বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড-সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চায় ইইউ
জোসেপ বোরেল আরও উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশে বিক্ষোভকারী, সাংবাদিক, ছোট শিশু এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী দ্বারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনেক ঘটনা ঘটেছে এবং তাদের অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা যাতে যথাযথ আইনি সুবিধা পায় তাও নিশ্চিত করতে হবে।
জোসেপ বোরেল বলেন, এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেয় সেদিকে তারা কড়া নজর রাখবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বাংলাদেশ সম্পর্কের নীতিমালা বিবেচনায় নিয়ে তারা আশা করে যে বাংলাদেশে সকল মানবাধিকারকে পূর্ণভাবে সম্মান করা হবে।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে জাতিসংঘও। সেক্রেটারি-জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তারক্ষীদের দ্বারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে তার ম্যান্ডেট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। সোমবার এক ব্রিফিংয়ে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক একথা জানান। প্রথমে তিনি বাংলাদেশ ইস্যুতে একটি বক্তব্য পাঠ করেন। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। উদ্বোধনী বিবৃতিতে, তিনি সকল প্রকার সহিংসতার দ্রুত, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আহ্বান জানান।
দুজারিক বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে আমার কাছে আপডেট আছে। আমি বলতে পারি যে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি নতুন করে ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে অবহিত করেন এবং তিনি শান্ত ও অহিংসার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ‘সরাসরি গুলিবর্ষণ’ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এক বিবৃতিতে ইইউর পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল একথা জানিয়েছেন। সংস্থাটির পররাষ্ট্র বিষয়ক বিভাগের ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়।
জোসেপ বোরেল বলেন, ‘গত ২৭ জুলাই লাওসে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)-এর আঞ্চলিক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের কাছে আমার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। গুলি চালানোর আদেশ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সেখানে কর্তৃপক্ষ দেখেছে। .’
তিনি বলেন, এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যা, সহিংসতা, নির্যাতন, গণগ্রেফতার এবং সম্পত্তির ক্ষতির ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এসব কর্মকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ইইউ পররাষ্ট্র নীতির প্রধান বলেন, “বাংলাদেশে বিক্ষোভকারী, সাংবাদিক, ছোট শিশু এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও প্রাণঘাতী অস্ত্রের অনেক ঘটনা ঘটেছে এবং পূর্ণ জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।জোসেপ বোরেল বলেন, এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেয় সেদিকে তারা গভীরভাবে নজর রাখবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূলনীতিকে সামনে রেখে বাংলাদেশে সকল মানবাধিকারকে পূর্ণভাবে সম্মান করা হবে।
এদিকে, সোমবার (২৯ জুলাই) জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি জাতিসংঘ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এছাড়াও সংগঠনটি আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বেআইনি হত্যাকাণ্ড ও শ্যুট অন সাইট’ (দেখামাত্র গুলির নির্দেশ) নিয়ে ইইউ উচ্চ প্রতিনিধির উদ্বেগ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির উচ্চ প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেল বাংলাদেশে সহিংস বিক্ষোভকারীদের “শ্যুট অন সাইট’ (দেখামাত্র গুলির নির্দেশ)” এবং “বেআইনি হত্যার” গভীর নিন্দা করেছেন। মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স সার্ভিস একথা জানিয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর বিষয়ে ইইউ উচ্চ প্রতিনিধি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের ‘শ্যুট অন সাইট’ (দেখামাত্র গুলির নির্দেশ)’ নীতিমালা এবং বেআইনি হত্যাকাণ্ডের ঘোষণায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। হত্যা, সহিংসতা, নির্যাতন, গণগ্রেফতার এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মীদের সম্পত্তির ক্ষতি সম্পর্কেআমরা ও আমিও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
ইইউ উচ্চ প্রতিনিধি বলেছেন, “এই ঘটনাগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা উচিত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। প্রতিবাদকারী, সাংবাদিক এবং তরুণ সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দ্বারা অতিরিক্ত এবং প্রাণঘাতী বল প্রয়োগ, হাজারো গ্রেপ্তারের জন্য অবশ্যই পূর্ণ জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
জোসেফ বোরেল বলেছেন,আমরা আশা করি ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্কের মৌলিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে সকল মানবাধিকারকে পূর্ণভাবে সম্মান করা হবে।’