ইউ ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে ঢাকা বা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ প্রধান উপদেষ্টার
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভিসা কেন্দ্রটি দিল্লি থেকে ঢাকা বা প্রতিবেশী কোনো দেশে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন। আজ সোমবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি এ অনুরোধ জানান।
(৫আগস্টের পর, ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলি (IVACs) বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার উল্লেখ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। ২৬ আগস্ট ভারতীয় ভিসা সেন্টারের সামনেও বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীরা।
পর্তুগাল, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কোনো দূতাবাস নেই বাংলাদেশে। এতদিন বাংলাদেশিদের ভিসা সংক্রান্ত কাজে কাছের দেশ হিসেবে ভারতে যেতে হতো। বাংলাদেশ থেকে এসব দেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও ভারতীয় ভিসা বন্ধের কারণে ওই শিক্ষার্থীরা চলে গেছে অন্য দিকে।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বুলগেরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু তাদের ভিসার আবেদনপত্র দিল্লিতে বুলগেরিয়ান দূতাবাসে জমা দিতে পারেননি, বুলগেরিয়া তাদের হ্যানয়, ভিয়েতনাম, কাজাখস্তান ইসলামাবাদ, পাকিস্তান বা আস্তানায় দূতাবাসে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছে।)
প্রধান উপদেষ্টা বলেন,‘ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছেন না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।’
বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বুলগেরিয়া ইতিমধ্যেই বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা কেন্দ্র ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে সরিয়ে নিয়েছে। তিনি অন্যান্য দেশকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
এই সময়ে, তিনি সংক্ষিপ্তভাবে গত ১৬ বছরে নির্যাতন, শোষণ, বলপূর্বক গুম এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সার-সংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের উল্লেখ করে দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা কীভাবে ব্যাহত হয়েছে সে সম্পর্কে বলেছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপকভাবে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এই মিসইনফরমেশন ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।’
তিনি আরও বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা যারা জুলাইয়ের গণজাগরণে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল, তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে মাসজুড়ে আমরা বিজয় উদ্যাপন করি। বিজয়ের মাসে আপনাদের সঙ্গে এমন একটি ইনট্যারক্টিভ আলোচনায় অংশ নিতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।’
সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে আজকের বৈঠকে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথাও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইইউ প্রতিনিধিদের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেন। ইইউ প্রতিনিধিরা সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। পরামর্শ ও সুপারিশ দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন তারা।
এই বৈঠকে ঢাকায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার, ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসতিয়াগা, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কারস্টেনস।
দিল্লিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন প্রধানদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত দিদিয়ের ভান্ডারহাসেল্ট, বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাই ইয়ানকোভ, এস্তোনিয়ার রাষ্ট্রদূত মারিয়ে লুপ, লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রদূত পেজি ফ্রান্টজেন, স্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রদূত রবার্ট ম্যাক্সিয়ান, সাইপ্রাসের রাষ্ট্রদূত ইভাগোরাস ভ্রায়ানাইডস। আরও ছিলেন নয়াদিল্লিতে হাঙ্গেরি দূতাবাসের বাংলাদেশ অফিসের ফার্স্ট সেক্রেটারি, পোল্যান্ডের দূতাবাসের কনস্যুলার, পর্তুগাল দূতাবাসের হেড অব মিশন, স্লোভেনিয়া দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং নয়াদিল্লিতে রোমানিয়া দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি।