আন্দোলনে পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ দেন রাজনৈতিক নেতারা:হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও বিক্ষোভের সময় পুলিশের বর্বরতা সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে দেখা গেছে। আগস্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একজন কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলছেন,
‘গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা…বাকিডি যায় না স্যার।’
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের বর্বরতার সাথে সরাসরি রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দল জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। তারা বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পর এটি নিশ্চিত করেছে। সোমবার (২৭ জানুয়ারী) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি এ কথা জানিয়েছে।
এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে যে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা অফিসারদের চেয়ে রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা বেশি নির্ধারিত হয়েছিল। ৫০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে সেই সময় পুলিশের বিবৃতিতে অপরাধের নির্দেশাবলী এবং ধরণ প্রকাশ করা হয়েছে।
‘আফটার দ্য মনসুন রেভলিউশন: এ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে অতীতে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরা হয়েছে।
বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এইচআরডব্লিউকে জানিয়েছেন যে, জুলাই-আগস্ট বিদ্রোহের সময় অতিরিক্ত বল প্রয়োগের নির্দেশ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে এসেছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে, অস্থিরতার সময় পুলিশের ভূমিকা মাঠের কর্মকর্তাদের চেয়ে রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা বেশি নির্ধারিত হয়েছিল।”
আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা এইচআরডব্লিউকে বলেন যে, তিনি সরাসরি সিসিটিভি ফুটেজে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিক্ষোভকারীদের গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার সরাসরি নির্দেশ দেখেছেন, যেন “তারা ভিডিও গেমে কাউকে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছে।” বিক্ষোভ চলাকালীন ১৮ বছর বয়সী আমির হোসেনকে পুলিশ ধরে ফেলে। তারা তাকে একটি ভবন থেকে লাফ দিতে বলে। “পুলিশ যখন আমার দিকে এগিয়ে আসছিল, তখন ধরা পড়ার ভয়ে আমি একটি নির্মাণাধীন ভবনে উঠে পড়ি। যখন আমি চতুর্থ তলায় পৌঁছাই, পুলিশ আমাকে লাফ দিতে বলে। আমি জানতাম যে, আমি যদি এখান থেকে পড়ে যাই, তাহলে আমি মারা যাব। তাই আমি চতুর্থ তলায় একটি রডের সাথে ঝুলতে চেষ্টা করি। একজন পুলিশ অফিসার আমার দিকে ছয় রাউন্ড গুলি চালায়। ততক্ষণে আমি তৃতীয় তলা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলাম। অনেক পুলিশ আমার পায়ে আঘাত করছিল,” আমির হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন। পরে তারা চলে যায়। আমি প্রচণ্ড ব্যথায় ভুগছিলাম। আমাকে তৃতীয় তলা থেকে লাফ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তারপর আমার একটি পা ভেঙে যায়। আমি এখনও বুঝতে পারছি না কেন তারা আমাকে তাড়া করে গুলি করেছে!’
বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসার গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেছেন। একজন বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের কঠোর হতে এবং ‘অরাজকতা সৃষ্টিকারী কোনও অপরাধীকে’ রেহাই না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা স্পষ্টভাবে ‘গুলি করো’ শব্দটি ব্যবহার করেননি, তবে তাদের নির্দেশাবলী স্পষ্ট ছিল: সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করুন, যা প্রয়োজন মনে করেন তা করুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিন।’
তিনি এইচআরডব্লিউকে বলেন যে, বিক্ষোভের সময় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানকে এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।