বিদায় ঐতিহাসিক বিপ্লবী ২০২৪
২০২৪ সাল বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সফল জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে উচ্চকিত বাংলাদেশ, সারা বিশ্ব। জুলাই বিপ্লব থেকে শিক্ষা নিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী জ্বলে উঠছে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। সারা পৃথিবীর সাথে সাথে সে আন্দোলন থেকে নেয়া অভিজ্ঞতার দেখা মেলেছে সিরিয়ায়। ২০২৪ এর ৩৬ শে জুলাই পৃথিবীর জঘন্যতম গুম, খুন, হত্যা, আয়নাঘর আর নতুন নতুন পাপাচারের সৃষ্টিকারী অন্যতম স্বৈরশাসক স্মরণকালের কুখ্যাত খুনি শেখ হাসিনাকে তার অবৈধ ক্ষমতা হতে বিতাড়িত করে কোন মতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে স্বাধীন করে বাংলাদেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে উল্লাসে মেতে উঠেছে। ২০২৫ সালে, পলাতক হাসিনা ও পতিত আওয়ামী লীগের বিচারের প্রত্যাশায় সমগ্র বাংলাদেশ।
এদিকে ২০২৫ সাল, আগামীকাল একটি নতুন সুবাস নিয়ে হাজির হবে। বিদায় ২০২৪—বাংলাদেশ এবং দুনিয়ার ইতিহাসে একটি বিপ্লবী বছর, ইতিহাসের একটি মোড়। ২৪ ছিল রাজনীতিতে উত্থান-পতনের একটি অবিস্মরণীয় বছর।
সূর্যাস্তের পর স্মৃতি হয়ে থাকবে অনেক আনন্দ-বেদনার গল্প। আগামীকালের সূর্য ২০২৫ সালের নতুন বছরের সুবাস নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হবে। সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য প্রার্থনা করতে বিশ্ববাসী ব্যাকুল হয়ে উঠবে। তবুও, বাংলার মানুষ ২০২৪-এ বারবার ফিরে তাকাবে, যা জুলাই বিপ্লব, হাসিনার পলায়ন আর বিভিন্ন কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই। কেমন ছিল সারা বছর? এখন সময় ফিরে তাকানোর। এ বছর যেমন বিভিন্ন বিষয় ও ঘটনা আলোচনায় এসেছে, তেমনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও আলোচনায় এসেছে।
বছরের শুরুতে নির্বাচনী উত্তেজনা ও কোটা আন্দোলন দেশকে নিয়ে যায় এক নতুন মোড়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৬ বছরের শোষণের অবসান ঘটে। ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে।
রক্তের পথে বিপ্লবী বছর-২৪
এই বছরের ঘটনাগুলি প্রতিটি মানুষকে নতুন আলোতে দেখায় বলে মনে হচ্ছে। বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত ডামি নির্বাচন ছিল সরকারের একতরফা শাসনের সর্বশেষ পদক্ষেপ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনটি ছিল একটি স্পষ্ট প্রহসন, যেখানে বিএনপি ও জামায়াতসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো উপস্থিতি ছিল না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের ফলে আওয়ামী লীগ কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নেয় এবং তাদের প্রার্থী হয় ‘ডামি’ বা ‘প্রতীক’। শেষ পর্যন্ত এই একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে সরকার। কিন্তু প্রশ্ন, এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ছিল কি না, তা এখনও বিতর্কের বিষয়।
নানা দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০২৪ বিদায়ের পথে। ২০২৫ সালকে স্বাগত জানাতে চলছে নানা আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকার।
২০২৪ খ্রি.বছর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক উত্তাপ ও উত্তেজনার মধ্য দিয়ে। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এই উত্তেজনা। দলটি দাবি আদায়ে হরতাল, অবরোধ ও ‘অসহযোগ আন্দোলন’ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল। এরপরও নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র ও জনতার ৩৬ দিনের আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা উৎখাত হয়। শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায়। ছাত্র-জনতা জয়ী হয়। বাংলাদেশে রচিত হলো নতুন ইতিহাস। এরপর কেটে যায় আরো পাঁচ মাস। এ সময় ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার এ বছর ক্ষমতায় এসে নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছে।
শুধু সরকার গঠন ও পতন নয়। ২০২৪ অনেক কারণেই দেশবাসীর কাছে অর্থবহ। নানা ঘটনার সাক্ষী ছিল বছরটি। ক্যালেন্ডারের পাতায় জুলাই আসে ৩১ দিনে। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের কাছে এ বছরের জুলাই মাস ছিল ৩৬ দিনের। গত ১ জুলাই শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ হয় ৫ আগস্ট। আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে তারা জুলাইয়ে নামিয়ে দেবে।’ তাই ৩১ জুলাইয়ের পরেও আগস্ট মাসকে জুলাই হিসাবে গণনা করা হয়। তদনুসারে, তাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় আসে ৩৬ জুলাই। যা ক্যালেন্ডারের পাতায় ৫ আগস্ট।
কোটা সংস্কার আন্দোলন
