ব্যাংকিংখাতে তারল্য সংকট কাটছে নাঃএকদিনে রেকর্ড ২৪৬১৫ কোটি টাকা ধার দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট কাটছে না। তারল্য সংকটে বিভিন্ন ব্যাংককে সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রেকর্ড ২৪ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একদিনে এত টাকা ঋণ দেওয়ার নজির নেই। এর আগে গত সোমবার ব্যাংকটি ১৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আশানুরূপ আমানত সংগ্রহ হচ্ছে না। একই সঙ্গে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে বাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা বেরিয়ে আসছে। এসব কারণে কয়েকটি ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ কমেছে।
চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো বাজারে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসেছে।
জানা গেছে, সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ায় তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে আমানতের সুদের হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সংকট কিছুটা হলেও কমার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। অব্যাহত সংকটে ধারদেনা করে চলছে দেশের অধিকাংশ ব্যাংক। আর এ সংকটে রয়েছে দেশের অধিকাংশ ইসলামী ব্যাংক।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আশানুরূপ আমানত সংগ্রহ হচ্ছে না। একই সঙ্গে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে বাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা বেরিয়ে আসছে। এসব কারণে কয়েকটি ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ কমেছে।
চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো বাজারে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসেছে। এ অবস্থায় সাময়িক চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ঋণের চাহিদা বেড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আর সরাসরি সরকারকে ঋণ দিচ্ছে না। সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য শরীয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংকের জন্য রেপো, লিকুইডিটি সাপোর্ট ফ্যাসিলিটি, স্থায়ী ঋণ সুবিধা এবং ইসলামী ব্যাংক লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (আইবিএলএফ) নিলাম করেছে।
এই নিলামে একদিনের মেয়াদী রেপো সুবিধার অধীনে একটি ব্যাংক ৩৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা, সাতদিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ২৫টি ব্যাংক ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা, একদিন মেয়াদি লিকুইডিটি সাপোর্ট সুবিধার আওতায় ১৪টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংক মোট ৭ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার বিড বা দরপ্রস্তাব দাখিল করে।
এছাড়া একটি ব্যাংক একদিনের স্থায়ী ঋণ সুবিধা হিসেবে ২১৫ কোটি টাকার দরপত্র দাখিল করেছে এবং ১৪ দিন মেয়াদী ইসলামী ব্যাংকের তারল্য সুবিধার আওতায় ৬টি ব্যাংক ৪ হাজার ২৭ কোটি টাকার দরপত্র জমা দিয়েছে। নিলাম কমিটি সকল বিড গ্রহণ করে। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, তারল্য সহায়তা সুবিধা, স্থায়ী ঋণ সুবিধা এবং আইবিএলএফের অধীনে২৪৬১৫ কোটি টাকা প্রদান করে। বার্ষিক সুদের হার ৭.৭৫ থেকে ৯.৭৫ শতাংশ।
দীর্ঘদিন ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও তা কমাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। একদিকে সর্বোচ্চ সুদের হার রাখা হয়েছে ৯ শতাংশ। আবার গত অর্থবছরে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ধার নেওয়া ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি দিয়েছে ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি ঋণ নতুন টাকা ছাপানোর মতো। এই প্রবণতা মুদ্রাস্ফীতি জ্বালানি. এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনীতিবিদরা এভাবে ঋণ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। আইএমএফ ঋণের শর্তসাপেক্ষে গত জুলাই থেকে সুদের হারের সীমা তুলে নিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। আর ২৭ নভেম্বর রেপো সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭.৭৫ শতাংশ করা হয়েছে।
অনেক ব্যাংক ঋণের টাকা আদায় করতে পারছে না। একই সঙ্গে আগের তুলনায় কমছে জমার পরিমাণ। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনতেও দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিলে তারল্য সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যাংকগুলো ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৩১ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধ করেছে ৩২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে সরকার বেশি ঋণ পরিশোধ করেছে।
চলতি বছরের জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। আর অক্টোবর শেষে তা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার প্রতিদিনই ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। এতে একদিকে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। অন্যদিকে দেশের বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। এ কারণে দেশে কর্মসংস্থান নেই। সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও কাজ হচ্ছে না। চলমান তারল্য সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতের সুদের হার বাড়িয়েছে। কিন্তু তার পরেও সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে।
দেশের প্রায় সব ব্যাংকই তারল্য সংকটে রয়েছে। দেশের সব ইসলামী ব্যাংক আরও বেশি তারল্য সংকটে রয়েছে।ইসলামি ব্যাংকসহ শরীয়াহ ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এতে দেশে এক ধরনের বিনিয়োগ স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও কাজ হচ্ছে না।