আর্থিক হেরফেরের চাপে রেহেনা কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে লন্ডনে ফ্রি ফ্ল্যাট দিয়েছেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফ। ফ্ল্যাটের বিনিময়ে তাকে কিছুই দিতে হয়নি। ছাত্র-জনঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে ব্যবসায়ীর যোগাযোগ রয়েছে বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস প্রতিবেদন প্রকাশের পর টানা চাপের মুখে পড়েছেন পতিত হাসিনার বোনজি (ভাগ্নি) টিউলিপ।
টিউলিপ সিদ্দিককে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল রবিবার বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। টিউলিপকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, সে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটটি তার স্বৈরাচারী খালার সাথে যুক্ত কারো কাছ থেকে পেয়েছেন কিনা।
টিউলিপ এর আগে বলেছে যে, সে উপহার হিসাবে ফ্ল্যাটটি পায়নি। সে জোর দিয়েছিল যে, তার বাবা-মা তার জন্য এটি কিনেছিলেন। অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল টিউলিপ সিদ্দিক।
তবে, যদিও লেবার পার্টি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, ডেভেলপার টিউলিপকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ফ্ল্যাটটি দিয়েছেন। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত রাতে টোরি এমপিরা টিউলিপ সিদ্দিককে তার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছেন।
টোরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেছেন যে, সিদ্দিককে তার সম্পত্তি লেনদেনের বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। ব্যাখ্যা না দিলে তিনি মন্ত্রী হিসেবে এই পদে থাকার অযোগ্য।
আরেক টোরি এমপি, বেন ওবিস-জেকটিন বলেছেন যে, টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে নতুন তথ্য উদ্বেগজনক।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রীর ট্রেজারি হিসেবে দেশের আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধ করার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
ইউকে ল্যান্ড রেজিস্ট্রি নথির বরাত দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস শুক্রবার জানিয়েছে যে, টিউলিপ যে ফ্ল্যাটটি বিনামূল্যে পেয়েছেন তা লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে অবস্থিত। এটি তাকে ২০০৪ সালে দেওয়া হয়েছিল। ২০০১ সালে ১৯৫,০০০ পাউন্ডে ফ্ল্যাটটি কেনা হয়েছিল। ফ্ল্যাটের বর্তমান মূল্য নথিতে উল্লেখ নেই। তবে একই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাট গত আগস্টে বিক্রি হয়েছে ৬৫০,০০০ পাউন্ডে (প্রায় ৯৭.৯৯১ মিলিয়ন টাকা)।
যুক্তরাজ্যের ভোটার নিবন্ধন নথির বরাত দিয়ে বলা হয়, টিউলিপ এই শতাব্দীর শুরুতে কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার পর তার ভাইবোনেরা সেখানে কয়েক বছর বসবাস করেন। সংসদ সদস্য হিসেবে টিউলিপের আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে তিনি দুটি ফ্ল্যাট থেকে ভাড়া পেয়েছেন।
বিষয়টির সাথে পরিচিত একজন ব্যক্তি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন যে, মোতালিফ টিউলিপকে “কৃতজ্ঞতার স্বাদ” হিসাবে ফ্ল্যাটটি উপহার দিয়েছেন কারণ টিউলিপের বাবা-মা তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিলেন যখন তিনি নিজে কষ্টে ছিলেন।
আবদুল মোতালিফ, এখন তার বয়স ৭০, দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে থাকেন। ভোটার রেজিস্ট্রেশনের নথিতে দেখা যায় মজিবুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি ওই এলাকায় মোতালিফের ঠিকানায় থাকেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
আবদুল মোতালিফ ফিনান্সিয়াল টাইমসের কাছে কিংস ক্রসের ফ্ল্যাট কেনার কথা স্বীকার করেছেন। তবে পরবর্তীতে এটা নিয়ে তিনি কী করেছেন সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।