ঘোর বিপাকে বাবর ক্রিকেট বাহিনী
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জিততে কম চেষ্টা করেন নাসিম শাহ। ভারতকে ১২০ রানে সীমাবদ্ধ করতে প্রধান ভূমিকা পালনকারী নাসিম ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। শেষ ওভারে দুটি চার মেরে দলকে জেতার চেষ্টা করেন তিনি। কয়েক বল আগে মাঠে নামলে হয়তো ম্যাচ জিততে পারতেন। তবে না পারার আক্ষেপে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়লেন এই তরুণ পেসার।
দলকে জেতাতে নাসিম যতটা করেছেন, অন্যরাও কোনো কমতি রাখেননি। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে ৬ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পথে পাকিস্তান। তাদের সম্ভাবনা এখন শুধু কাগজে কলমেই টিকে আছে। মৌসুমের অন্যতম ফেভারিট দলের অবস্থা মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। বাবর আজমের দলকে ধুয়ে দিচ্ছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা। অন্যরাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে।
নিউইয়র্কের উইকেট নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে। তবে পাকিস্তান ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যর্থ হওয়ায় সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইকেল ভন প্রশ্ন তুলেছেন। ব্যর্থতায় বাবরের আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভন বলেন, ‘কখনো কখনো সত্যিকার অর্থেই বাজে পিচও সেরা ম্যাচ উপহার দেয়…এটা (ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ) সেগুলোরই একটি। পাকিস্তানের এই বিশ্বাসই নেই যে তারা জিততে পারে। এটাই আসল কথা ।’ ।’ প্রাক্তন ভারতীয় পেসার ইরফান পাঠান ভনের মতো পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের সমালোচনা করেছেন, ‘আমি পাকিস্তানের সমস্ত ক্রিকেট ভক্তদের বলছি, আপনার দল ম্যাচের বিভিন্ন বিভাগে ভাল করেছে। কিন্তু শেষটা ভালো হতে পারেনি। যে কোনো পিচে যেখানে কিছু আছে সেখানে এই ব্যাটিং লাইন আপে সবসময় সমস্যা থাকবে।
দলের এমন হারে হতবাক সাবেক তারকা পেসার শোয়েব আখতারও । তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। ম্যাচের আগে তিনিই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘বিশ্বাস করুন, পাকিস্তানের কাছে দারুণ সুযোগ রয়েছে।’ পাকিস্তানের কাছে সত্যিই দারুণ সুযোগ ছিল। শোয়েব ভুল বলেননি। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি বাবর-রিজওয়ানরা । শোয়েব যা বললেন তা দেখে হতাশ গোটা দেশ। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে পুরো পাকিস্তান । একে অপরের জন্য খেলতে হয়েছে, দেশের জন্য খেলতে হয়েছে। ম্যাচ জেতার আকুতি দেখাতে হয়েছে। হতাশাজনক. পাকিস্তান কি সত্যিই সুপার এইটের আগে বিদায় নেওয়ার মতো দল? আল্লাহ জানে, আমি আপনার জন্য এই প্রশ্ন ছেড়ে। তুমি ঠিক করপাকিস্তানের জন্য ‘।
ওয়াসিম আকরাম-ওয়াকার ইউনুসরাও ধুয়ে দিয়েছেন বাবরের দলকে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান মহসিন নকভি দলটির প্রতি একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি ছুঁড়েছেন , যা চারদিক থেকে সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম ম্যাচ জিততে দলের ছোট অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন দেখছি আমাদের বড় অস্ত্রোপচার করতে হবে।” পিসিবি চেয়ারম্যান মূলত দলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার বার্তা দিয়েছেন। পরে তিনি সরাসরি বলেন, ‘আমাদের এখন দলের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের দিকে নজর দিতে হবে।’
উল্লেখ্য, রবিবার (৯ জুন) ভারতের দেওয়া ১২০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে গেলে নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেটে ১১৩ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস। ২ রানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রোহিত শর্মার দল।
ছোট রানের তাড়ায় ধীর ব্যাটিং দিয়ে শুরু করেন দুই ওপেনার বাবর ও রিজওয়ান। পঞ্চম ওভারে জুটি ভাঙেন জাসপ্রিত বুমরাহ। যাদবের হাতে ধরা পড়ার আগে ১৩ রান করেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
ওয়ান ডাউনে ১৩ রানে এলবির ফাঁদে পড়েন উসমান খানও। ১৩ রানের সেই বৃত্তে আটকে যান ফখর জামানও। পান্ডিয়াকে উইকেট তুলে দেন তিনি।
সতীর্থদের মিছিলে উইকেটে আশা জাগিয়েছিলেন রিজওয়ান। কিন্তু উইকেটে সেট হয়ে তিনিও হতাশ। বুমরাহের বলে থেমে যায় রিজওয়ানের ধীরগতির ইনিংস। ৪৪ বলে ৩১ রান করে বিদায় নেন এই ওপেনার।
এরপর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে ভারত। সেই চাপ সামলিয়ে জয়ের কক্ষপথে ফিরতে পারেনি পাকিস্তান।
জাসপ্রিত বুমরাহ ইনিংসের 19তম ওভারে একটি স্মরণীয় ডেথ ওভার করেন। সেখানে জয়ের ক্ষণিকের আশা হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। ১৯ তম ওভারে মোট ৩ রান আসে। শেষ ওভারে বাকি ১৮ রান তুলতে পারেননি গ্যারি কার্স্টেনের শিষ্যরা। আরশদীপ সিংয়ের ওভারের প্রথম বলেই আউট হন ইমাদ ওয়াসিম। পরের ৫ বলে ১০ রান নেন তারা।
দুই ম্যাচ জিতে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘এ’-তে শীর্ষে ভারত। সমান পয়েন্ট পেলেও রান রেটে পিছিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কানাডা। এরপর আছে পাকিস্তান।পাঁচ দলের গ্রুপে সবার শেষে আয়ারল্যান্ড।