March 25, 2025
কম দামি কাপড়ে যাকাত প্রদান? লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়!

কম দামি কাপড়ে যাকাত প্রদান? লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়!

কম দামি কাপড়ে যাকাত প্রদান? লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়!

কম দামি কাপড়ে যাকাত প্রদান? লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়!

‘কম দামি বস্তু বা সস্তা কাপড়ে যাকাত প্রদানের পূর্বে বিবেককে প্রশ্ন করবেন আসলে আপনার যাকাত আদায় হচ্ছে কিনা? কারণ যাকাততো গরিবের প্রতি ধনীর অনুগ্রহ নয়। বরং ধনীদের যাকাতের সম্পত্তিতে-সম্পদে আল্লাহ প্রদত্ত গরিবের আবশ্যকীয় অধিকার রয়েছে। হ্যাঁ, বর্তমানে আমাদের সমাজে লোক দেখানো প্রবণতায় পিচ্ছিল জনপ্রিয়তার উদ্দেশ্যে কোনোমতে কম দামি কাপড়ে যাকাত প্রদানের প্রবণতা সুস্পষ্ট। যা ধনীদের প্রতি গরিবদের ঘৃণা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া আর কিছুই হয় না। আর গরিব থেকে যায় অবহেলিত। ধনীদের সম্পত্তি পবিত্রতো হয়ইনা বরং আরো বেশি নোংরাই  থেকে যায়’।

বিশেষ করে, লুঙ্গি এবং শাড়ি জাকাত হিসেবে বেশি জনপ্রিয়। দেখা যাচ্ছে যে, সমাজের একাংশ বাজারে গিয়ে সবচেয়ে সস্তা লুঙ্গি এবং শাড়ি জাকাতের পোশাক হিসেবে কিনে যাকাত দিচ্ছে। তাদের জমানো অর্থ পবিত্র  করার সময়ও তারা দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সাথে একরকম প্রতারণা করছে। যা ইসলাম কোনওভাবেই সমর্থন করে না।

রমজান মাসে বেশিরভাগ মানুষ জাকাত দেয়। কিছু শপিং সেন্টারে বড় বড় সাইনবোর্ডে লেখা দেখা যায়, ‘এখানে যাকাতের কাপড় পাওয়া যায়।’ সমাজের একাংশ কম দামে এই নিম্নমানের পোশাক কিনছে। অনেকেই বাজারে এসব পোশাক খুঁজছেন, বিশেষ করে সস্তা দামে যাকাত দেওয়ার জন্য। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে মানুষের ধর্মীয় এবং নৈতিক মূল্যবোধের কতটা অবনতি হয়েছে।

আল্লাহ বলেন,”তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস হতে আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত”(সূরা আলে ইমরান: ৯২)।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, কিছু লোকের যাকাত কেবল লোক দেখানোর জন্য। তা হয়ে থাকে নির্বাচনে জেতা বা ফালতু জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য।  তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ইবাদত পালন করছে না। আজকাল এই দলের লোকের সংখ্যা বাড়ছে। যা আমাদের জন্য সত্যিই দুঃখজনক।

যাকাত সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ব্যয় কর উত্তম বস্ত্ত, তোমরা যা অর্জন করেছ এবং আমি যমীন থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে এবং নিকৃষ্ট বস্ত্তর ইচ্ছা করো না যে, তা থেকে তোমরা ব্যয় করবে। অথচ চোখ বন্ধ করা ছাড়া যা তোমরা গ্রহণ করো না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত’ (সূরা বাকারা: ২৬৭)।

কিন্তু আমাদের সমাজের অনেকের উপর যাকাত ফরজ হলেও, তারা বিভিন্ন অজুহাতে তা দেয় না। ফলস্বরূপ, একদিকে দরিদ্র ও অসহায়রা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, অন্যদিকে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অসন্তুষ্ট হন। এবং যারা দান করে তাদের এই কার্যকলাপের ফলে তারা যাকাত দেওয়ার নামে নিজেদের প্রচার করছে। প্রকৃতপক্ষে, যাকাত ইসলামের একটি মৌলিক বিষয়। যার উপর যাকাত ফরজ, সে যদি তা না দেয় তবে সে গুনাহগার হবে। যাকাতের  মাধ্যমে মানুষ কেবল তার সম্পদকে পবিত্র করবে না বরং আর্থিক ও নৈতিক শক্তিও অর্জন করবে।

যে সম্পদের উপর যাকাত প্রয়োজন তা হলো:

১. নগদ টাকা, ব্যাংক ব্যালেন্স, বন্ড এবং অন্যান্য আর্থিক উপকরণ

২. সোনা ও রূপা; অলংকার, যেকোনো ধরণের বার; এমনকি যদি সেগুলো দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্যও হয়।

৩. ব্যবসায়িক সম্পদ

৪. পশুসম্পদ

৫. কৃষিজাত পণ্য এবং

৬. খনিজ সম্পদ।

সাড়ে সাত ভরি বা সাড়ে সাত তোলা মূল্যের সোনা, বাহান্ন তোলা মূল্যের রূপা, অথবা এগুলো দিয়ে তৈরি অলংকারে যাকাত ফরজ। এবং  যদি এই দুটি বা উভয়ের সমান মূল্যের অন্য কোন সম্পদও থাকে, তাহলে তার মূলধনেরও আড়াই শতাংশ হারে যাকাত প্রয়োজন।

