কমলাকে ঘায়েল করতে ট্রাম্প শিবির তিনটি ইস্যু ব্যবহার করছে
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে ইহুদি বিরোধী বলেছেন। শুক্রবার কট্টর-ডান সমর্থকদের সমাবেশে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলাকে এভাবেই আক্রমণ করেন ট্রাম্প। তার প্রচার শিবির কমলাকে আক্রমণ করতে ৩টি ইস্যু ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে
১. তাকে বামপন্থী বলা
২. একজন প্রসিকিউটর হিসেবে তার ভূমিকার সমালোচনা করা
৩. এবং বাইডেনের সহযোগী হিসেবে তার ভূমিকার সমালোচনা করা
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত রবিবার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেওয়ার পর, কমলা ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আসেন। ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
গত শুক্রবার দক্ষিণ ফ্লোরিডায় এক সমাবেশে বক্তৃতার সময় ট্রাম্প তার বেশিরভাগ সময় কমলা নিয়ে কথা বলেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কমলার কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। তবে বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের অধিকাংশ অভিযোগই সত্য নয়।
গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ৫৯ বছর বয়সী কমলা সেদিন কংগ্রেসে উপস্থিত ছিলেন না। কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইহুদিদের পছন্দ করেন না। তিনি ইসরাইল পছন্দ করেন না। সে বদলাবেও না।
ট্রাম্প কমলাকে ইহুদি-বিরোধী বলেছেন এটাই প্রথম নয়। এর আগে গত বুধবার নর্থ ক্যারোলিনায় দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, কমলা হ্যারিস সম্পূর্ণভাবে ইহুদিদের বিরুদ্ধে।
তিন-ইস্যু আক্রমণ: কমলা হ্যারিস, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখেছেন। রিপাবলিকানরা অবশ্য তা মানতে নারাজ তারা, টনি ফ্যাব্রিজিও, যিনি ট্রাম্পের প্রচারণার জরিপ করেছেন, এটিকে “হ্যারিস হানিমুন পর্ব” বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, ইতিবাচক মিডিয়া কভারেজ এবং স্ব-অনুপ্রেরণা মিলিতভাবে ডেমোক্র্যাটদের উত্থানে অবদান রেখেছে।
ট্রাম্প কমলাকে ‘র্যাডিক্যাল’ বামপন্থী বলেছেন
বিবিসি বলছে যে কমলা হ্যারিস ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে ব্যর্থ হন। পরে তিনি প্রার্থীতার জন্য সেই বিড থেকে সরে আসেন। তখন পর্যন্ত কমলার প্রচারণায় কিছু ত্রুটি ছিল। তিনি স্পষ্ট কোনো বার্তা দিতে পারেননি। এরপর তাকে কিছু ভুল ও অনুচিত কথা বলতে দেখা যায়। সে সময় কমলা সিনেটর ছিলেন। কমলা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অন্যান্য প্রার্থীদের মতো বামপন্থীদের দিকে ঝুঁকেছিলেন।
২০১৯ সালে বিভিন্ন বিতর্ক এবং সাক্ষাত্কারে, কমলা হ্যারিস একটি সরকার পরিচালিত ব্যবস্থার অধীনে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা বাতিল করার পক্ষে ছিলেন। তিনি পুলিশ বিভাগে সংস্কারের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা খাতের বরাদ্দ অন্য অগ্রাধিকার খাতে স্থানান্তর করতে হবে। কমলা নথিপত্র ছাড়াই মার্কিন সীমান্ত অতিক্রমকারী অভিবাসীদের অপরাধী না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বাতিল করার কথাও বিবেচনা করেছেন। কমলা গ্রিন নিউ ডিল পরিবেশ আইনকে সমর্থন করেছিলেন।
এখন কমলা হ্যারিসের সেই অবস্থানগুলোকেই বিরোধীরা সামনে টেনে এনে আক্রমণ করছে। তাকে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে বামপন্থি।
বইডেনের প্রচারণার সাথে জড়িত থাকায় সমালোচনা
পোল দেখায় যে বইডেনের প্রচারণা কয়েক মাস ধরে অশান্তিতে রয়েছে। তার অভিবাসন নীতি অজনপ্রিয় ছিল। মূল্যস্ফীতি কম হওয়া এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার পরেও ভোটাররা তাকে উচ্চ মূল্যের জন্য দায়ী করে। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি বইডেনের অব্যাহত সমর্থন তরুণ ভোটারদের মধ্যে তার সমর্থন হ্রাস করেছে। যেহেতু কমলা হ্যারিস বর্তমানে বইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট , তাই বর্তমান প্রশাসনের ক্রিয়াকলাপ, ভাল বা খারাপ যাই হোক না কেন, তার দায়ভার বর্তায়। বইডেনের ব্যর্থতার দায় কমলার ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে ট্রাম্প শিবির।
প্রসিকিউটরের কার্যকালের ভূমিকার সমালোচনা
রিপাবলিকানরা কমলাকে আক্রমণ করছে মাদক-সম্পর্কিত অপরাধে জড়িত কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর হওয়ার জন্য। এর মাধ্যমে কমলার নিজস্ব ঘাঁটিতে সমর্থন কমানোর চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে, তারা কিছু উদাহরণ সামনে আনছে, যেমন কমলা নতুন করে অপরাধ করা মানুষের বিচার করেননি কিংবা তাদের প্যারোলে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
1 Comment