ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চান ৬০ ব্রিটিশ এমপি
ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন ৬০ জন ব্রিটিশ এমপি। এ বিষয়ে তারা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। এতে ‘আন্তর্জাতিক আইন বারবার লঙ্ঘনের’ জন্য ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনের সাথে বাণিজ্য নিষিদ্ধ করার এবং দেশটির সাথে বিদ্যমান বাণিজ্য সম্পর্ক পর্যালোচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাতে ব্রিটিশ সংসদ সদস্য রিচার্ড বার্গন ও ইমরান হোসেনের উদ্যোগে এ চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিটি গত জুলাইয়ে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস (আইসিজে) এর একটি মতামত উল্লেখ করে। যেখানে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলকে বেআইনি ঘোষণা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংঘাতের অবসানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “আদালত দেখেছে যে, যুক্তরাজ্য সহ সমস্ত রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে তারা দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ উপস্থিতি দ্বারা সৃষ্ট পরিস্থিতিকে আইন হিসাবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং সংঘাতকে স্থায়ী করার জন্য কোনও সহায়তা বা সমর্থন প্রদান না করা। ” সংসদ সদস্যরা যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং আইসিজে-র রায় বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন ৬০ জন ব্রিটিশ এমপি, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে টোকিওর চেয়ে গাজায় বেশি বোমা ফেলা হয়েছে’
চিঠিতে সংসদ সদস্যরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হচ্ছে অবৈধ বসতি স্থাপনের সঙ্গে বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা, ইসরায়েলের সঙ্গে বিদ্যমান ও চলমান বাণিজ্য সম্পর্ক পর্যালোচনা করা এবং দেশটিতে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করা।
প্রসঙ্গত, গাজা উপত্যকা জুড়ে ইসরাইলি হামলা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দেশটিতে হামলায় অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন।
গাজার চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছে। মধ্য গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী তাদের বোমা হামলা বাড়িয়েছে। এছাড়াও, ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলি উত্তর ও দক্ষিণে আরও গভীরে তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
এতে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪,৩৩০ এ দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ১০৪,৯৩৩ জন। অন্যদিকে, ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর হামলায় প্রায় আড়াইশ জনকে জিম্মি করে দলটি। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা যুদ্ধবিরতির আওতায় বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ইসরাইল এক বছর ধরে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে। দেশটির ক্রমাগত হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এর জন্য প্রতিদিন ১০০ টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় ভবন ধসের কারণে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমেছে। এই সমস্ত ধ্বংসস্তূপ একত্র করা হলে তা মিশরের ১১টি বড় পিরামিডের আকার হবে। এই ধ্বংসস্তুপ অপসারণ করতে খরচ হবে $৫০০ থেকে $৬০০ মিলিয়ন। ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম অনুসারে, গাজায় ১৩৭,২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এই অঞ্চলের মোট ভবনের অর্ধেকেরও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর মধ্যে এক চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। দশমাংশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং তৃতীয়াংশ মাঝারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তুপ অপসারণ করতে ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ ইসরাইলি বর্বর হামলায় গাজা এখন মহা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।