যাকাত দেওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। বছরে একবার দিতে হয়। তবে আমাদের দেশে প্রতি বছর রমজান মাসে  যাকাত দেওয়ার রীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ধনী ব্যক্তিরা কেউ কেউ নগদ অর্থ দান করেন আবার কেউ কেউ দরিদ্রদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করেন। আমাদের দেশে যাকাত হিসেবে পোশাককে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। পোশাকের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যাকাত প্রদানকারীদের বেশিরভাগই যাকাত প্রদানের জন্য সবচেয়ে সস্তা পোশাক কেনেন। সাধারণত, লোকেরা যে পোশাক পরেন তার চেয়ে কম দামে যাকাত পোশাক কেনা হয়।

রাজধানী ঢাকা সহ দেশের সকল বাজারে যাকাত পোশাকের জন্য আলাদা আলাদা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকে, “এখানে যাকাতের  পোশাক পাওয়া যায়।” শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, পাঞ্জাবি, নামাজের বিছানা, পুরুষ, মহিলাদের থ্রি-পিস এবং আরও অনেক ধরণের পোশাক যাকাত পোশাক হিসেবে দেওয়া হয়। আমাদের দেশের মেয়েরা যে শাড়ি পরেন তা সাধারণত ১২-১৩  হাত লম্বা হয়। আর যাকাতের জন্য যে শাড়িগুলো দেওয়া হয় সেগুলো ১০ হাত বা তার কম। এই নিম্নমানের পোশাক ধোয়ার পর এগুলো আরও খাটো হয়ে যায়। মাঝে মাঝে রঙ বদলে যায়। কেউ কেউ বিভিন্ন কাজ করার জন্য এই পোশাক পরেন, আবার কেউ কেউ রাস্তায় ভিক্ষা করেন। এই আঁটসাঁট কাপড় কি তাদেরআব্রু ইজ্জ্ত রক্ষা করতে পারে? সকল যাকাতদাতার ভাবা উচিত যে, সওয়াবের আশায় একজন মহিলাকে দান করা পোশাক কতটা কাজে লাগবে?

ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় যে, বেশিরভাগ যাকাত পোশাক ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যারা যাকাতের জন্য নিম্নমানের পোশাক কিনছেন তাদের ভাবা উচিত, আপনি কি আপনার পরিবারের কাউকে এই কাপড় উপহার দিতে পারেন?

যদি দেখেন, দেখা যায় যে, নিম্নমানের পোশাকের তুলনায় ভালো মানের পোশাকের দামে খুব বেশি পার্থক্য নেই। লুঙ্গি, পাঞ্জাবি এবং অন্যান্য পোশাকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একজন দরিদ্র ব্যক্তি ঈদ উপলক্ষে পোশাকের টুকরো পাওয়ার আশায় ধনীদের কাছে যান। সেদিন তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লম্বা লাইনে দাঁড়ায়, আর যখন তারা একটা কাপড় পায়, কেউ কেউ হয়তো তা নাও পেতে পারে। কত মানুষ পদদলিত হয়ে অন্য মারাও যায় ।  গত কয়েক বছরে  যাকাতের পোশাক পেতে গিয়ে শিশুসহ ৩০০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন।

যদি কাপড় ভালো মানের না হয়, তাহলে এই জাঁকজমকপূর্ণ দানের কী লাভ? আসুন আমরা সবাই ভালো মানের পোশাকে যাকাত দেই; নিম্নমানের নয়। কিন্তু সম্প্রতি, যাকাতের  নাম একরকম দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। যা ইসলাম কোনওভাবেই সমর্থন করে না।

তাই দেখা যাচ্ছে যে কিছু মানুষের যাকাত কেবল লোক দেখানোর জন্য। তারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য এই ইবাদত করছে না। বর্তমানে এই শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যা আমাদের জন্য সত্যিই দুঃখজনক।

পরিশেষ

আর দানকারীদের এই কর্মকাণ্ডের ফলে তারা যাকাতের নামে নিজেদের প্রচার করছে। আসলে, যাকাত ইসলামের একটি মৌলিক বিষয়। যার উপর যাকাত ফরজ, যদি সে যাকাত না দেয়, তাহলে সে গুনাহগার হবে। যাকাতের মাধ্যমে, তার সম্পদ পবিত্র করার পাশাপাশি, সে আর্থিক ও নৈতিক সক্ষমতাও অর্জন করবে। কিন্তু এই কম দামি যাকাত দিয়ে আপনি আপনার সম্পত্তি পবিত্র করতে পারবেন না। বরং উল্টা গোনাগার হবেন।  এবং সর্বজ্ঞ সৃষ্টিকর্তা আপনাদের ছাড় দেবেন না।  তাই সতর্ক হোন যুক্তিসম্মত সামাজিক উপকারের ভিত্তিতে যেসব জিনিস দিয়ে যাকাত দেওয়া প্রয়োজন তাদের দিতে থাকুন। তাহলে সমাজ অভাব মুক্ত হবে এবং সৃষ্টিকর্তাও আপনাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন।  আল্লাহ বুঝার তৌফিক দান করুক।  আমিন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X