‘ভারতে থাকলেও হাসিনার বিচার হবে’ দিল্লি প্রত্যর্পণ না করলে নেয়া হবে কঠিন পদক্ষেপ: ড. মুহাম্মদ ইউনূস
কূখ্যাত,খুনি পলাতক হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অনেক অনেক অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। প্রফেসর ইউনূস বলেছেন যে, তাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।
প্রয়োজনে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিচার ভারতে থাকাকালীনই শুরু করা হবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তাকে আদালতের মুখোমুখি হতেই হবে। কিন্তু হাসিনা বর্তমানে ভারতে আছেন। তাকে প্রত্যর্পণের জন্য ইতিমধ্যেই ভারত সরকারকে একটি ‘আনুষ্ঠানিক চিঠি’ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নয়াদিল্লি সেই চিঠির কোনও জবাব দেয়নি।
ড. ইউনূস বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, হাসিনার বিষয়ে ঢাকার অবস্থান কী? ড. ইউনূস বলেন, “বিচার শুরু হবে। শুধু তার (হাসিনা) বিরুদ্ধে নয়। “তার সাথে যুক্ত অন্য সকলকে, তার পরিবারের সদস্যদের, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের, সকলকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।” ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে একাধিক অপরাধের জন্য হাসিনার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তবে তার শারীরিক উপস্থিতির কারণে বিচার বিলম্বিত হবে না।
ড. ইউনূস বলেন, “হাসিনা বাংলাদেশে থাকুক বা না থাকুক, তিনি ভারতে থাকলেও আমরা বিচার শুরু করতে পারি।” হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার আমলে অনেক মানুষকে গুম করে দিয়েছেন। তিনি তাদের বিচার ছাড়াই দিনের পর দিন আটকে রাখতেন। এমনকি হাসিনা বন্দীদেরকে হত্যাও করে। হঠাৎ করেই তারা নিখোঁজ হয়ে যেত। এবং তাদের খুঁজে পাওয়া যেত না। হাসিনার সরকারের পতনের পর, ‘আয়নাঘর’ নামে এমন একটি গোপন আটক কেন্দ্রের খবর প্রকাশ্যে আসে। সেখান থেকে অনেক বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বন্দীরা নিজেই জানিয়েছেন যে, তারা সেখানে কী ধরণের নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছিল।
ড. ইউনূস কয়েকদিন আগে এই আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তার ভাষায়, “এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। এই অপরাধে জড়িত লোকের সংখ্যা বোঝা কঠিন।” পূর্ববর্তী সরকারের সকলেই এই অপরাধে জড়িত ছিল। আমাদের দেখতে হবে কে ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করছিল, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশে কাদের অপরাধ করতে বাধ্য করা হচ্ছিল।”
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা বা সংরক্ষণ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হয়। এর চাপে কূখ্যাত খুনি হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে পালিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তারপর থেকে তিনি ভারতে রয়েছেন। অভিযোগ, হাসিনা সরকার আন্দোলন দমন করার জন্য অনেক মানুষকে কারাবন্দী ও হত্যা করেছে। ড. ইউনূসের সরকার এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু করতে চায়।
হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন নয়: সরজিস
বিএনপি সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। চাপের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ড. ইউনূস ও বলেছেন যে, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। তবে নতুন দল, জাতীয় নাগরিক দল (এনসিপি) সতর্ক করে দিয়েছে যে, শেখ হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত কোনও নির্বাচন হবে না।
দলের অন্যতম প্রধান সংগঠক সরজিস আলম মঙ্গলবার বলেছেন, ‘হাসিনার ফাঁসির আগে নির্বাচনের কথা কেউ যেন মুখেও না নেয়। যত দিন না পর্যন্ত খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে দেখছি, তত দিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।’ এদিন সকালে ‘জুলাই আন্দোলন’-এ মৃতদের কবরস্থানে গিয়েছিলেন সারজিস। সেখানে তিনি বলেন, ‘খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে, সে বিচারের মঞ্চে দাঁড়াবে, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবে।’