বিদেশিদের বাংলাদেশে অবৈধভাবে থাকতে দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, অবৈধ বিদেশিদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না। দেশে কতজন বিদেশি আছেন তার তালিকা পাওয়ার পর তারা কতদিন থাকতে পারবেন তা নির্ধারণ করা হবে। রোববার (৮ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক শেষে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এদেশে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, এটা কোনো আকস্মিক সিদ্ধান্ত নয়। কতজন বিদেশি আছেন এবং কোন দেশ থেকে এসেছেন তার তালিকা পাওয়ার পর তারা কতদিন এ দেশে থাকতে পারবেন তা নির্ধারণ করা হবে।
সীমান্ত এলাকা সম্পূর্ণ নিরাপদ উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রীর বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, এটি পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক হবে। এটি হবে অবৈধ বিদেশী নাগরিকদের জন্য জরুরী সতর্কতা।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) জন্য আগামীকাল ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জাসওয়াল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বিক্রম মিশ্রি ফরেন অফিস কনসালটেশন মিটিংয়ে ভারতের নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করার কথা রয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এটাই দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। তবে ড. ইউনূসের সরকার গত চার মাসে দুই দেশের মধ্যে তিনটি কারিগরি কমিটির বৈঠক করেছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে নয়াদিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ পররাষ্ট্র দফতরের পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জানা গেছে যে ভারতীয় অর্থায়নকৃত উন্নয়ন প্রকল্পগুলি পুনরায় চালু করা, ভিসা ব্যবস্থা সহজ করা, সরাসরি ফ্লাইট বাড়ানো এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই বৈঠকে। এই বৈঠককে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা প্রশমন এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রেক্ষাপটে গত ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। এখন দেশ আবার সংখ্যালঘু ইস্যুকে সামনে আনছে।
সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। তার গ্রেফতারের প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। ঘটনার একদিন পর ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা।
পরে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে ভারতও। এ ছাড়া হামলার সঙ্গে জড়িত ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তিন পুলিশ সদস্যকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের এ প্রেক্ষাপটে ভারতীয় গণমাধ্যম গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশকে নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার প্রচার করছে, যা সত্যতা যাচাইকারী সংস্থাগুলোর হাতে ধরা পড়ছে।
তারই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে এবং বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশী বিশেষ করে ভারতীয় অবৈধ বসবাসকারীদেরকে এ দেশ থেকে তাড়াতততএকটি বাস্তব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ বর্তমান বিপ্লবী সরকার।