শ্বেতপত্র: শীঘ্রই প্রকাশ হতে যাচ্ছে স্বৈর সরকারের অপকর্মের শ্বেতপত্র
শ্বেতপত্র:
শ্বেতপত্র হল একটি সরকারী নথি যা জনসাধারণ বা সংসদকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে অবহিত করার জন্য কোনো নীতি চূড়ান্তভাবে গৃহীত হওয়ার আগে বা নীতির ওপর কোনো কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সরকার কর্তৃক শ্বেতপত্র জারি করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে, নতুন আইন প্রণয়ন বা সংস্কার ব্যবস্থা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই শ্বেতপত্র জারি করা হয়
শ্বেতপত্রের ধারণাটি এসেছে যুক্তরাজ্যের সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে। ইউকে পার্লামেন্টের ওয়েবসাইট শ্বেতপত্রকে কীভাবে বর্ণনা করে তা হল “শ্বেতপত্র হল সংসদীয় প্রস্তাব সম্বলিত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত কোনো নীতিগত নথি।” এটি, বৃহত্তর মিথস্ক্রিয়া জন্য সুযোগ তৈরি করে।
ইনভেস্টোপিডিয়া, অর্থনীতি ও বিনিয়োগের এনসাইক্লোপিডিয়া বলে যে উনিশ শতকের ব্রিটেনে, সংসদীয় প্রতিবেদনে নীল আবরণ ছিল। প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সরকারের কাছে আলাদা গুরুত্বের হলে নীল কভারের পরিবর্তে সাদা কভারে প্রকাশ করা হতো। সেই রিপোর্টগুলোকে সাদা কাগজ বা শ্বেতপত্র বলা হতো। তবে জাতীয় জ্ঞানভাণ্ডার বাংলাপিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে যে “বাংলাদেশে এই প্রথা সম্পূর্ণ বিপরীত”।
“এই অনুশীলনটি কোনো প্রস্তাবিত নীতি বা জনস্বার্থের সমস্যার সাথে যুক্ত নয়,” বরং একটি রাজনৈতিক দলের সরকারের পর ক্ষমতাসীন দলের অপবাদের দলিল হিসেবে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে অন্য রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে গত ২৮ আগস্ট শ্বেতপত্রের খসড়া কমিটি গঠন করে। বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠকে শ্বেতপত্রের মূল উদ্দেশ্য ও পরিধি নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শ্বেতপত্রের বরাত দিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে বর্তমান সরকার বুঝতে পারবে কী ধরনের উত্তরাধিকার অর্থনীতি নিয়ে তাদের কাজ করতে হবে। সেই ভিত্তি নির্ধারণ করা আমাদের কাজ।
তিনি শ্বেতপত্রে “মেগা প্রকল্প” পর্যালোচনা করার কথাও বলেছেন। প্রজ্ঞাপনে শ্বেতপত্র ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাত বছরে বাংলাদেশের ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে।জানা গেছে, ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে বাংলাদেশের মোট ঋণ ১০০ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর ৮০ শতাংশই সরকারি ঋণ।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম তাদের সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। জানা গেছে, শেখ হাসিনার সরকার ১৮ লাখ কোটি টাকা দেনা ছেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, মূল্যস্ফীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংকের অবস্থা এবং আর্থিক খাত সহ বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি শিরোনাম হয়েছে।
শ্বেতপত্রের খসড়া কমিটির অন্যতম সদস্য জাহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অর্থনৈতিক অবস্থা বোঝার জন্য অর্থনীতির ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা, উত্তরাধিকারসূত্রে কী পাওয়া গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীভাবে চলছে তা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করব। এটা একটা স্বাস্থ্য পরীক্ষার মত।’
এছাড়া তিনি বলেছেন যে “মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাও করা হবে”। ব্যাখ্যা হিসেবে জাহিদ হোসেন বলেন, নীতিমালা কীভাবে চলছে তাও শ্বেতপত্রে পর্যালোচনা করা হবে। বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠক শেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করব না। তারল্য সংকট, বেনামী ঋণ, সঞ্চয় ঘাটতি পর্যালোচনা করা হবে। “আর যাতে টাকা পাচার না হয়, টাকা পাচার হলে শাস্তি হবে, এটা শ্বেতপত্রে বলা হবে,”
যোগ করেন তিনি।মেগা প্রকল্পগুলোও পর্যালোচনা করা হবে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি আকার এবং প্রভাবের দিক থেকে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পও অন্তর্ভুক্ত করে। কিছু মেগা প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, কিছু চলমান রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এসব মেগা প্রকল্পকে তাদের অর্জন হিসেবে বেশ রেশোরে প্রচার করছিলো।
তবে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে শ্বেতপত্রের খসড়া কমিটি প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করবে।
তিনি বলেন, সময়ের অভাবে সব প্রকল্প বিশ্লেষণ করবেন না, তবে মেগা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করব। মেগা প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করার সময় যদি কোনো বিশেষ প্রকল্পের ওপর ফোকাস করার প্রয়োজন হয়, তাহলে হয়তো আমার সহযোগীরা সেগুলো দেবেন। কোনো মেগা প্রকল্প পর্যালোচনাধীন থাকতে পারে এমন প্রশ্নে কমিটির অন্যতম সদস্য জাহিদ হোসেন সময় সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ঠিক কতদূর কাজ হবে তা বলা যাচ্ছে না।
1 Comment