November 21, 2024
স্বৈরাচারের পরিণতি যেমন হয়

স্বৈরাচারের পরিণতি যেমন হয়

স্বৈরাচারের পরিণতি যেমন হয়

স্বৈরাচারের পরিণতি যেমন হয়

আল্লাহ দুনিয়ার সাময়িক সামর্থ্য বা অক্ষমতা দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করে মানবতার কল্যাণে কিছু মানুষকে বেছে নিতে চান। আর স্বৈরাচারী শাসকেরা বনি আদমকে অসাম্য ও অন্যায়ের আগুনে পুড়িয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের সবচেয়ে নিষ্ঠুর পথ বেছে নেয়। ফেরাউন ছিল প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক। তিনি নিজেকে সমগ্র বিশ্বের মালিক বলে ঘোষণা করলেন- “আনা রাব্বুকুমুল আলা”। নমরূদসহ অনেকেই তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। সবাই ক্ষমতার উত্তাপ সহ্য করতে পারে না। তাই তিনি ক্ষমতার উত্তাপে সবাইকে পুড়িয়ে ফেলতে চান। খুব কম লোকই এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

অ্যাডলফ হিটলার আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় স্বৈরাচার প্রবর্তন করেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নতুন স্বৈরাচারীরা স্বৈরাচারের শৃঙ্খলে বিভিন্ন দেশকে আবদ্ধ করে পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। কেউ গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে স্বৈরশাসক আবার কেউ শক্তি খাটিয়ে স্বৈরশাসক। স্বৈরাচারীদের শাসনে মানবতার মৃত্যু হয়।

তখনই শুরু হয় শাসক ও শোষিতের লড়াই। কোথাও সমাজতান্ত্রিক একনায়কের বিরুদ্ধে কোথাও বা তথাকথিত নির্বাচিত একনায়কের বিরুদ্ধে। শেষ পরিণতি ভয়াবহ। শুরু হলো জনগণের সরকার।

ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নির্বাচনে জালিয়াতি ও নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। এক সময় আন্দোলন-বিদ্রোহে কাঁপানো প্রতিবাদী মানুষের লাশ, স্বৈরাচারের মসনদ লেজ মুচড়ে পালানোর পথ খুঁজে পায়। স্বৈরাচারী মহারাজা-নবাব-বাদশারা চলে যেতে বাধ্য হয়।

শত শত নাগরিককে হত্যার পর মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা পালিয়ে যান, নিজেকে এবং তার বোন শেখ রেহানাসহ গোটা দেশ, দল, প্রশাসন ও পরিবার প্রতিটি নেতা-কর্মীকে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে। ঔদ্ধত্যের অনিবার্য পরিণতি থেকে বেঁচে গেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তাদের এই অবস্থায় রেখে একমাত্র ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন, এটা অসহায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-মন্ত্রীরা মেনে নিতে পারছেন না। তাদের প্রশ্ন, তিনি যদি দেশ ছাড়তে যাচ্ছেন, তাহলে শেখ পরিবারের সদস্যদের বাঁচিয়ে শেষ মুহূর্তে দলের নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে রেখে গেলেন কেন?

পদত্যাগপত্রে সই না করা পর্যন্ত নানা অজুহাতে শেখ হাসিনা ক্ষমতা না ছাড়তে অনড় ছিলেন। এমনকি শেষ সময়েও তিনি অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও অধিক রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে থাকেন।

পদত্যাগের ঘণ্টা দুয়েক আগে তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে পুরো দেশকে রক্তাক্ত করতে চান। আর দলের কিছু নেতা আন্দোলনকারীদের যেখানে খুশি যা খুশি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে চতুররা এটা ঘটানোর আশা করেছিল কিন্তু বাস্তবে মাঠে নামেনি। তবে কিছু আওয়ামী অন্ধরা অস্ত্র নিয়ে ময়দানে নেমে জান-মালের সর্বনাশ করেছে এবং কোথাও কোথাও নিজেরাও মারা গেছে। একপর্যায়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হলেও অনিশ্চয়তায় বিলম্ব করতে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষা পায়নি সে।

তার পদত্যাগ ঘোষণার সাথে সাথে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার খায়েশ প্রকাশ করেছিলেন। ভাষণ রেকর্ড করার ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন তিনি। তাও নাড়াতে পারেনি। ততক্ষণে বুদ্ধি আসে যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। পদত্যাগ যত দীর্ঘ হবে, বিপদ তত বাড়বে। গণভবন থেকে গণভবন মার্চকে সফল করতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী গণভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারা আধা ঘণ্টার মধ্যে গণভবনে পৌঁছাতে পারবেন।

হাসিনার জন্য সেনাবাহিনীর আর কোনো সমর্থন না থাকায় দেরি না করে তিনি সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরের হেলিপ্যাডে পৌঁছান এবং দ্রুত একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে তার ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে ভারতে চলে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিজয় মিছিল বের করা হয়। সব মিছিলের গন্তব্য হয়ে ওঠে শাহবাগ। ঢাকার রাজপথ, গণভবন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদসহ সারা দেশেই ছিল উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীদের। তার বিদায়ের পর বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। এতে দেড় দশকের আওয়ামী লীগের শাসনের অবসান ঘটে।

শেখ হাসিনা পালিয়ে না গিয়ে জেলে যেতেন বলে তার দলের অনেক নেতা নিশ্চিত ছিল । তাদের যুক্তি হলো, প্রয়াত এইচ এম এরশাদ গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হলেও তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি; এরপর কারাগারে যান তিনি পরবর্তীতে বারবার সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তার দলও এখন টিকে আছে। শেখ হাসিনা সেই অবশিষ্টাংশ দল ও দলের নেতাকর্মীদের জন্য রেখে যাননি।

যদিও তিনি এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও ঠাঁই পাচ্ছেন না এবং ভারতেও নিরাপদ বোধ করছেন না।  এবং এত আদরের ভারত সরকারও তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। এটাই আসলে  পরিণতি হয়। যেটা বারবার হাসিনাকে বলার পরও তিনি কর্ণপাত করেননি।  যদিও তাদের কতিপয় নেতা শেখ হাসিনার নিজের এলাকা থেকে দা কুড়াল নিয়ে বের হয়েছিল।  কিন্তু সেই দাম্ভিকতাও হয়তোবা বেশি দিনের হবে না।

শেষ পর্যন্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি ক্ষমতা থেকে পালাতে বাধ্য হন। তার নির্দেশে ছাত্রদের উপর দমন-পীড়ন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার জন্য একটি অবিশ্বাস্য নজির স্থাপন করেছে। তবে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হত্যাকাণ্ডের তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে যে ধ্বংসলীলা শেখ হাসিনা করেছেন তা পূরণ করা সত্যিই কঠিন কাজ।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X