দ্য ইকোনমিস্টের ২০২৪ ‘বর্ষসেরা দেশ’ বাংলাদেশ
এক দশকেরও বেশি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। প্রায় ৬০০,০০ মানুষ নিহত হয়েছে। স্বৈরাচারের পতনের দাবি নিয়ে শুরু হওয়া দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ অবশেষে শেষ হয়েছে। চলতি মাসে বিদ্রোহী ইসলামিক যোদ্ধারা সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করে দেশটির দখল নেয়। আসাদের দুই দশকের নৃশংস শাসনে আরও লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তবে সিরিয়াকে পেছনে ফেলে ২০২৪ সালের সেরা দেশের মুকুট পেয়েছে বাংলাদেশ।
কারণ ২০২৪ এর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দলনের মুখে আরেক স্বৈরাচারী, হিংস্র বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। স্বৈরাচারী সরকারের পতন এবং দেশটির নতুন যাত্রার সূচনা বাংলাদেশকে তালিকার শীর্ষে নিয়ে এসেছে।
বিগত বছরের মতো এ বছরও যুক্তরাজ্যের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট বছরের সেরা দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে; আর এবার তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার দ্য ইকোনমিস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, বছরের সেরা দেশের তালিকা তৈরিতে সম্পদ, সুখ বা নৈতিকতার মাপকাঠি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, বরং বছরের সেরা দেশের তালিকা তৈরি করা হয়েছে যেসব দেশের ওপর ভিত্তি করে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে, অর্থাৎ গত ১২ মাসে।
ইকোনমিস্টের ২০২৪ সালের সেরা দেশের চূড়ান্ত তালিকায় পাঁচটি দেশ স্থান পেয়েছে। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে বা এক নম্বরে, সিরিয়া রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এছাড়া আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড রয়েছে যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “এবার আমাদের বিজয়ী বাংলাদেশ, যারা একজন স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। আগস্টে, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন রাস্তায় বিক্ষোভ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে, যিনি ১৭৫ মিলিয়নের দেশ ১৫ বছর ধরে শাসন করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতার একজন নায়কের কন্যা হিসাবে, তিনি একসময় একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে তিনি দমন, কারচুপির নির্বাচন, বিরোধীদের জেলে পুরে রাখার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের গুলি করার নির্দেশ দেন। তার শাসনে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে।”
দ্য ইকোনমিস্ট রিপোর্ট করেছে, ক্ষমতার ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ সবসময়ই প্রতিশোধমূলক সহিংসতার শিকার হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দল এবং ইসলামী চরমপন্থাকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
“কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের পরিবর্তন আশাব্যঞ্জক। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে, যার সমর্থন রয়েছে ছাত্র, সামরিক, ব্যবসায়ী এবং নাগরিক সমাজের। এটি শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করেছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।”
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তবে বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সামনের পথ ‘মসৃণ নয়’ বলে মন্তব্য করেছে ইকোনমিস্ট। প্রতিবেশী ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নতি এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা আসন্ন ২০২৫ সালে সরকারের জন্য দুটি বড় চ্যালেঞ্জ।
“২০২৫ সালে, এই সরকারকে ভারতের সাথে সম্পর্ক ঠিক করতে হবে এবং কখন নির্বাচন করতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। তার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে দেশের বিচার বিভাগ নিরপেক্ষভাবে চলছে এবং বিরোধী দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। এগুলোর কোনোটিই সহজ হবে না।”
‘তবে, এত কিছুর পরও, একজন স্বৈরশাসককে হটিয়ে আরও উদার সরকারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ এ বছর আমাদের সেরা দেশ।’
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সাম্প্রতিক ক্ষমতাচ্যুত সিরিয়ার এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও, আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য দ্য ইকোনমিস্টের চূড়ান্ত তালিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড একটি কর্তৃত্ববাদী ও দুর্নীতিবাজ সরকারের বিরুদ্ধে একটি নতুন সরকার গঠনের জন্য চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছে।
২০২৩ সালের বিজয়ী ছিল গ্রীস। দীর্ঘ আর্থিক সঙ্কট থেকে নিজেকে বের করে এনে একটি মধ্যপন্থী সরকারকে পুনঃনির্বাচিত করার জন্য দেশটিকে সেরা দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আগের বিজয়ীদের মধ্যে কলম্বিয়া (গৃহযুদ্ধ শেষ করার জন্য), ইউক্রেন (রাশিয়ান আগ্রাসন প্রতিরোধের জন্য) এবং মালাউই (গণতন্ত্রীকরণের জন্য) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরো জানুন