িত হয়ে তাঁদের উদ্দেশ্যে নিজ জেলা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ভাষণ দেন। খুবই আনন্দের বিষয় হল সেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আগামী বছরের ঈদ রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজের বাড়িতে করতে পারেন।  হয়তোবা সেটা সৃষ্টিকর্তা সহায় হলে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দ্বারা সম্ভবও হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যটি নোট রেখে দেওয়ার মত চমৎকার হয়েছে। তাই আজকের লেখায় তাঁর বক্তব্যটি সাবলিল এবং সহজ বাংলা অর্থসহ হুবাহু উপস্থাপন করা হলো। 

প্রফেসর ইউনূস বলেন, “জাতিসংঘ মহাসচিব অনারার হাছে দুঁরি আইস্যেদে, অনারার এক্কানা সাহস অইবার লাই। আবার দুনিয়ার সামনে লড়াই গরিবু, যাতে অনারারে শান্তিপূর্ণভাবে অনারার দেশত পৌঁছাই দিত পারে। ইয়ান মস্ত বড় খুশির হতা। এই খুশির হতা আজিয়া আঁরা অনুভব গরির। আঁরা তারে (আন্তোনিও গুতেরেস) ভীষণভাবে ধন্যবাদ জানাই।’

(জাতিসংঘের মহাসচিব আপনাদের কাছে এসেছেন, আপনাদের  সাহস দিতে। তিনি আপনাদের শান্তিপূর্ণভাবে আপনাদের দেশে ফিরিয়ে দেয়ার  জন্য লড়াই করবেন। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আজ আমরা এই আনন্দ অনুভব করছি। আমরা তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই।)

তিনি চট্টগ্রামের ভাষায় আরও বলেন, “তারে কি হনঅ দেশত আনিত ফারেন না, তার দেশত। বনজঙ্গলর ভিতর ঢুকাইত পারিব না? পাইত্তো নঅ। তারা সরকারঅর বড় বড় হর্তা অলর লই হতা কঅই। এ জঙ্গলর ভিতর যনর হতা নঅ। তেই (আন্তোনিও গুতেরেস) হষ্ট গরি আইস্যে। নিজে রোজা রাইক্কে আজিয়া অনারারলাই।“

(কোন দেশ কি তাঁকে তাদের দেশে আনতে পারছে? তারা কি তাকে জঙ্গলে আনতে পারবে? না। তারা সরকারের বড় বড় কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এই জঙ্গলের ভেতর যাওয়ার কথা নয়। সে কষ্ট করে এসেছে। আজ সে নিজেই আপনাদের  জন্য রোজা রেখেছেন।)

ড. ইউনূস বলেন, “তারে (আন্তোনিও গুতেরেস) আঁরা বারেবারে যিয়ান বুঝাইতাম চাইর, তা অইল, ঈদ আইলে আঁরা বেয়াগ্গুন যাই দাদা–দাদির হবর জিয়ারত গরি। নানা–নানির হবর জিয়ারত গরি। আত্মীয়স্বজনর হবর জিয়ারত গরি। এই মানুষগুইন এডে আইয়েরে ঈদগান গরিবদে এই সুযোগ পাইত নঅ। ইতারার হবর জিয়ারত গরিবার হনঅ সুযোগ নাই। তারে অনারা এক্কান দাওয়াত দঅন। দাওয়াত দিবেন যে কিল্লাই; সাম্মোর বছর ঈদর সমত যেন অনারার বাড়ির মইধ্যে তেঁই (আন্তোনিও গুতেরেস) আইয়ে। ইয়ুর মইধ্যে এহত্র হঅন এবং দাদা–দাদির হবরঅর মইধ্যে যাইয়েনে তারে সংবর্ধনা দঅন।”

