ইলিশ এবার দুর্গাপূজায় ভারত যাবে না
স্থানীয় খামারিদের কথা মাথায় রেখে সরকার মাংস আমদানি করবে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। তিনি বলেন, টাকা কামাই করতে কিছু ব্যবসায়ী মাংস আমদানির চেষ্টা করছেন। থেমে নেই সেই চক্রের তৎপরতা। প্রান্তিক কৃষকদের বাঁচাতে সরকার হিসেবে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে আমরা মাংস আমদানি করব না। উৎপাদন খরচ কমিয়ে মাংসের দাম কমানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে কোনো ইলিশ মাছ ভারতে যাবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরামের (এফএলজেএফ) সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, একটি দল তাজা হিমায়িত গরুর মাংস আমদানির পক্ষে তৎপরতা শুরু করেছে। আমরা কোনো মাংস আমদানি করতে চাই না। এদেশের লাখ লাখ কৃষক এখন গবাদি পশু পালনের সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে ২০-২৫ লাখ পশু অবিক্রীত থেকে যায়। এমন পরিস্থিতিতে দাম বাড়ার অজুহাতে মাংস আমদানি করা হলে প্রথমে কম দামে পাওয়া গেলেও মূল মাংস অন্য দেশে চলে যেতে পারে। লাখ লাখ মানুষ গবাদি পশু পালন করছে। এই বাজার ধ্বংস করলে আমাদের সমাজ কোন অবস্থায় পড়বে সেটাও চিন্তার বিষয়। উৎপাদন খরচ কমিয়ে মাংসের দাম কমানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা সচেতন যে মানুষ কম ও ন্যায্য মূল্যে মাংস খেতে পারে এবং কৃষক বেঁচে থাকতে পারে।
হিমায়িত মাংসের পুষ্টিগুণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফরিদা আক্তার বলেন, বিদেশ থেকে এসব মাংস আসতে অনেক সময় লাগে অনেক ক্ষেত্রে ভুল প্রক্রিয়াজাতকরণের কারণে গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে এসব খাবারে নানা রকম রোগের আশঙ্কা থাকে।
পশুখাদ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, খামারিদের খরচ কমাতে পশুখাদ্যের দাম কমানো হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিলে কৃষি খাতের মতো ভর্তুকি নিয়েও আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব। এ খাতের প্রান্তিক কৃষক ও উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হবে। এটি উন্নত জাতের লালন-পালন সক্ষম করার পাশাপাশি দেশীয় প্রাণীদের টিকিয়ে রাখার জন্য কী করা যেতে পারে তাও নির্ধারণ করবে। এটা শুধুমাত্র আমাদের মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করবে না। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেব।
ভেটেরিনারি হাসপাতালে গবাদি পশুর সঠিক চিকিৎসা না হওয়া এবং প্রাণিসম্পদ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ফরিদা আক্তার বলেন, জনসেবা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করা হচ্ছে। এই সরকারের আমলে কেউ দুর্নীতি থেকে রেহাই পাবে না। তাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতিতে জড়িত থাকতে পারবেন না। কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশের উপহার পাঠানো হয়। তবে ফরিদা আক্তার বলেন, এবার ভারতে কোনো ইলিশ যাবে না।তিনি বলেন, দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে সেটা হতে পারে না। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, রপ্তানিও করা যাবে না। ফলে দুর্গাপূজার সময়ও যাতে কোনো ইলিশ ভারতে না যায় সে বিষয়ে আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি। কোনো ইলিশ যাতে অবৈধ পথে যেতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকায় কঠোর হওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি। নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে থাকা ইলিশ মাছের দামও নাগালের মধ্যে আনার প্রতিশ্রুতি দেন উপদেষ্টা।
সিন্ডিকেট ও কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের কারণে পশুখাদ্য, মাংস ও ডিমের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে ফরিদা আক্তার বলেন, এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এছাড়াও বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ালে দাম কমবে। এ জন্য সরবরাহ বাড়াতে হবে। পশুখাদ্য সিন্ডিকেট উচ্ছেদ করা হবে। এছাড়া পোল্ট্রি খাতের কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রান্তিক খামারিরা। বাজারে সঠিক দামে মুরগির উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে না। সিন্ডিকেটররা লাভবান হচ্ছে। আর দরিদ্র সাধারণ কৃষক। এছাড়া কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের নামে কৃষকদের প্রতারিত করা হচ্ছে। শিগগিরই এসব অনিয়ম বন্ধ করা হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে কৃষকদের নিরাপত্তা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ এবং খাদ্যপণ্যে ভেজালমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণের কিস্তি তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা গবাদি পশুর আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কথা ভাবছি।