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার নবম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটা ভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতি বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০২৪ সালের কোটা বাতিলের সার্কুলারকে অবৈধ ঘোষণা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ৬ জুন কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। ওইদিন রায় বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়। ৯ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে পুনর্বহালের রায় স্থগিত করতে ৩০ জুন সময়সীমা বেঁধে দেন।
৩০ জুনের মধ্যে কোটা পদ্ধতি নিয়ে আদালতের রায়ের কোনো সমাধান না হওয়ায় ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ৪ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আহ্বান জানানো হয়। ৬ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেয়। ‘বাংলা ব্লকেড’ ‘। তারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং সারাদেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেন। বাংলা ব্লকেডের জেরে গত ৭ জুলাই স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা।
১৫ জুলাই সারাদেশে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ২৫ জন ছাত্র-জনতা নিহত ও ১০০ জন আহত হয়। ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ১৮ জুলাইয়ে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন ‘ এর ঘোষণা দেয়। ১৮ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন বা সর্বাত্মক অবরোধের কারণে গোটা দেশ স্থবির হয়ে পড়ে। আন্দোলন দমন করতে, সরকার ১৮ জুলাই রাত ৯ টায় সারা দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয় এবং ১৯ জুলাই সকাল ১২ টায় কারফিউ জারি করে।
গত ২১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের রায় দেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হবে। ৭ শতাংশ কোটার মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১ শতাংশ জাতিগত সংখ্যালঘু এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।২২ জুলাই আদালতের নির্দেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন অনুমোদন করেন এবং ২৪ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপন জারির পর সারাদেশে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়। আন্দোলন দমন করতে ২৪ জুলাই বিভিন্ন মামলায় দুই হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২৫ জুলাই সারাদেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা হয়েছে। ২৮ জুলাই সরকার কারফিউ শিথিল করে। ওই দিন পুলিশ হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়কারী ডিবি কার্যালয়ে ডিবির চাপে পড়ে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে অন্য সমন্বয়কারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ১ আগস্ট ডিবির হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
৩ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশ উত্তাল ছিল। ঢাকার শহীদ মিনারে শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের মানুষ সমবেত হন। গত ৪ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি চলাকালে দেশের ১৮টি জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সেদিন অন্তত ১১৪ জন মারা গিয়েছিল।
আবু সাঈদ নিহত
গত ১৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরদিন সারাদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এ নিয়ে সেদিন মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়ে। এরপর থেকে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে
জামাত ইসলামী ও শিবির নিষিদ্ধ
১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে ২৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, সন্ত্রাস ও সহিংসতায় জামায়াত ও শিবিরের জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পলায়ন
তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পালিয়ে দেশত্যাগ করে কুখ্যাত খুনি শেখ হাসিনা। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর শুনে গণভবনে প্রবেশ করেন সাধারণ মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলার ২০ কোটি মানুষ । অভ্যুত্থানের ঘটনাটি হাসিনার স্বৈরাচারের পতন এবং ড. ইউনূসের সরকার গঠন করে।
তীব্র প্রতিবাদের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায় এবং বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবনে প্রবেশ করে। সে সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন।
তীব্র প্রতিবাদের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ঘোষণার ৩ দিন পর গত ৮ আগস্ট ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা শুরু করে। দেশের অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তার নাম এসেছে।
আয়নাঘর
