January 8, 2025
ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ: বিচার মিলেনি এখনো, বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় পরিবার ও স্বজনেরা

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ: বিচার মিলেনি এখনো, বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় পরিবার ও স্বজনেরা

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ: বিচার মিলেনি এখনো, বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় পরিবার ও স্বজনেরা

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ: বিচার মিলেনি এখনো, বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় পরিবার ও স্বজনেরা

আলোচিত কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ। ১৪ বছর বয়সী ফেলানী খাতুন হত্যার ১৪ বছর পূর্তি আজ । ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। ফেলানীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা কলোনিয়ালী গ্রামে।

কুড়িগ্রামের  নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামের দরিদ্র নুরুল ইসলাম আর্থিক অভাবের কারণে আরও ১০ জনের সাথে ভারতে পাড়ি জমান। তিনি পরিবারের সঙ্গে দেশের বনগাঁও এলাকায় থাকতেন। নুরুল ইসলামের বড় মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল বাংলাদেশে। বিয়ের জন্য নিজ দেশে ফিরতে কাঁটাতারের বেড়া পার হতে হয়েছে তাদের। ৭ জানুয়ারি ভোর ৬টায় ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ফেলানীর বাবা মই  বেয়ে কাঁটাতারে উঠে যান। পরে ফেলানী কাঁটাতার পার হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিএসএফের গুলিতে মেয়েটি গুলিবিদ্ধ হয়।

আধাঘণ্টা ধরে ছটফট করে কাঁটাতারেই ঝুলন্ত অবস্থায় নির্মমভাবে মৃত্যু হয় ফেলানীর। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার প্রাণহীন দেহ।

গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এ উপলক্ষে ফেলানীর পরিবারের সদস্যরা তার কবর পরিষ্কার করছেন। আমরা তার বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বলেন, ‘১৪ বছর পরও সেদিনের বেদনাদায়ক স্মৃতি আমরা ভুলতে পারিনি। আজও আমরা গভীর রাত জেগে থাকি। দু’চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। আমরা আমাদের মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেকের কাছে গিয়েছি; কিন্তু আজও আমরা বিচার পাইনি।

ঘটনাটি যখন বিশ্বব্যাপী আলোড়ন শুরু করে, তখন ১৩ আগস্ট, ২০১৩  তারিখে ভারতের কোচবিহারের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে সে দেশের আদালত। রায় প্রত্যাখ্যান করে, ফেলানীর বাবা ন্যায়বিচারের আশায় ১১ সেপ্টেম্বর ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সেদেশের সরকারের কাছে একটি চিঠি লেখেন। যদিও পুনঃবিচার প্রক্রিয়া ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ এ শুরু হয়েছিল, কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা ব্যর্থ হয়।

২০১৫ সালে, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতীয় মান্ধাকা সুরক্ষা মঞ্চ আরেকটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করে। ৩১শে আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেই দেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ রুপি দিতে অনুরোধ করে। জবাবে ওই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বিবৃতি দেয়। এর পরে, শুনানি ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে বেশ কয়েকবার স্থগিত করা হয়েছিল। শুনানি ১৮  মার্চ, ২০২০ -এর জন্য নির্ধারিত হয়েছিল; কিন্তু  সেই শুনানি এখনও পর্যন্ত  হয়নি৷

২৭  সেপ্টেম্বর, ২০১৩  সালে, ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম প্রথম এবং বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী দ্বিতীয় ভারতীয় সংবিধানের ৩২  ধারার অধীনে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট, নয়াদিল্লিতে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের দাবিতে এবং ফেলানী হত্যার ক্ষতিপূরণ আইন ও বিচার মন্ত্রকের সচিব (ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া) এবং বিএসএফের মহাপরিচালকের কাছে আসামী হিসাবে। ফেলানীর বাবার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ চেয়ে তারা ২১  জুলাই, ২০১৫  এ আরেকটি আবেদন করে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী মুঠোফোনে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

এদিকে গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা নাগরিক পরিষদ ৭ জানুয়ারিকে ফেলানী দিবস হিসেবে ঘোষণা, হত্যার বিচার, ফেলানীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বারিধারা পার্ক রোডকে  ফেলানী সরণি নামকরণের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে। ‘।

নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, ২০১৫ সালে তারা বিশ্বব্যাপী সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে এবং ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের বলা হয়, জাতিসংঘের যেকোনো সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। এটি বাস্তবায়নের একটি প্রস্তাব। এ ব্যাপারে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই উদ্যোগের অপেক্ষায় তারা। তিনি বলেন, এই হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে শুধু স্টিকার লাগানো হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেলানী হত্যা মামলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা পাইনি। ন্যায়বিচার পেলে মানবাধিকার রক্ষার পথ তৈরি হতো।

আরো জানুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X