রাষ্ট্রীয় সরকারী শোক প্রত্যাখান,কোটা আন্দোলনকারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে আগামীকাল মুখ ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে গুলি করে শত শত শিক্ষার্থী নিহত ও হাজার হাজার শিক্ষার্থী আহত হলেও শিক্ষার্থীদের দাবি মানা হচ্ছে না। রিমান্ডের নামে নিরপরাধ ছাত্র-ছাত্রীদের ধরে ব্লক রেইডের মাধ্যমে তুলে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় চালানো হচ্ছে পাশবিক নির্যাতন।
এমতাবস্থায় বর্তমান সরকারের কর্মকর্তারা সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিচ্ছেন না, বরং নির্দয়ভাবে শিক্ষার্থীদের দমন করছেন এবং জনজীবনের চেয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর প্রতিবাদে এ কর্মসূচি। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের জন্য বিনা বিচারে সাধারণ ছাত্রদের প্রতি নিত্যদিনের নির্মম পরিহাস।
একই বিবৃতিতে নয় দফা দাবিও দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো:
১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
২। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার এবং সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেশে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে পদত্যাগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শহীদ শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে ড্রাগ এডিক্ট বলে কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে এবং আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে পদত্যাগ করতে হবে।
৩। ঢাকাসহ যত জায়গায় ছাত্র-নাগরিক শহীদ হয়েছে সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।
৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা হয়েছে, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রক্টরদেরকে পদত্যাগ করতে হবে।
৫। যে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ যে সকল সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলা পরিচালনা করেছে এবং যেসকল নির্বাহী মেজিস্ট্রেট পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদেরকে নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিকদের উপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে তাদেরকে আটক করে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।
৬। দেশব্যাপী যেসকল ছাত্র-নাগরিক শহীদ এবং আহত হয়েছে তাদের পরিবারকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৭। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনসহ সকল দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে দ্রুততম সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে
৮। অবিলম্বে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিয়ে সারাদেশের সমস্ত ক্যাম্পাসে মোতায়েনকৃত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সোয়াট এবং আর্মি তুলে নিতে হবে।
৯। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। ইতিমধ্যে গণগ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানির শিকার সমন্বয়কবৃন্দ ও ছাত্র-নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ও সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে এ পর্যন্ত সরকারি হিসেবেই সারাদেশে ২১০ জনের বেশি নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ছাত্র-আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন বলে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য এবং সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ ও তাদের দলের নেতাকর্মীদের হামলায় এসব আহত ও মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করেন আন্দোলন কারী মেধাবীরা।
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন তীব্র হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার সমর্থক হরেক রকম লীগ মাঠে নামেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর গুলি বর্ষণ করলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে উল্টো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এসব মামলায় এ পর্যন্ত কয়েক হাজার গ্রেপ্তার হয়েছে।
1 Comment