ভোটার আইডি এর আগে পেলাম ছেলের ডেথ সার্টিফিকেট: শহীদ আহনাফের মা
জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে সারা দেশে অনেক তরুণ ও নবীন প্রাণ হারিয়েছে।অসভ্য শেখ হাসিনার সরকার আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন করেছিল। তারা বেছে নিয়েছিল মানুষ হত্যার নৃশংস পদ্ধতি । এই আন্দোলনে শহীদ আহনাফের কথা বলতে বলতে তার মা এবং অন্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অভ্যুত্থানের প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও, শহীদদের আত্মীয়দের চোখ এখনও অশ্রুতে ভিজে আছে। তাদের শোক ও যন্ত্রণা এখনও কমেনি। সোমবার বিকেলে, মা তার ছেলের কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন, যা অন্যান্য বক্তা এবং শ্রোতাদেরও কাঁদিয়ে তোলে।
সোমবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় আর্ট গ্যালারি মিলনায়তনে জুলাই বিদ্রোহের উপর একটি বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
‘আমার ছেলের বয়স ছিল ১৭ বছর। দুই মাস পর ও আঠারোতে পা দিত। নগদে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আমার ভোটার আইডি কার্ড চাইত। না দেওয়ায় রাগ করে বলত, দুই মাস পরে আমার ১৮ হবে। আমিও ভোটার আইডি পাব। কিন্তু ভোটার আইডি হওয়ার আগেই ওর ডেথ সার্টিফিকেট হয়ে গেল!’
জুলাই আন্দোলনে শহীদ শফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফের মা জারতাজ পারভীন তার ছেলেকে এভাবেই স্মরণ করেছিলেন।
সোমবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় শিল্পকলা মিলনায়তনে জুলাই অভ্যুত্থানের উপর আয়োজিত এক বিশেষ প্রদর্শনী এবং আলোচনায় তিনি সন্তানের শৈশবের স্মৃতি ভাগ করে নেন। একই সাথে তিনি নতুন বাংলাদেশের প্রতি তার আশার কথাও জানান। জারতাজ পারভীন বলেন, ‘স্বৈরাচার যে–ই আসুক, তার যেন পতন হয়।’
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ নাঈমা সুলতানার মা আইনুন নাহার বলেন, ‘নাঈমাকে হারিয়ে ওর বড় বোন আর ছোট ভাই এখনো ট্রমাতে আছে। ছোট ছেলেটা এখনো বলে, মা, গুলি আসে, গুলি। আমরা এখনো ঘুমাতে পারি না!’
আলোচনা সভায় মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর জমজ ভাই মীর মাহমুদুর রহমান (দীপ্তি), আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী, ছয় বছর বয়সী জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন এবং মাহমুদুর রহমান সৈকতের বড় বোন সাবরিনা আফরোজ সেবান্তী আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করেন।
শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন বলেন,‘আমার জাবির মাত্র ছয় বছরের শিশু। ওর তো রক্ত দেওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু ওকে প্রাণ দিতে হলো।’
আলোচনা সভায় অতিথি ছিলেন জাতীয় শ্রম কমিশনের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। সামিনা লুৎফা বলেন, ‘আমরা যেন মনে রাখি, আমরা কী চেয়েছিলাম। আমরা কথা বলার সুযোগ চেয়েছিলাম। আমরা যেন আর কোনো ব্যবস্থা তৈরি না করি, যাতে আমাদের সন্তানকে প্রাণ দিতে হয়। আমরা এমন কোনো ব্যবস্থা চাই না, যেটা নতুন করে স্বৈরশাসক তৈরি করে।’
অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, ‘যে বাংলাদেশে আজ দাঁড়িয়ে আছি, সেটা আপনাদের সন্তানদের অবদান। আহত হাজার হাজার ছাত্রদের আর্তনাদ আমাকে ঘুমাতে দেয় না। আমি প্রতিটা হত্যার বিচার চাই। যতবার আমাদের কাছ থেকে সার্বভৌমত্ব বাক–স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া চেষ্টা হবে, ততবার আমরা দাঁড়িয়ে যাব।’
সাংবাদিক সুমনা শারমিন আলোচনা সঞ্চালনা করেন। জুলাই অভ্যুত্থানের উপর প্রদর্শনীতে শহীদদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, রক্তমাখা পরিচয়পত্র, গিটার এবং শহীদদের আঁকা ছবি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে প্রথম আলোর আলোকচিত্রীদের তোলা জুলাই আন্দোলনের দুর্ভাগ্যজনক মুহূর্তের নির্বাচিত ছবি, প্রথম আলোর সংবাদপত্র এবং অনলাইনে আলোচিত সংবাদ এবং অনুসন্ধানী ভিডিও প্রতিবেদন। প্রদর্শনীটি ২৪ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল। এটি ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।