November 22, 2024
চীনে শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে আসছে নিষেধাজ্ঞা

চীনে শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে আসছে নিষেধাজ্ঞা

চীনে শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে আসছে নিষেধাজ্ঞা

চীনে শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে আসছে নিষেধাজ্ঞা

আধুনিক যুগের প্রযুক্তি। এর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক দিন দিন ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। বাদ যায় না শিশুরাও। কিন্তু প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকের সাথে নেতিবাচক দিকগুলি যথেষ্ট।আর ছোট শিশুরা এর নেতিবাচক প্রভাবের বেশি শিকার হয়। যেমন মোবাইল ফোন। এর ব্যবহারে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।মোবাইল ফোন যেখানে শিশুদের স্বাভাবিক প্রাণশক্তি কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে খেলার মাঠ ও স্বজনদের কাছ থেকেও কেড়ে নিচ্ছে শিশুদের।শিশুরা গৃহবন্দী ও প্রাণহীন হয়ে পড়ছে। ফলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তারা নানা রোগে ভুগছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তির প্রতি শিশু-কিশোরদের আসক্তি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মোবাইল ব্যবহারকারীর হার ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩০.৬৮ শতাংশ। এবং 18 বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩৭.১ শতাংশ।

শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তির প্রবণতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটি শুধুমাত্র একটি দেশের নির্দিষ্ট সমস্যা নয়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এই মহামারী। তবে শিশু ও কিশোরদের স্মার্টফোন আসক্তি কমাতে চীন কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশের অপ্রাপ্তবয়স্কদের (যাদের বয়স ১৮ বছরের কম) তাদের ফোনে দিনে দুই ঘণ্টার বেশি সময় না কাটাতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

চীনে ইন্টারনেট আসক্তি আকাশচুম্বী হয়েছে। তাই, দেশটি অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ‘ভালো নৈতিকতা’ এবং ‘সামাজিক মূল্যবোধ’ জাগ্রত করার জন্য স্মার্টফোনের ব্যবহার সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

দেশটির শীর্ষ ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক চীনের সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের  প্রকাশিত একটি প্রস্তাবে, সমস্ত মোবাইল ডিভাইস, অ্যাপ এবং অ্যাপ স্টোরগুলিতে একটি অন্তর্নির্মিত ‘মাইনর মোড’ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে যা দৈনিক স্ক্রিন টাইম সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ করবে। বয়সের উপর

বিধিনিষেধ, অনুমোদিত হলে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চালু করা বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলির সম্প্রসারণকে চিহ্নিত করবে। যেহেতু বেইজিংয়ের লক্ষ্য শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি কমানো, শি জিনপিংয়ের সরকার নৈতিকতা এবং সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধ শেখানোর  জন্যই এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চলেছে।

জনসাধারণ ২ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খসড়া বিধিনিষেধের বিষয়ে মন্তব্য করতে পারে৷ যদি এই বিধিনিষেধটি অনুমোদিত হয় তবে এটি বেইজিংয়ে শিশু এবং কিশোরদের মোবাইল স্ক্রিন টাইম হ্রাস করার লক্ষ্যে সরকার দীর্ঘদিন ধরে যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে তা বাস্তবায়ন করবে৷ এছাড়াও, ইন্টারনেটে ‘অবাঞ্ছিত তথ্য’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে পৌঁছাবে না।

প্রস্তাবিত ‘মাইনর মুড’ চালু হলে নির্দিষ্ট সময়ের পরে অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। ১৮ বছরের কম বয়সী যে কেউ রাত ১০  টা থেকে সকাল ৬ টার মধ্যে মোবাইল ফোনে কোনো অ্যাপ  ব্যবহার করতে পারবে না।

খসড়া নিয়ম অনুযায়ী, ৮ বছর বয়সী শিশু সর্বোচ্চ ৪০ মিনিট, ৮-১৬ বছর বয়সী শিশু ১ ঘণ্টা এবং ১৬-১৮ বছর বয়সীরা ২ ঘণ্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে। মাইনর মুড অন থাকলে ৩০ মিনিট পরপর বিশ্রামের একটি রিমাইন্ডারও আসবে।

তবে অভিভাবকরা চাইলে সময়সীমা পরিবর্তন করতে পারেন। এ ছাড়া শিক্ষা ও জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে এই সময়সীমা প্রযোজ্য হবে না।

খসড়াটিতে আরও বলা হয়েছে যে মোবাইল ফোন ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের এমন সামগ্রী তৈরি করা উচিত যা ‘মূল সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়’ এবং ‘চীনা সামাজিক চেতনা তৈরি করে’। এর সাথে বয়স ভিত্তিক বিষয়বস্তুর বিধানও উল্লেখ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ‘ইন্টারনেট আসক্তি’ একটি প্রধান সামাজিক উদ্বেগ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যা প্রায়শই বৈজ্ঞানিকভাবে সন্দেহজনক এবংএকটি বিপজ্জনক শিল্পের জন্ম দেয়।

এই পদক্ষেপের ফলে চীনা অভিভাবকরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। এটা শিশুদের চোখের জন্য ভালো হবে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। তারা সুস্থ ও ইতিবাচক হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের মতে, চীনে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেস রয়েছে, যেখানে দেশের ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের মধ্যে প্রায় ১.০৭  বিলিয়ন ইন্টারনেট অ্যাক্সেস রয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত, দেশে প্রতি পাঁচজন ব্যবহারকারীর মধ্যে একজন ছিল ১৯ বা তার কম বয়সী।

অন্যদিকে এ সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোতে। নতুন নিয়ম ঘোষণার পর বুধবার দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ইন্টারনেট কোম্পানির হংকং-তালিকাভুক্ত শেয়ারের দাম দ্রুত কমেছে।

বিশেষ করে টেনসেন্ট, ওয়েচ্যাট, ভিডিও-স্ট্রিমিং অ্যাপ বিলিবিলি, কোয়াইশো, সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েইবো-র মতো কোম্পানিগুলো ৩ থেকে ৭ শতাংশ শেয়ার হারিয়েছে।

আরও পড়ুন

চীনা তরুণ প্রজন্ম বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে

চীনা কর্তৃচীনা তরুণ প্রজন্ম বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেপক্ষ সম্প্রতি দেশটির তরুণদের মধ্যে ইন্টারনেট আসক্তির হার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।গবেষকরা বলছেন, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার অনিদ্রার মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া এটি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি স্মৃতিশক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে, পরিষ্কারভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা হারাতে পারে। এমনকি নতুন কিছু শেখাও দক্ষতা কমাতে পারে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X