হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
হজ কী?
হজ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা। আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ইসলামী নিয়মানুসারে নির্দিষ্ট সময়ে কাবা শরিফ ও সংশ্লিষ্ট স্থান গুলোতে নির্ধারিত কাজ করা।
হজের ফরজ তিনটি
১. ইহরাম বাধা
২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান
৩. তাওয়াফে কাবা
হজের ওয়াজিব ছয়টি
১. ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।
২. মুযদালিফায় অবস্থান (৯ জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য হলেও অবস্থান করা।
৩. মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিপে করা।
৪. তামাত্তু ও কিরান হজকারীদের দমে শোকর তথা হজের কোরবানি করা।
৫. এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
৬. মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।
পবিত্র মক্কা নগরীতে সমবেত সারা বিশ্বের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অংশগ্রহণে (১৪ জুন) শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। হজ পালন করতে ইতোমধ্যে সৌদি আরবের মিনায় পৌঁছেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যা থেকে কেউ হেঁটে, কেউ যানবাহনে চড়ে রাতভর সেখানে জড়ো হন।
আরবি ক্যালেন্ডারের শেষ মাস জিলহজ মাসের ৮ তারিখে হজ শুরু হয়। এরপর ৯ জিলহজ আরাফাতের দিন। আর ১০ জিলহজ পশু কোরবানি করা হয়। আজ আরবি হিজরি সনের ১৪৪৫ সালের জিলহজ মাসের ৮ তারিখ (সৌদি আরবের তারিখ অনুযায়ী)। ১০ই জিলহজ কুরবানীর পর আরও দুই দিন রয়েছে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা। অর্থাৎ হজ সম্পন্ন করতে পাঁচ দিন সময় লাগে।
প্রায় এক মাস ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মক্কায় জড়ো হয়েছেন। সৌদি আরবের সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজের প্রত্যাশায় এরই মধ্যে সকল হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। আরও কয়েক হাজার স্থানীয় সৌদি যোগ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রথম দিনে, হাজীরা (পুরুষ) সেলাই ছাড়া ইহরাম বা সাদা কাপড় পরে। অন্যদিকে মহিলারা ঢিলেঢালা পোশাক পরেন। এই দিনে আরও কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। কারো সাথে রাগ না করা এবং যৌন কাজ না করা ইত্যাদি।
ইহরাম বেঁধে দলে দলে হাজিরা মিনায় চলে যান। মিনায় হাজিরা ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত মোট পাঁচবার নামাজ আদায় করবেন। ফজরের নামাজের পর তারা ১৪.৪ কিলোমিটার দূরের আরাফাত ময়দানের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
আরাফাতের দিনকে প্রধান হজ হিসেবে গণ্য করা হয়। ৯ জিলহজ মিনা থেকে ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ বলে আরাফাতের ময়দানে জড়ো হবেন হাজীরা। ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আরাফাতের বাতাস মুখরিত হবে। দুপুরে হজের খুতবা শুনবেন তারা। এরপর এক আযানে জোহর ও আসরের নামাজ হবে। সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা আরাফাত ময়দান ছেড়ে ৯ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফায় যাবেন। সেখানে আবার এক আযানে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। এ রাতে তারা মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন।
এ সময় তারা জামারায় প্রতীকী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার জন্য মুযদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করবে। শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের পর, হজযাত্রীরাজামারায় প্রতীকী বড় শয়তানের দিকে সাতটি ছোট নুড়ি নিক্ষেপ করবে। তারপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করুবে।এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। কোরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এহরাম খুলে পরবেন সাধারণ পোশাক। আবার কাবা তাওয়াফ করবে । সাফা-মারওয়ায় সাতবার সাই (চক্কর) করবে । তারপর আবার মিনায় ফিরে যাবেন । পরের দিন এবং তার পরের দিন পরপর দুই দিন হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে দ্বিতীয় ও ছোট শয়তানকে পাথর ছুড়ে মারার মাধ্যমে।
মহান আল্লাহ হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে তাঁর প্রিয়তম বস্তু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার নির্দেশ দেন। হজরত ইসমাইল (আ.) হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি যখন তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্রকে এই মিনারে নিয়ে গেলেন, তখন সেখানে শয়তান হাজির হয়। যা হযরত ইব্রাহিমকে আল্লাহর আদেশ অমান্য করতে প্ররোচিত করেছিল। এ সময় ইব্রাহিম (আ.) শয়তানের দিকে পাথর নিক্ষেপ করেন। এখন হাজিরা এই স্থানে প্রতীকী শয়তানকে পাথর মারবে । ইব্রাহিম (আঃ) যখন তার ছেলেকে কোরবানি দিতে গেলেন, তখন সেখানে আল্লাহ তায়ালা জান্নাত থেকে একটি দুম্বাকে এনে দেন।।
মিনার অনুষ্ঠান শেষে হাজিরা মক্কায় ফিরে এসে শেষবারের মতো কাবা তাওয়াফ করেন। যা ‘বিদায়ী তাওয়াফ’ নামেও পরিচিত।
নিজ দেশে বা দেশে ফেরার আগে অধিকাংশ হাজী মদীনায় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করবেন।
হজ ইসলামের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের একটি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় জামাতগুলির মধ্যে একটি। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানকে তাদের জীবনে অন্তত একবার হজ করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে হজ পালন করতে হয়। সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলের ইসলাম ধর্মের পবিত্র শহর মক্কা এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রাবিরতি করে হজ সম্পন্ন করতে পাঁচ দিন সময় লাগে।