কেমন হলো কমলা-ট্রাম্প বিতর্ক
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রথম টিভি বিতর্ক ছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। তারা একে অপরকে এক তিল পরিমাণ ছাড়ও দিতে চায়নি।এই টিভি বিতর্ককে বলা হয় ‘ফায়ারি ডিবেট’। ফিলাডেলফিয়াতে, হ্যারিস এবং ট্রাম্প একটি এবিসি টিভি বিতর্কে একে অপরের মুখোমুখি হন। অর্থনীতি, গর্ভপাত, অভিবাসন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন, রাজধানীতে দাঙ্গার মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে তর্ক-বিতর্ক ও অভিযোগে। দুজনেই একে অপরকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলেছেন
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর ’২৪) রাতে এই বিতর্কে মুখোমুখি হন তারা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টায়) মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজের আয়োজনে এই বিতর্ক হয়। বিতর্কের সঞ্চালক ছিলেন ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস।
একনজরে কমলা-ট্রাম্পের বিতর্কে উঠে আসা বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক:-
অর্থনীতি, ধনী-গরিব:
কমলা হ্যারিস বলেন, আপনাদের জন্য ট্রাম্পের কোনো পরিকল্পনা নেই। ট্রাম্প কেবল ধনীদের ট্যাক্স অবকাশ দেওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি সুবিধাবাদী অর্থনীতির পক্ষে। জবাবে, ট্রাম্প বলেন যে, হ্যারিস একটি খালি কলস, অনেক হাইপ সহ। হ্যারিসের কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি বাইডেনের প্ল্যান টু পরিবেশন করছেন।
হ্যারিসের অভিযোগ, ট্রাম্প চীন ও অন্যান্য দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াতে চান। এটা আসলে আমেরিকানদের উপর একটি বিক্রয় কর। ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। প্রতি মাসে সাধারণ মানুষের উপর কতটা বোঝা চাপানো হবে তাও তিনি জানান।
ট্রাম্প বলেছেন, ট্যাক্সের টাকা দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কর কমিয়ে দেবেন। তিনি দাবি করেন, ট্যাক্সের ফলে পণ্যের দাম বাড়বে না। বরং এমন কোনো ট্যাক্স না থাকলে বেশি দামে জিনিস কিনতে হবে। হ্যারিস দাবি করেন যে তিনি আমেরিকান জনগণের জন্য একটি আর্থিক নীতি অনুসরণ করছেন। ট্রাম্প পাল্টা জবাব দেন যে হ্যারিস পুলিশের তহবিল কাটতে চায়, সবার কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে চায়। হ্যারিস বলেছেন যে তিনি এবং তার রানিং সাথী ওয়ালজের লাইসেন্সকৃত বন্দুক রয়েছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য তিনি বন্দুকটি রেখেছিলেন।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সম্পর্কে:
ট্রাম্প এবং হ্যারিস উভয়কেই জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কিভাবে তারা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বন্ধ করবে। হ্যারিস তার আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে ১,২০০ জনকে হত্যা করে। তিনি বলেন, এখন অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করা দরকার। গাজায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। এছাড়াও যাদের বন্ধি রাখা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে। হ্যারিস বলেন, আমাদের দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে যেতে হবে। এর ফলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে এই লড়াই হতো না। হ্যারিস ইসরাইলকে ঘৃণা করেন, তিনি অভিযোগ করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে দুই বছরে ইসরাইল নামে কোনো দেশ থাকবে না। হ্যারিস আরবদেরও ঘৃণা করেন বলে অভিযোগ ট্রাম্পের। আমি রাষ্ট্রপতি হলে দ্রুত সমাধান করব। হ্যারিস বারবার শপথ করে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ইসরায়েলের নিরাপত্তার অধিকারকে সমর্থন করেন। তার পাল্টা দাবি, ট্রাম্পের কথায় বিশ্বনেতারা হাসছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ:
ট্রাম্প দাবি করেন, আমি এই যুদ্ধ বন্ধ করতে চাই। আমি মানুষের জীবন বাঁচাতে চাই। বাইডেন প্রশাসন রাশিয়াকে ইউক্রেন আক্রমণের অনুমতি দেয়।আপনি কি চান ইউক্রেন যুদ্ধে জিতুক? তখন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ট্রাম্প। হ্যারিসের অভিযোগ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পুতিনকে ইউক্রেনের দখল নিতে দেবেন। হ্যারিস বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে এতদিনে পুতিন কিয়েভে বসে থাকতেন। ইউরোপের বাকি অংশে তার নজর ছিল। হ্যারিস বলেন, ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট দেখতে চান না।
ক্যাপিটল হিলে হামলার বিষয়:
ট্রাম্প বলেন এই বিষয়ে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তারা আমাকে বক্তৃতা দিতে বলেছেন, এটুকুই। ক্যাপিটল হিলে তার সমর্থকরা নামার আগে ট্রাম্প ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, নরকের মতো লড়াই করুন। এরপর তিনি তার সমর্থকদের শান্তিপূর্ণভাবে রাজধানীতে যেতে বলেন। ট্রাম্প দুঃখ প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন। জবাবে হ্যারিস বলেন, “পৃষ্ঠাটি দেখুন।” সেদিন যে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল দেখুন।
গর্ভপাত সম্পর্কে:
ট্রাম্পকে গর্ভপাত সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাওয়া হয়। ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটরা গর্ভধারণের নয় মাস পর গর্ভপাতের অধিকার বাড়াতে চায়। তিনি চান রাজ্যগুলি গর্ভপাতের বিষয়টি ঠিক করুক। তারা আইন প্রণয়ন করুক। তিনি ধর্ষণ বা কিছু ক্ষেত্রে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে। ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে কিছু রাজ্যে শিশুদের জন্মের পরেও হত্যা করার ব্যবস্থা রয়েছে।বিতর্ক পরিচালনাকারীরা বলেছিলেন যে কোনও রাজ্যে এমন ব্যবস্থা নেই।
হ্যারিস বলেন, দুই বছর আগে ট্রাম্প কর্তৃক নিযুক্ত তিনজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ফেডারেল পর্যায়ে গর্ভপাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার বাতিল করেছেন। তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, গর্ভপাতের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা ভুক্তভোগীদের কোনো ছাড় দেয়নি।
শেষ মন্তব্য
কমলা হ্যারিস এইভাবে বিতর্কের অবসান ঘটান, আমরা ফিরে যেতে চাই না। আমরা সামনে তাকাতে চাই। আমরা নতুন পথে হাঁটতে চাই।
ট্রাম্প বলেন, হ্যারিস বাইডেন প্রশাসনের অংশ। তিনি মানুষকে চাকরি দিতে পারেননি, মার্কিন সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। তার এখন পদত্যাগ করা উচিত।
1 Comment