১৫ বছর অপেক্ষার অবসান: উইন্ডিজ টেস্ট জিতে ইতিহাস গড়েছে ‘নতুন বাংলাদেশ’
সাকিব, তামিম, মুশফিকুর রহিমের মতো সিনিয়র অভিজ্ঞরা নেই। নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও ইনজুরির কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাননি। দলের নতুন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম টেস্টে ২০১ রানে বিধ্বস্ত হয় তারা। তবে দ্বিতীয় টেস্টে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন করে বাংলাদেশ। অধিনায়ক মিরাজের অধীনে, যার বয়স মাত্র এক টেস্ট, তারা জ্যামাইকায় দ্বিতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০১ রানে পরাজিত করে এবং ড্রয়ে সিরিজ শেষ করে। চতুর্থ দিনে ২৮৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণি জাদুতে তাসকিন আহমেদ-হাসান মাহমুদের বোলিংয়ে ১৮৫ রানে অলআউট হয় ক্যারিবীয়রা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৫ বছরের জয়ের ধারার অবসান ঘটানো এই ম্যাচটি তাদের বিপক্ষে তাদের পঞ্চম জয় হিসেবে এসেছে। প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে এক বছরে তিনটি টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ।
এই প্রথম দেশের বাইরে এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সবচেয়ে বেশি টেস্ট (৩টি ম্যাচ) জয়ের রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। আগের রেকর্ডটিও ছিল ১৫ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দুটি টেস্ট জিতে।
ইয়র্কারে শামার জোসেফের স্টাম্প ভেঙে দেন নাহিদ রানা। ততক্ষণে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা উদযাপনের উন্মাদনায়। বলা হচ্ছে ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট জয়। এটাও বলা যায় লাল বলের ক্রিকেটের সাম্প্রতিক জয় উল্টে গেছে। সবাইকে ছাড়িয়ে রেকর্ড গড়লেন মেহেদী হাসান মিরাজরা।
জ্যামাইকায় কিংস্টন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৫ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। মিরাজের দল ১০১ রানে জিতে দুই টেস্টের সিরিজ ১-১ ব্যবধানে সমতায়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তাদের ২০২৪ সালের টেস্ট মিশন জয়ের মাধ্যমে শেষ করেছে।
কিংস্টনের সাবিনা পার্কে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই টেস্ট জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হবে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ২৮৭ রানের টার্গেট ছিল। কিংস্টনে এর আগে কোনো দল এত বড় রান তাড়া করে জয় পায়নি। তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৫ রানে অলআউট হয়ে যায় উইন্ডিজ।
প্রথম টেস্টে বড় হারের পর মেহেদী মিরাজ টস জিতে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে তার দল। মাত্র ১৬৪ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন ওপেনার সাদমান ইসলাম।
জবাবে বাংলাদেশি বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৬ রানে গুটিয়ে দেয়। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন তরুণ পেসার নাহিদ রানা। প্রথম ইনিংসে ১৮ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে জাকের আলীর দৃঢ়তায় ২৬৮ রান করে বাংলাদেশ। জাকের এক প্রান্ত দিয়ে ৯১ রানের ইনিংস খেলেন। সাদমানও যোগ করেন ৪৬ ও মিরাজ ৪২ রান। জয়ের জন্য স্বাগতিকদের ২৮৭ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর হঠাৎই ছন্দ হারাতে শুরু করে বাংলাদেশ। ভারত সফর কিংবা ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ- লজ্জাজনক পরাজয়। এরপর টেস্ট ক্রিকেটের আকাশে হঠাৎ কালো মেঘ জমতে শুরু করে। এবার তার আড়ালে উঁকি দিচ্ছে লাল সূর্য. চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে টেস্ট জয়, তাও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে_১৫ বছর পর!
সিরিজের প্রথম টেস্ট ২০১ রানে হারার পর দ্বিতীয় টেস্টে এভাবেই ফিরছে বাংলাদেশ। টানা পাঁচ ম্যাচে হারের পর জয় দেখতে পাওয়া স্বস্তির। এই টেস্টে অর্জনের রেকর্ডে অনেক কিছুই আছে। জাকের আলীর শক্ত আঘাতে বিপদের মুখে সাহসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করা, মাথা খাটিয়ে দিয়ে খেলা। বিদেশে কেন তাকে নিয়ে বাংলাদেশের এত আশা, তা আবারও প্রমাণ করলেন নাহিদ রানা।
বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটকে কেন বিশ্বমানের বলা হয় তাসকিন-হাসানরা দেখিয়েছেন। অধিনায়ক মিরাজের অবিশাস্য অর্জন। বিদেশে পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট জিতেছেন তিনি। তার বোলিং পরিবর্তন, বোলারদের ব্যবহার করার পদ্ধতি, ফিল্ডিং বা দলকে শক্তিশালী করা; সে সবকিছুতেই স্টার্স মার্ক দাবি করতে পারন তিনি ও তার বাংলাদেশ। সেও হয়তো লেটার মার্ক চাইবে! কেন না এই প্রথম বাংলাদেশ ‘সিনিয়র পাণ্ডবদের ‘ ছাড়া টেস্ট জিতেছে, তাও বিদেশের মাটিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৬৪ ও ২৬৮ (জাকের ৯১, সাদমান ৪৬, মিরাজ ৪২, শাহাদাত ২৮; রোচ ৩/৩৬, আলজারি ৩/৭৭) ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৪৬ ও ১৮৫ (হজ ৫৫, ব্রাফেট ৪৩; তাইজুল ৫/৫০, হাসান ২/২০, তাসকিন ২/৪৫) ।
ফল: বাংলাদেশ ১০১ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তাইজুল ইসলাম। সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজ ১-১ সমতা। প্লেয়ার্স অব দ্য সিরিজ: তাসকিন আহমেদ ও জেডন সিলস।