লাল রঙে রক্তিম ফেসবুক
সরকারি ভাবে আজ জাতীয় শোক সত্ত্বেও অনেকেই তাদের ফেসবুক প্রোফাইল লাল রঙে রাঙিয়েছেন। ব্যবহারকারীরা কোটা আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের প্রোফাইল ছবি লাল করে সহিংসতার প্রতিবাদ করছেন। সরকার আজ সারাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণার পর অনেক সরকার সমর্থক তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে কালো ফ্রেম যুক্ত করেছে। তবে বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করেছে।
সোমবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রোফাইল পিকচার লাল রঙে রাঙাচ্ছে। অনেকে তাদের প্রোফাইল পিকচার হিসেবে লাল কাপড়ে বাঁধা মুখ ও চোখের ছবিও দিয়েছেন। এসব মানুষের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে আমার ফেসবুক প্রোফাইল লাল রঙে রাঙিয়েছি। এই লাল রং আমাদের শহীদ ছাত্রদের রক্তের প্রতীক।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সানজিদা জুঁই তার লাল ফেসবুক প্রোফাইল শেয়ার করে লিখেছেন, প্রহসনের দুঃখ শক্তিতে রূপান্তরিত হোক।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমরা প্রোফাইল পিকচার লাল করে দিয়েছি। যারা নিরপরাধ ছাত্রদের ওপর নির্যাতন ও হত্যা করেছে তাদের আগে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তারপর রাষ্ট্রীয় শোক পালন করব।”
শিক্ষকদের মধ্যে সাইফুল আলম চৌধুরী লিখেছেন, ‘এত মানুষের মৃত্যুর পর মানুষ কেন কালোর বদলে লালকে বেছে নিল? তোমার ধ্বংস, ষড়যন্ত্র, তৃতীয় শক্তি, পানি ছিটানো, গুজব দমন, নিরাপত্তারক্ষী- এসব তত্ত্ব ও আখ্যানের বিরুদ্ধে কত বড় প্রতিবাদ, তোমার মতো বড়ো আখ্যানের প্রবর্তক ও প্রচারকদের বোঝার ক্ষমতা নেই। কালো যেখানে শোকের প্রতীক, সেখানে লাল বিপ্লব ও ভালোবাসার রঙ। লাল বীরত্ব ও বীরত্বের প্রতীক।
এদিকে ফেসবুক সরকার বন্ধ করে দিলেও মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার ভেরিফায়েড প্রোফাইলে কালো ছবি দিয়েছেন।
এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা জাতীয় শোক হিসেবে তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে কালো ফ্রেম লাগিয়েছেন।
এর আগে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন জানান, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার সারাদেশে শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। কিন্তু মন্ত্রিসভা সোমবার শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিলেও আন্দোলনকারী ও সাধারণ ছাত্ররা তা প্রহসন বলে প্রত্যাখ্যান করে তাদের প্রোফাইল ছবি হিসেবে লাল রং বেছে নেয়।
গত সোমবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রোফাইল পিকচার লাল রঙে রাঙাচ্ছে। অনেকে তাদের প্রোফাইল পিকচার হিসেবে লাল কাপড়ে বাঁধা মুখ ও চোখের ছবিও দিয়েছেন। তবে শুধু শিক্ষার্থী নয়, সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের এই নতুন ধারায় যোগ দেন সারাদেশের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরাফাত বিন তাহের বলেন, ‘সরকারের দেওয়া প্রহসনমূলক রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করতে এবং দেশের মানুষকে রক্তের কথা মনে করিয়ে দিতে প্রোফাইল পিকচার লাল করে দিয়েছি।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বলেন, “রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমরা প্রোফাইল পিকচার লাল করে দিয়েছি। যারা নিরপরাধ ছাত্রদের ওপর নির্যাতন ও হত্যা করেছে তাদের আগে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তারপর রাষ্ট্রীয় শোক পালন করব।”
জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী তার ফেসবুক প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে লাল রঙে একটি মানচিত্রের ছবি প্রকাশ করেছেন। একই ছবি মুক্তি পেয়েছে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী প্রিন্স মাহমুদেরও। মহানগর খ্যাত নির্মাতা আশফাক নিপুন তার ফেসবুক প্রোফাইল পরিবর্তন করেছেন। তিনি ‘বিচার বিলম্বিত, ন্যায়বিচার অস্বীকার’ ক্যাপশন সহ লাল রঙে একটি ছবিও পোস্ট করেছেন।
দেশের আরেক জনপ্রিয় নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীও তার ফেসবুক প্রোফাইলে লাল ব্যানার দিয়ে ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘ফুলগুলো সব লাল কেন?’
অভিনেত্রী অপি করিমও লাল রঙের প্রোফাইলে লিখেছেন, ‘শুধু কোটা নয়, গোটা দেশের সংস্কার দরকার।’ অভিনেতা ইরেশ যাকের, অভিনেত্রী দীপা খন্দকার, সাদিয়া আয়মানও বেছে নিয়েছেন লাল রং। তারকা ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। এছাড়াও, অনেকে তাদের প্রোফাইলে তাদের মুখে এবং চোখে লাল কাপড় লাগিয়েছেন।
1 Comment