চার বছর চেষ্টার পর আকাশে উড়লো মানিকগঞ্জের জুলহাস মোল্লার নিজের তৈরি বিমান
অদম্য চেষ্টার পরেই ১৯০৩ সালে আকাশে বিমান উড়িয়েছিলেন মার্কিন প্রকৌশলী অরভিল রাইট,উইলবার রাইট ভ্রাতৃদ্বয়। তেমনি ভাবে শুধুমাত্র এসএসসি পাস করা মানিকগঞ্জের জুলহাস মোল্লা তার ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং বারবার হেরে যাওয়ার পরও না থেমে যেয়ে চার বছরের ব্যবধানে নিজস্ব শক্তিতে আর প্রযুক্তিতে বিমান তৈরি করে বাংলাদেশে মানিকগঞ্জের আকাশের যমুনার পারে বিমানটি উড্ডীয়ন করে দেশের মানুষকে চমৎকৃত করেছেন।
মানিকগঞ্জের তরুণ উদ্ভাবক জুলহাস মোল্লা নিজের বিমান নিয়ে আকাশে উড়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন। তার সাফল্য দেখতে ভিড় করছেন মানুষ। জুলহাস মোল্লার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায়। তবে নদী ভাঙনের কারণে তার পরিবার বর্তমানে শিবালয় উপজেলার শৈতঘর তেওতা এলাকায় বসবাস করছে।
২৮ বছর বয়সী এই যুবকের তৈরি বিমানটি কিছুদিন আগে যমুনার চরের ১৫ থেকে ২০ ফুট উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। অবশেষে, আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জুলহাস আনুষ্ঠানিকভাবে আকাশে বিমানটি উড়িয়েছেন।
এসএসসি পাস জুলহাস মোল্লা ঢাকায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। তার শখ ছিল ‘আরসি প্লেন’ তৈরি করা। তিনি বলেন, ‘আমি চার বছর ধরে এই বিমানটি তৈরি করার চেষ্টা করছি, এবং বারবার ব্যর্থ হয়েছি। অবশেষে, নিখুঁতভাবে বানিয়ে বিমানটি উড়িয়ে সফল হয়েছি।’
জুলহাস মোল্লা যেখানেই প্রয়োজন সেখানে অ্যালুমিনিয়াম, এসএস পাইপ এবং লোহার মিশ্রণ ব্যবহার করে বিমানটি তৈরি করেছেন। তিনি বিমানটিতে ইঞ্জিন হিসেবে ১৩,০০০ টাকা মূল্যের একটি সাত-অশ্বশক্তির ইঞ্জিন ব্যবহার করেছেন।
জুলহাস বলেন, চেষ্টা করলে তার বিমানটিকে মেঘের উপরে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব। তবে, এটি এখন একটি প্রশিক্ষণ বিমান, যা ঝুঁকিপূর্ণ। জুলহাস বলেন, ‘এজন্যই আমি ৫০ ফুট উচ্চতার উপরে উড়ে যাইনি। আমি আশা করি সরকার এই বিমানটিকে সরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে সফল করতে আমাকে সাহায্য করবে। এবং সরকার যেন বিমানের উন্নয়ন এবং উড়ানে কোনও বাধা না দেয়।’
তার বাবা জলিল মোল্লা বলেন, জুলহাস ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্লাস্টিকের জিনিস কেটে কিছু তৈরি করার চেষ্টা করতেন। ‘জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন, একদিন তুমি দেখতে পাবে আমি কী তৈরি করেছি। আজ তিনি আমাকে এটি কীভাবে করতে হয় তা দেখিয়েছেন।’
জুলহাসের বিমান উড্ডয়ন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, জুলহাসের গবেষণা কাজে সরকার সহযোগিতা করবে। প্রাথমিকভাবে তাকে কিছু আর্থিক সহায়তা দিয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে।
জুলহাস মোল্লার এই আবিষ্কার স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন যে, সঠিক সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় কিছু করতে পারবেন।
যমুনার চরে বিমান উড়তে দেখতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, অদক্ষ ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও জুলহাস বিমান তৈরি করে ইতিহাস তৈরি করেছেন। জুলহাস মানিকগঞ্জের গর্ব। সরকারের উচিত তাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা।
বিমানটি তৈরি করতে তিন বছর গবেষণা এবং এক বছর সময় লেগেছে। মোট প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বিমানটির কাঠামো অ্যালুমিনিয়াম এবং লোহা দিয়ে তৈরি। তিনি একটি জল পাম্প থেকে তৈরি ‘সাত হর্সপাওয়ার’ ইঞ্জিন ব্যবহার করেছেন এতে।
জুলহাস বলেন, এই বিমানটি মূলত পরীক্ষামূলক প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে । এটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হয়নি। তবে, যদি সরকারি তহবিল এবং পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়, তাহলে এটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা যেতে পারে। বিমানটি মাটি থেকে ৫০ ফুট উপরে উড়তে পারে।