সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগ: রিসিভারের কাজ
রিসিভার:
আদালত কর্তৃক নিযুক্ত একজন কর্মকর্তা যিনি মামলা চলাকালীন বিরোধী পক্ষের সম্পত্তির তদারকি করেন তিনিই রিসিভার বা তত্বাবধায়ক। একজন রিসিভার নিয়োগ আদালতের বিবেচনার ভিত্তিতেই হতে হয় । যাইহোক, নিয়োগের সময় যতদূর সম্ভব বিচারিক নীতি এবং প্রচলিত আইনের প্রতি সতর্ক মনোযোগ দেওয়া হয়।
রিসিভারের কাজ কী?
- কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে বা ব্যবস্থাপনার মতো অবস্থা না থাকলে রিসিভার বা সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়। এই রিসিভার অন্তর্বর্তীকালীন যত্ন নেবে। এটি সরকার তার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে করতে পারে।
- একজন মালিক যেভাবে পরিচালনা করেন সেভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার ক্ষমতা রিসিভারের। তিনি কোম্পানির সব হিসাব ও ব্যবস্থাপনা তদারকি করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন।
- বাংলাদেশে আদালতের মাধ্যমে রিসিভার নিয়োগের ঘটনা অতীতে বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। ইভ্যালির ক্ষেত্রেও হাইকোর্ট একজন রিসিভার নিয়োগ করেছিলেন।
- যেহেতু বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে, তাই রিসিভার নিয়োগ না করা হলে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে টাকা গায়েব হয়ে যেতে পারে। কোম্পানির মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে এবং পক্ষগুলির মধ্যে একটি আদালতে গেলে একজন রিসিভার নিয়োগ করা যেতে পারে।
রিসিভার নিয়োগে আইনি প্রক্রিয়া:
দেওয়ানী কার্যবিধির ৫১ ধারা অনুযায়ী, আদালত উপযুক্ত মনে করলে ডিক্রির আগে বা পরে যেকোনো সময় একজন রিসিভার নিয়োগ করতে পারেন।
এছাড়াও, আদেশ নং ৪০-এর বিধি নং ১-এ বলা হয়েছে যে আদালত উপযুক্ত বা সুবিধাজনক মনে করলে, একটি আদেশ দ্বারা, নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে:-
(ক) ডিক্রীর পূর্বে বা পরে কোন সম্পত্তির জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ,
(খ) সম্পত্তির দখল বা জিম্মাদারী হতে কোন ব্যক্তিকে অপসারণ,
(গ) উক্ত সম্পত্তি রিসিভারের দখল, জিম্মাদারী বা ব্যবস্থাপনায় অর্পণ, এবং
(ঘ) রিসিভারকে সম্পত্তি প্রসঙ্গে, মামলা দায়ের করা ও মামলার জবাব দেয়া, সম্পত্তিটি হস্তগত করা, ব্যবস্থাপনা করা, এর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা, খাজনা ও মুনাফা আদায় করা এবং উক্ত খাজনা ও মুনাফা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ যথাবিহিত ব্যয় ও বিলি বণ্টন করার ব্যাপারে সম্পত্তির মালিকের অনুরূপ ক্ষমতা অথবা আদালত যেরূপ উপযুক্ত মনে করেন সেরূপ ক্ষমতা অৰ্পন।
আদালত উল্লিখিত কারণে প্রাপকের সম্পত্তি সংযুক্তির আদেশ দিতে পারেন। উল্লিখিত সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে এবং বিক্রয়ের আয় থেকে অর্থ প্রদান বা ক্ষতিপূরণের পরে প্রাপককে ব্যালেন্স (যদি থাকে) প্রদান করতে পারে। এইভাবে সম্পত্তি প্রাপকের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে মুক্ত হয়
কখন এবং কীভাবে রিসিভারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বন্ধ করা যেতে পারে: নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে রিসিভারের নিয়োগ বন্ধ করা যেতে পারে:-
১. যেসব ক্ষেত্রে মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত রিসিভারের নিয়োগ বৈধ থাকে, আদালত কর্তৃক রায় ঘোষণার সাথে সাথে রিসিভারের নিয়োগ বাতিল করা হয়।
২. রিসিভারের কাজের মেয়াদ তার দায়িত্ব শেষ হওয়ার পরে শেষ হবে৷
৩.মামলার পক্ষসমুহের মধ্যে আপোস রফা বা অন্যভাবে মামলাটির চূড়ান্ত নিস্পত্তির পর রিসিভারের কাজের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং তার নিযুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।
ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের পর তৎকালীন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা দেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে।
এর মধ্যে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, নাসা গ্রুপসহ বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে চলছে।
অভিযোগ উঠেছে, এসব ব্যবসায়ী গ্রুপ শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। একই সঙ্গে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির জোরালো অভিযোগও উঠেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বেক্সিমকো গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠান দেখাশোনার জন্য কেন রিসিভার নিয়োগ করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ নির্দেশ দেন।
বেক্সিমকো গ্রুপের সব কোম্পানির সব তথ্য দিতে এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের নেওয়া বকেয়া ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে কেন বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি।
সিআইডি জানায়, প্রতারণা, জালিয়াতি, শুল্ক ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকি, আত্মসাৎ এবং হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি অর্থ পাচারের তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপ।
প্রশ্ন হলো, যখন কোনো ব্যবসায় রিসিভার নিয়োগ করা হয়, তখন তাদের ভূমিকা কী? এছাড়াও দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারিত হলে কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?