রশিদ খানের জন্মদিনের উপহারঃ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয় আফগানিস্তানের
রশিদ খানের জন্মদিন ২০ সেপ্টেম্বর। দিনটি তার জন্য ‘স্পেশাল’। ২৬ বছর বয়সী আফগান ক্রিকেট তারকা তার নৈপুণ্য দিয়ে দিনটিকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। দেশের জন্য স্মরণীয় জয় এনে দেন। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে আফগানিস্তান। শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড ১৭৭ রানে জিতেছে আফগানরা। আফগানিস্তানের ৩১১/৪ স্কোরের জবাবে প্রোটিয়াদের ইনিংস ১৩৪ রানে গুটিয়ে যায়। হ্যামস্ট্রিং সমস্যার পর দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৫ উইকেট নেন লেগ স্পিনার রশিদ খান। আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচে থাকা কোনো দলের বিপক্ষে এটি আফগানিস্তানের প্রথম সিরিজ জয়।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আফগানিস্তান ৫০ ওভারে ৩১১ রান করে। রহমানুল্লাহ গুরবাজ ১১০ বলে ১০ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ১০৫ রান করেন। সপ্তম সেঞ্চুরি করে আফগানিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন এই ওপেনার। এর আগে ৮৪ ইনিংসে ছয়টি সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ছিল মোহাম্মদ শাহজাদের দখলে। অর্ধেক অর্থাৎ ৪২টি ইনিংস খেলে তাকে ছাড়িয়ে যান গুরবাজ।
তিনে ফিফটি করেন রেহমত শাহ। পরে আজমতুল্লাহ ওমরজাই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫০ বলে ৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।
রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৩৪ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এটি এখন আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় জয়, ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তাদের ১৫৪ রানের জয়কেও ছাড়িয়ে গেছে। রশিদ ১৯ রানে পাঁচ উইকেট নেন। আফগান জাদুকর একদিনের ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে জন্মদিনে পাঁচ উইকেট নেন। ওয়ানডেতে এটি তার পঞ্চম পাঁচ উইকেট শিকার। কিন্তু এবার এসেছে ছয় বছর পর। তিনি ২০১৭ সালে দুইবার পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন, ২০১৮ সালে দুইবার। নাঙ্গেলিয়া খারোটকেও আলাদাভাবে উল্লেখ করা উচিত। 20 বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার ২৬ রানে চার উইকেট নেন। তিন ওয়ানডেতে দুইবার চার উইকেট পেয়েছেন এই প্রতিভাবান স্পিনার। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিয়ে রশিদ খান বলেন, “হ্যামস্ট্রিংয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু আমি মাঠে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এবং দলের জন্য নিজের সেরাটা দিতে চেয়েছিলাম। বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতার এমন সুযোগ অন্যরকম। , আমাকে মাঠে থাকতে হয়েছিল।
আফগানরা যখন টস জিতে ব্যাট করতে নামে তখন শারজাহতে তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি। কিন্তু এটা আফগানদের কাছে ৪৮ ডিগ্রী মত অনুভূত হয়েছে। সেই গরমে প্রোটিয়া বোলাররা তেমন কিছু করতে পারেননি। উদ্বোধনী জুটিতে ৮৮ রান করেন গুরবাজ ও রিয়াজ হাসান। ৪৫ বলে ২৯ রান করে আউট হন রিয়াজ। দ্বিতীয় উইকেটে ১০১ রান যোগ করেন গুরবাজ ও রেহমত। ভালো খেলতে থাকা গুরবাজ শতরানের কাছে এসে একটু থামেন। নব্বইয়ে ১৭ বল ধরেন, ৯৯ রানে সাত বল খেলেন। সেই চাপ কাটিয়ে তিন অঙ্কে পা রাখেন ঠিকই । কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৬৩ বলে ফিফটি করা রেহমত আর কোনো রান না করেই আউট হয়ে যান। তার স্থলাভিষিক্ত হন অভিষেক হওয়া লেগ-স্পিনার নাবাইওমজি পিটার যিনি প্রথম উইকেটের স্বাদ পান। তারপর ওমরজাইয়ের ঝড়। ৩২ বলে ফিফটি করেন তিনি। অপর প্রান্তে দ্রুত রান তুলতে পারেননি মোহাম্মদ নবী (১৯ বলে ১৩) ও রশিদ খান (১২ বলে ৬)। তবে ওমরজাইয়ের সৌজন্যে আফগানিস্তান শেষ ১০ ওভারে ৯৩ রান করে। ওমরজাই ৫০ বলে পাঁচটি চার ও ছয়টি ছক্কায় ৮৬ রান করে অপরাজিত থাকেন।
টেম্বা বাভুমা এবং টনি ডি জর্জি রান তাড়া করতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো সূচনা এনে দেন। দুজনে ৭৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। বাভুমা ওমরজাইয়ের বল পুল করার চেষ্টা করলে জুটি ভেঙে যায়। আগের ম্যাচে ইনজুরির কারণে খেলতে না পারা প্রোটিয়া অধিনায়ক ফিরেছেন ৩৮ রান করে। ৩১ রানে ডি জর্জিকে আউট করে শিকার শুরু করেন রশিদ। ১৭ রানে রিজা হেনড্রিকসকে বোল্ড করে প্রথম উইকেট পান খারোট। এরপর এই দুই স্পিনারের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে প্রোটিয়া ব্যাটিং। এইডেন মার্করামকে (২১) বোল্ড করে রশিদ তার পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন, যিনি চারে দীর্ঘ সময় ধরে এক প্রান্ত ধরে রেখেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ সাত ব্যাটসম্যানের কেউই পাঁচ রানের বেশি করতে পারেননি! ৬৩ রানে ১০ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের ম্যাচে তারা ৩৩.২ ওভারে ১০৬ রানে গুটিয়ে যায়। এবার তাদের ইনিংস শেষ হয়েছে ৩৪.২ ওভারে।
ম্যাচের পর আফগান অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শাহিদি বলেন, ‘আমরা এখানে আনন্দিত , আমাদের সারা জাতি আজ দেশে খুশি। সবাইকে অভিনন্দন।’ আর প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা মারিয়ামান বলেছেন, ‘আমরা মোটেও ভালো খেলতে পারিনি।