বঙ্গোপসাগরে সংরক্ষিত এলাকা “সোয়াচ অব নো–গ্রাউন্ড” বাড়ানো হচ্ছে ৬ গুন
সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড:
“সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড বা মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া (SNPMA) বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের একটি সংরক্ষিত এলাকা। এটি ২৭ অক্টোবর ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ১৭৩,৮০০ হেক্টর (৪২৯,০০০ একর) এলাকা জুড়ে রয়েছে। সে হিসেবে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড হল বঙ্গোপসাগরে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ গভীর পরিখা। এটি সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে ৩০কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই পরিখার গভীরতম রেকর্ডকৃত গভীরতা প্রায় ১,৩৪০ মিটার এবং গড় গভীরতা প্রায় ১,২০০ মিটার। এখানকার নিমজ্জিত গিরিখাতটি বেঙ্গল ডেল্টার অংশ, যা বিশ্বের বৃহত্তম নিমজ্জিত গহীন গিরিখাত। সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড হল একটি পরিখা-আকৃতির সামুদ্রিক অববাহিকা বা গিরিখাত যা বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক মালভূমিকে একটি কোণে কেটেছে। এটি গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত। এটি গঙ্গা পরিখা নামেও পরিচিত। এই ধরনের অন্যান্য ব-দ্বীপের খাদ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়, যেমন সিন্ধু নদীর মুখের কাছে সিন্ধু অববাহিকা এবং মিসিসিপি ব-দ্বীপের পশ্চিম দিকে মিসিসিপি অববাহিকা। সোয়াথ অফ নো গ্রাউন্ডের প্রস্থ ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার, নীচে তুলনামূলকভাবে সমতল, এবং পাশের দেয়ালগুলি প্রায় ১২ ডিগ্রি বাঁকানো। মহাসাগরীয় মালভূমির প্রান্তে খাদের গভীরতা প্রায় ১,২০০ মিটার”।
সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার ‘সোয়াথ অফ নো-গ্রাউন্ড’ সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ডলফিন, তিমি, হাঙর, স্টিং রে এবং সামুদ্রিক কচ্ছপসহ বিপন্ন সামুদ্রিক প্রাণী এবং তাদের আবাসস্থল রক্ষা করা হবে। এ লক্ষ্যে সমুদ্রে সংরক্ষিত এলাকা বর্তমান পরিমাণের ৬ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বুধবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ‘সোয়াচ অব নো-গ্রাউন্ড মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’-এর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে এক ভার্চুয়াল সভায় এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপ-উপদেষ্টা বুধবার ‘সোয়াচ অফ নো-গ্রাউন্ড’-এর জন্য সমন্বিত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন।
পরিবেশ উপ-উপদেষ্টা বুধবার ‘সোয়াচ অফ নো-গ্রাউন্ড’-এর জন্য সমন্বিত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন।
উপদেষ্টা বলেন, এই পরিকল্পনা টেকসই মাছ ধরা, উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষা এবং নীল অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক হবে। পরিকল্পনায় মাছ ধরা, শিপিং, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যটন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, পরিকল্পনায় তিনটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এলাকাগুলো হলো-
১.মাছের প্রজনন ও পোনা পালন এলাকা,
২. সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ এলাকা এবং
৩. টেকসই মাছ ধরার এলাকা।
সংরক্ষিত এলাকার আয়তন ১ হাজার ৭৩৮ বর্গকিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৬৬ বর্গকিলোমিটার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব (বন) শামীমা বেগম এবং উপ-প্রধান বন সংরক্ষক ও সুফল প্রকল্পের পরিচালক গোবিন্দ রায়। .
সভায় প্রস্তুত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন সোসাইটির সিনিয়র উপদেষ্টা ডঃ সৈয়দ আরিফ আজাদ।
সভায় জানানো হয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন সংস্থা ও উপকূলবাসীর সহযোগিতায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। এতে সামুদ্রিক সম্পদের সুষম ব্যবহার ও পরিবেশের ভারসাম্য নিশ্চিত করা হবে বলে জানানো হয়।
এখানকার আন্ডারওয়াটার ক্যানিয়নটি বেঙ্গল বেসিনের অংশ, যেটি বিশ্বের বৃহত্তম পানির নিচের গিরিখাত।
এলাকাটি বিভিন্ন প্রজাতির তিমি, সামুদ্রিক কচ্ছপ, মাছ এবং সামুদ্রিক পাখির আবাসস্থল। অতীতের গবেষণা অনুসারে, এখানে প্রধানত বিভিন্ন প্রজাতির তিমি পাওয়া যায়, প্রধান প্রজাতি হল ব্রাইডস তিমি, স্পিনার ডলফিন, ইন্দো-প্যাসিফিক বটলনোজ ডলফিন, ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্পব্যাক ডলফিন, প্যানট্রপিকাল স্পটড ডলফিন, ইরাওয়াডি ডলফিন, ইন্দো-প্যাসিপোরাস ডলফিন।
এছাড়াও তিমি হাঙ্গর, বুলহেড হাঙর, টুনা, গ্রুপার, হকসবিল কচ্ছপ, অলিভ রিডলি কচ্ছপ, মুখোশযুক্ত বুবিস, গ্রেট ব্ল্যাক-ব্যাকড গল, ক্রেস্টেড টার্ন, সাঁতার কাটা কাঁকড়া ইত্যাদি প্রাণী রয়েছে।