স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার অসম্ভব, ভেঙে ঢেলে সাজাতে হবে: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, স্বাস্থ্য খাত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে সংস্কার প্রায় অসম্ভব। একে ভেঙে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, এটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে ড্রিমার্স কনসালটেশন অ্যান্ড রিসার্চ আয়োজিত ২০০তম মেডিকেল ক্যাম্প উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নানা সমস্যায় জর্জরিত। আমরা যদি আজ ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারতাম তাহলে হাসপাতালে আসতে হতো না। আমরা তা প্রতিহত করতে পারিনি। স্বাস্থ্য খাত এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে সংস্কার প্রায় অসম্ভব। এটা ভেঙ্গে পুনঃস্থাপন করতে হবে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি আহতদের চিকিৎসার সুবিধা দিতে। দেশের চিকিৎসকদের পাশাপাশি আমরা ফ্রান্স ও চীন থেকে চিকিৎসক এনেছি। আমরা চিকিৎসার জন্য নেপাল থেকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়ে এসেছি। তবে আমরা অনেক রোগীর চোখের উন্নতি করতে পারিনি। আমি যুক্তরাজ্য, চীন এবং ফ্রান্সের ডাক্তারদের সাথে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। আমরা একজনকে খুঁজে পেয়েছি যার চিকিৎসা খরচ প্রায় ২ কোটি টাকা। একজন বার্ন ইউনিটে আছেন যা অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাতে খরচ হবে ৪ কোটি টাকা। আমরা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে তাদের অনেককে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছি।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের চূড়ান্ত পর্যায় সম্পর্কে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের আগে গরিব মানুষকে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। দেশটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ২০১৪ সালে শুরু হলেও এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। আমি এই পদে আসীন হবার পরে আমাকে সময় দেওয়া হলো মাত্র ৮ দিন। আমি বললাম আমি এটা জানি না, আমাকে আগে জানতে হবে তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আজকে ২ মাস পেরিয়েছে, আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটা ক্যাবিনেটে দিতে পারবো বলে আশাবাদী।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মামুন আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যা শুধু একটি সমাজ নয়, সমাজও গঠন করেছে। দেশের মানুষ যখন হতাশ বা বাধাগ্রস্ত হয়েছে তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছে। অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এর উদাহরণ হল জুলাই বিপ্লব। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই এই জুলাই বিপ্লবকে সফল করার পথ দেখিয়েছিল।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, চিকিৎসক দেশের অন্যতম সম্মানিত পেশা। কিন্তু আমরা দেখছি আমাদের বন্ধুরা যারা দিনরাত পড়াশোনা করে এখন ইন্টার্ন করছে তারা তুলনামূলক সামাজিক মর্যাদা পায় না। তাদের নামমাত্র ভাতা দেওয়া হয়। যদিও তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি পড়াশোনা করে এবং পরিশ্রম করে, তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। আমরা মনে করি তাদের ভাতা বাড়ানো উচিত।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেছেন, এ সরকারের কাছে জনগণ যে ফল আশা করেছিল তা পায়নি। তারা এখনও মানুষকে খুশি করতে পারেনি। আমরা সাধারণ মানুষের প্রতি সুবিচার করতে পারিনি। যারা প্রাণ হারিয়েছেন বা আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে পুনর্বাসন বা চিকিৎসা দিতে আমরা সফল হইনি। ফলে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। আশা করি সরকার জনগণের আশা পূরণে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে ঐক্য করবে।
অনুষ্ঠানে বন্যার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মেডিকেল টিম লিডার আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা বন্যা কবলিত সারাদেশে ১০৮টি ক্যাম্পের মাধ্যমে ৩০ হাজার মানুষকে সেবা দিয়েছি। দ্বিতীয় ধাপে ২০টি ক্যাম্পের মাধ্যমে ১৬ হাজারের বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকায় সেবা প্রদানের জন্য আমরা টিএসসিতে লোকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি, যারা সরাসরি বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে সেবা প্রদান করেছে।