November 23, 2024
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

প্রধান বিচারপতির আসনে বসে সংবিধানের ত্রয়দশ সংশোধনীর রায়ে চরম জালিয়াতের আশ্রয় নিয়েছিল এই সেই সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিশ্বাসভঙ্গ ও শেখ হাসিনা সরকারকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে ফৌজদারি মামলা করেন অ্যাডভোকেট ইমরুল হাসান। রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালতে এ আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে পরে আদেশ জারি করবেন বলে জানান।

আইনজীবী ইমরুল হাসান  বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল রায় পরিবর্তন করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি সম্পূর্ণ রায় উল্টে দেন। এর মাধ্যমে তিনি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২০/৪০৬/৪৬৭/৪৬৮  ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন এ বিষয়ে পরে আদেশ দিবেন বলে জানিয়েছেন। মামলার আবেদনে বলা হয়, ‘২০১৪ইং সনের নির্বাচন আগাইয়া আসিলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে চিরকাল ক্ষমতায রাখার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী রায়ের ১৬ মাস ০৩ দিন পর পরে তথা বিগত ১৩-০৯-২০১২ ইং তারিখে পূর্নাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন।

ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খুলে দিয়েছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ১৬ মাস তিন দিন পর প্রকাশিত রায়ে এই অংশটি অন্তর্ভুক্ত করেননি। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আপিল বিভাগের দুই বিচারপতি। দৃশ্যত খায়রুল হক আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তই মেনেছেন। বিচারপতি খায়রুল হকের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে এক আলোচনা সভায় তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। তবে বিচারপতি খায়রুল হকের নাম উল্লেখ করেননি।

বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী বলেন, আপিল বিভাগের রায় প্রক্রিয়াগত কারণে বিলম্বিত হতে পারে, তবে তা যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে হতে পারে, যেমন এক মাসের মধ্যে। এক থেকে দেড় বছর কিছুই হতে পারে না। এবং অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদেশের কোনো অংশ কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না। এটি করার জন্য, একটি পর্যালোচনা আবেদন এবং শুনানি হতে হবে। কিন্তু তা না করে যদি রাতের আঁধারে এক থেকে দেড় বছর পর রায় পরিবর্তন করা হয়, তাহলে তা ফৌজদারি অপরাধ।

মাহমুদুল আমিন চৌধুরীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন হাইকোর্টের  সাবেক আরেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এ ধরনের রায় পরিবর্তন ফৌজদারি অপরাধ। আবেদনে আরো বলা হয়, বিচারকদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের ভিত্তি হলো আস্থা ও বিশ্বাস। প্রধান বিচারপতির পদে আধিপত্য বিস্তার করে উচ্চারিত রায় পরিবর্তনের জন্য প্রধান বিচারপতির পদকে অসাধুভাবে ব্যবহার করে নিজের পছন্দের দলকে চিরকাল ক্ষমতায় রাখার জন্য নির্বাচন ছাড়াই প্রহসনের দেশ তৈরির অপরাধ; বিশ্বাসভঙ্গ এবং গোটা জাতির সঙ্গে প্রতারণার সামিল।

বিধায় দণ্ডবিধি আইনের ৪২০/৪০৬ ধারায়, বাংলাদেশের জনগণের ক্ষতি বা অনিষ্ট করার জন্য প্রকাশিত রায় আইনিপন্থা ব্যাতিরেকে অর্থাৎ কোন রিভিউ পিটিশন ছাড়াই অত্র রায়ের অংশবিশেষ বাতিল করে ১৬ মাস ০৩ দিন পর চাকরি না থাকা অবস্থায় স্বাক্ষর করে রায় প্রচার করায় দণ্ড বিধি আইনের ৪৬৭/৪৬৮ ধারায় অপরাধ করিয়াছে।

মাহবুব তালুকদারের বইয়ে  খায়রুল হক সম্পর্কে যা বলেছেন : প্রয়াত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার‘নির্বাচননামা: নির্বাচন কমিশনে আমার দিনগুলো’ বইতে বিচারপতি খায়রুল হক সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনীতির স্থপতি একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি- সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। যদিও আমি তাকে অরাজনৈতিক ব্যক্তি বলি, তিনি মূলত পর্দার আড়ালে থেকে দলীয় রাজনীতির পক্ষে ও বিপক্ষে দাবা খেলেন। রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি প্রধান বিচারপতির আসন থেকে যে ঘটনা ঘটিয়েছিলেন সেটি ছিল সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়। এই রায়ের ফলে, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। তিনি আরও লিখেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বিচার বিভাগ। গণতান্ত্রিক দেশে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলুপ্তির জন্য অনেক যুক্তি প্রদর্শন করা যেতে পারে। কিন্তু বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে এই ব্যবস্থা প্রতিস্থাপনের জন্য যে নতুন আইনি কাঠামোর প্রয়োজন ছিল, তা  অনুপস্থিত।

আরো জানতে

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X