বাংলাদেশের মানুষের বর্ণনায় এটি ‘গুমখানা’। হাসিনার শাসনামলে ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৬০৫ জন গোপনে সেখানে বন্দী ছিলেন। প্রসঙ্গত, হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। অর্থাৎ তার শাসনামলেই ‘আয়নাঘর’ শুরু হয়। তথ্য অনুযায়ী, ৮১ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে আয়নাঘরে ।ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের মতে, “আয়নাঘরএকটি গোপন আস্তানা।” ‘গুমখানা’ বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখার দায়িত্বে রয়েছে, ‘ডিরেক্টর জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স’ (ডিজিএফআই)।
বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পলায়নের পর , সেখান থেকে প্রায় সম্পত্তি মুক্তি পেয়েছেন।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ
আওয়ামী লীগের সহযোগী বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে একই দিনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে আগামী ২৪ অক্টোবর সময়সীমা বেঁধে দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
ভয়াবহ বন্যা
বিশ্বের অন্যতম অসহযোগী দেশ এবং সীমান্তের প্রতিটি দেশের সাথে শত্রুতা পূর্ণ দেশ ভারত বাংলাদেশের সাথে জোর করে, জুলুম করে নির্মিত ফারাক্কা বাঁধস অন্যান্যবাঁধ ছেড়ে দিল ভারত থেকে আসা পানি, ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যা শুরু হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় অন্তত ৫৯ জন নিহত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি ছিল ব্যাপক।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের রিমান্ড শুনানি চলাকালে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে ২৬ নভেম্বর’২৪ তারিখে কুপিয়ে হত্যা করে চিন্ময় সমর্থকরা। গোটা ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ইউক্রেন আগ্রাসন
২০২৪ এর ১৭ মার্চ রাশিয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল ঘোষণার ফলে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসেন পুতিন। তিনি টানা পঞ্চমবারের মতো রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন।এবং দুই বছর ধরে চলতে থাকে যুদ্ধকে আরো দায়িত্বের রূপ দেন আরেক স্বৈরশাসক পুতিন।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসকে নির্মূল করতে ইসরায়েলি ট্যাংক দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে প্রবেশ করে। অপারেশন শুরু হলো। রাফাহ শরণার্থী শিবিরে হামলায় ৪৫ জন নিহত হয়। তারপর থেকে অল আইজ অন রাফাহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড করছে। দক্ষিণ গাজার এই শহরে অভিযান শুরুর পর ইসরায়েল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব বেড়েছে। হোয়াইট হাউস তেল আবিবকে অস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের ওপর মারাত্মক হামলা চালায়। অন্তত ১৫০০ মানুষ নিহত হয়। হামাস ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজা উপত্যকায় নিয়ে যায়। এরপর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী অপারেশন আয়রন সোর্ড এর নামে কঠিন ও নিৰ্লয্য আগ্রাসন শুরু করে। বোমা হামলার কারণে গাজা কার্যত মৃত্যুর শহরে পরিণত হয়েছে। গাজায় এ পর্যন্ত ৪৬ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে।
টোরি শাসনের পতন
ইংল্যান্ডে ৫ জুলাই ২০২৪ , কিয়ের স্টারমার বিপুল ভোটে জয়লাভ করে নজির স্থাপন করেন। কনজারভেটিভ পার্টি তার দল লেবার পার্টির কাছে পরাজিত হয়েছিল। ঋষি সুনক তার প্রধানমন্ত্রীত্ব হারান। ১৪ বছর পর দেশে টোরি শাসনের অবসান হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন
গত ৫ নভেম্বর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে, ডেমোক্র্যাটরা ৮২ বছর বয়সী জো বাইডেনকে তাদের প্রার্থী হিসাবে বেছে নিয়েছিল। কিন্তু বাইডেন পরে নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে আসেন। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেল কমলাকে অনেকটাই পিছিয়ে রেখেছেন প্রবীণ রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি অত্যাশ্চর্য প্রত্যাবর্তন করেন।
সিরিয়ায় আসাদ শাসনের পরিবারের পতন
২৭শে নভেম্বর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নেয়া হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখলের ঘোষণা দিয়েছে। তারপর, দারা এবং হোমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি দখল করার পর, বিদ্রোহীরা ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামেস্কে পৌঁছে। তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে। আসাদ পরিবারের ৫০ বছরের শাসনের পতন ঘটে।
এভাবে আরও একটি বছর চলে গেল পৃথিবীর মানুষের জীবন থেকে। ঘটনাবহুল বছর ২০২৪পেরিয়ে গেছে। ২০২৫ সালের যাত্রা শুরু হয়ে চলছে । অনেক কারণে, ২০২৪ মানুষের মনে একটি ছাপ রেখে যাবে। তবে সবার চোখ এখন নতুন বছরের দিকে। নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক শান্তির বার্তা।