(আমরা তাঁকে (আন্তোনিও গুতেরেস) যা বোঝাতে চাইছি তা হলো, ঈদ এলে আমরা সবাই আমাদের দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করি। আমরা আমাদের দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করি। আমরা আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের কবর জিয়ারত করি। এই মানুষগুলো (রোহিঙ্গা শরণার্থীরা) এখানে আসার পর সে সুযোগ পায় না। তাদের কবর জিয়ারত করার সুযোগ নেই। আপনাদের  তাকে (আন্তোনিও গুতেরেস) আমন্ত্রণ জানানো উচিত। আগামী বছর ঈদের সময় তাকে আপনাদের বাড়িতে ( মিয়ানমারে) আসতে দাওয়াত দেন। আপনাদের বাড়িতে জড়ো হন এবং আপনাদের দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করেন এবং তাঁকে  (আন্তোনিও গুতেরেস)  স্বাগত জানান।)

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে আরও বলেন, “আঁরা এতুগ্গুন মানুষ আইস্যি। তারে আঁরা বুঝাইর, অনারাও বুঝাইতেন লাইগ্গুন। কেউ আঁরারে আইয়েরে ভাত হাবাই যঅক, ইয়ান ত আঁরা ন চাই। আঁরারতো নিজর ক্ষমতা আছে। ধনসম্পদ আছে, জায়গা–সম্পত্তি আছে। আঁরাতো গরিত পারির। আঁরারে দেশত যাইত ন দে বলি, আঁরা মাইনষর বোঝা অই গেইগই। আঁরার পুয়া ছা বড় অইতো চার। দাদা–দাদির হবরঅর পাশে, নিজর ঘরর পাশে, আত্মীয়স্বজনর পাশে; ইয়ান আঁরা ন পারির। তারে (আন্তোনিও গুতেরেস) আঁরা বুঝাইর।“

(আমরা অনেক মানুষ এসেছি। আমরা তাকে বুঝিয়েছি। আপনারা এটাও বোঝাচ্ছেন যে, আমরা চাই না কেউ এসে আমাদের খাওয়াক। আমাদের নিজস্ব ক্ষমতা আছে। আমাদের সম্পদ আছে। আমাদের জমি-জমা আছে। আমরাও এটা করতে পারি। কিন্তু আমাদের দেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এখন মানুষের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদের বাচ্চারা তাদের দাদা-দাদীর কবরের পাশে, তাদের নিজস্ব বাড়ির পাশে, তাদের আত্মীয়দের পাশে বড় হতে চায়; কিন্তু আমরা তা করতে পারি না। আমরা তাকে এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে বোঝাব)

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় আরও বলেন, “হবরগান বেগ্গুনঅরে দঅন যে, আঁরারে সুযোগ্গান দঅন, যাতে আঁরা নিজর বাড়িত ফিরি যাইত পারি। দুনিয়ার মানুষরে এই হতা বুঝঅম পরিবঅ। তেঁই (আন্তোনিও গুতেরেস) এ দায়িত্ব নিজে লইয়ে। হাজার রহমর দায়িত্ব তার। হডে যুদ্ধ অর, হডে কী অর; বেগ্গিনর দায়িত্ব তার। এত কিছুর ভিতরে অনারার দায়িত্ব হত গুরুত্ব সহকারে তেঁই বিবেচনা গরের, ইয়ান বুঝিত পাইত্তে লাইগ্গুনত। হত গুরুত্ব দিয়ে তেঁই।“

(আপনারা ফিরে যেতে চান, এই খবরটা সবাইকে দেন । পৃথিবীর মানুষের এটা বোঝা উচিত। তিনি (আন্তোনিও গুতেরেস) এই দায়িত্ব নিয়েছেন। তার হাজারো ভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে। কোথায় যুদ্ধ চলছে, কোথায় অন্য কিছু চলছে; তাকে সবকিছু দেখতে হয় । এই সবকিছুর মধ্যেও সে আপনাদের দায়িত্ব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন। আপনারাও এটা বুঝতে পারছেন।)

আরও পড়তে

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X