November 24, 2024
চীনা তরুণ প্রজন্ম বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে

চীনা তরুণ প্রজন্ম বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে

চীনা তরুণ প্রজন্ম বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে

চীনা তরুণ প্রজন্ম বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই ব্যবস্থা খুবই অপরিচিত। কারণ বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী বিয়ে জীবন পরিচালনার অন্যতম শর্ত। পশ্চিমা বিশ্বে বিয়ে সবসময়ই পরবর্তী ধাপ। তারা নানা দিক চিন্তা করে, জীবনসঙ্গী যাচাই করে তারপর বিয়ে করে। তবে এশীয় সমাজে বিবাহ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু এশিয়ার এই সমাজে এখন বিয়ে না করার আগ্রহ দেখা দিয়েছে। জাপান, চীন, থাইল্যান্ড, ভারত, ইরান, সৌদি আরব ও বাংলাদেশও বিয়ের প্রতি অনীহা দেখাচ্ছে । বিশেষ করে  চীনা তরুণ প্রজন্ম বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে

বিশেষ করে চীনের তরুণ প্রজন্ম বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। অল্পবয়সী নারীরা স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে বেশি উৎসাহী। তারা বিয়েকে অনেকভাবে বোঝা মনে করে এবং অবিবাহিত থাকতে পছন্দ করে। তারা বিয়েকে বাড়তি দায়িত্ব মনে করে। এমনকি স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার ভয়ে তারা আগ্রহ হারাচ্ছে। একদিকে যেমন বিয়ের হার কমছে, অন্যদিকে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের হার।

চীনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত মাসে জানিয়েছে যে দেশটিতে নতুন বিয়ের সংখ্যা ৩৭ বছরের সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।

তারা বিয়ে করলে সরকারি সুবিধার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, বেকারত্ব এবং আর্থিক অনিশ্চয়তা তরুণ চীনাদের বিয়ে করতে এবং পরিবার শুরু করতে বাধা দেয়।

জিনহি হু চীনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ শাংজির বাসিন্দা। ২৯ বছর বয়সী এই স্কুল শিক্ষকের কাছে বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

যদিও তার বাবা-মা তাকে এই বিষয়ে চাপ দিচ্ছেন এবং গত তিন বছরে তাকে কমপক্ষে ২০ টি ‘ব্লাইন্ড ডেটে’ পাঠিয়েছেন, তবুও জিনহির জীবনে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। তিনি বিয়ে করতে আগ্রহী নন।

তিনি বলেন, “বিয়ে না করা স্বাধীনতার বিষয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবাইকে বিয়ে করার দরকার নেই।

জিন্হি একা নন। চীনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে দেশটিতে নতুন বিয়ের সংখ্যা  গত আট বছর ধরে কমছে। গত বছর দেশে মাত্র ৬৮ লাখ ত্রিশ হাজার দম্পতি বিয়ে করেছেন।

বিশেষ করে গত শতাব্দীর নব্বই দশকে এবং চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকে জন্ম নেওয়া নারীদের মধ্যে বিয়ের প্রতি আগ্রহ বেশ কম। চীনের আদমশুমারি অনুসারে, ২০২০ সালে বিয়ের গড় বয়স ছিল প্রায় ২৯ , যা ২০১০ সালের তুলনায় চার বছর বেশি।

কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ইয়ে লিউ বিশ্বাস করেন যে চীনে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য এখনও ব্যাপক। একজন মহিলাকে নিয়োগের ক্ষেত্রে, তার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এবং তার মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রয়োজন হবে কিনা তা বিবেচনা করা হয়।

ফলস্বরূপ, অনেক নারী ক্যারিয়ার এবং পারিবারিক জীবন বেছে নিতে বাধ্য হন, তিনি বিশ্বাস করেন।

যখন নারীরা শিক্ষায় বেশি সময় ব্যয় করে, তারা স্বাভাবিকভাবেই বিবাহ এবং মাতৃত্বে প্রবেশের জন্য পরবর্তী বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করে,

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ১৯৮০-এর দশকে চীনে জন্মহার ছিল ২.৬ শতাংশ, ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১.১৫ শতাংশে। গত ছয় দশকে দেশটিতে গত বছর থেকে জনসংখ্যা কমতে শুরু করেছে। তবে ২০০৩ সালকে এই হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে কারণ ওই বছর ভয়াবহ মহামারীতে এশিয়ার দেশটিতে জন্মের চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে।

সামাজিক মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিচ্ছেদের তিক্ত অভিজ্ঞতা কিংবা প্রতিদিনের বিবাহবিচ্ছেদের খবর, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, অবিশ্বাস, এমনকি খুন-আত্মহত্যার মতো ঘটনা তরুণদের মধ্যে ভীতি তৈরি করে। ব্যক্তির মধ্যে আচরণগত অস্থিরতা বা ক্ষত তৈরি হয়, যা তাকে নেতিবাচকতার দিকে ধাবিত করে।

কিন্তু কারো জীবনে খারাপ অভিজ্ঞতা সবার জন্য এক নয়। একজনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আরেকজনের জীবনে নাও ঘটতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন সমাজে অনেক সুখী বিবাহিত জীবন রয়েছে। কিন্তু তরুণ সমাজের একাংশ মনে করছেন, আসলে সবাই স্বাধীন থাকতে ভালোবাসে।

শুধু চীনেই বিয়ে করতে অনীহা? বিশ্বের অনেক দেশেই বিয়েকে কেন্দ্র করে পারিবারিক চাপ ও দায়িত্ব সামলাতে তরুণ-তরুণীরা অনীহা প্রকাশ করছে। এর পাশাপাশি একে অপরকে মানিয়ে নেওয়া ও বোঝার ধৈর্যও কমে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিয়ের আগ্রহ কমে যাচ্ছে এবং বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই কেন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে?

যদিও  বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে রাষ্ট্র মানুষকে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে রাষ্ট্র নাগরিকের দায়িত্ব নেয়, চিকিৎসা সুবিধা দেয়, পরিচর্যাকারীর ব্যবস্থা করে। কিন্তু আমাদের মতো দেশে তা নেই। এখানে ‘পরিবার’ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা মানুষের পাশে দাঁড়ায়, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু নানা কারণে এই পারিবারিক ঐতিহ্য চীনসহ  অনেক উন্নত দেশেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। এটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ‘ভালোবাসা’ এবং ‘বিশ্বাস’। ভালোবাসার মাধ্যমেই মানুষ এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X