বারান্দায় দাঁড়ানো শিশু শহীদ আহাদের ডান চোখে লাগে গুলিঃ প্রেক্ষিত কোটা সংস্কার মুভমেন্ট
বাংলাদেশে অত্যাচারী আর জালিমদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে অধিকার আদায়ে যে তরুনেরা শহীদ হয়েছে তাদের ভিতরে শহীদ হয়ে গেছে শিশু বাচ্চাও। তাদের কথা উল্লেখ না করলে হয়তো ইতিহাস আমাদেরকে ধিক্কার দিবে। তাই আকাশের মালিকের কাছে বিচার দিয়ে শহীদ আহাদের শহীদ হওয়ার ঘটনাটি নাতিদীর্ঘ আলোচনায় উল্লেখ করছি।
একপাশে বাবা, অন্যপাশে মা, মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন পাশেই ছিলেন ৪ বছরের শিশু শহীদ ছোট্ট আবদুল আহাদ। ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাবা , মা আর আহাদের তিন জোড়া চোখ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বাসার নিচে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছে। হঠাৎ মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন আহাদ।
বাবা ভেবেছিলেন ছেলেরমাথা ঘুরে পড়ে গেছে। ছেলেকে ধরে তুলতে গিয়ে বুকের রক্ত হিম হয়ে যায় বাবা আবুল হাসানের। ছেলেটির চোখ, মুখ, মাথা রক্তে ঢেকে গেছে। গুলিটি ডান চোখে ঢুকে মাথার ভেতরে ঢুকে যায়।
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ১১ তলা বাড়ির অষ্টম তলায় থাকেন আবুল হাসান, তার স্ত্রী সুমি আক্তার, বড় ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১) ও ছোট ছেলে শহীদ আবদুল আহাদ। আয়কর বিভাগের সিনিয়র সহকারী আবুল হাসানের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।
আমার ছেলে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে মারা গেছে। এ নিয়ে আর কি বলব! পোস্টমর্টেম না করতে চেয়েছিলেন। করতে। অতটুকু শরীর যাতে আর কাটাছেঁড়া করা না হয়। । কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়নি পোস্টমর্টেম করলই আমার ছোট্ট বাবার।
বাবা আবুল হাসান দ্রুত রক্তাক্ত ছেলেটিকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে আসে। অস্ত্রধারী পুলিশ ছাত্রলীগ এগিয়ে এসে তাকে বাধা দেয়। সর্বশেষ ছেলের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে তারা ফিরে যায় । আহাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মাথায় গুলি লেগেছে। কিন্তু কোন অবস্থানে আছে তা বুঝতে হলে সিটিস্ক্যান করতে হবে। কিন্তু সিটিস্ক্যান করা হলে আইসিইউ যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলতে হবে। এতে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। তবে সিটিস্ক্যানও গুরুত্বপূর্ণ।
জানালার কাছে দাঁড়াতেই বুলেটটি চিরতরে শিশুটিকে নিয়ে যায়
চাচা মোকলেছুর রহমান জানান, পরদিন শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় আইসিইউতে আহাদকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বেলা তিনটার দিকে তারা আহাদের লাশ দেখতে পায়। তারপর অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ভাঙার গ্রামের বাড়িতে চলে যান পুখুরিয়া গ্রামে। বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে আহাদকে দাফন করা হয়। আবেগঘন কন্ঠে মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘বাড়িতে আগে কোনো পারিবারিক কবরস্থান ছিল না। আহাদকে দাফনের মধ্য দিয়ে কবরস্থানের যাত্রা শুরু হয়।
আবুল হাসানের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, “আমার ছেলে একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারণে মারা গেছে। এ নিয়ে আর কী বলব! পোস্টমর্টেম করতে চাইনি। কিন্তু সফল হতে পারিনি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচিতে কয়েকদিন ধরে সারাদেশে সংঘর্ষ ও সহিংসতায় দুই শতাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। আহাদ ছাড়াও বাড়ির ভেতরে গুলির আঘাতে আরও তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। সবগুলো শিশু শহীদ নিয়ে আমরা লেখার চেষ্টা করব তবে সংক্ষেপে জানিয়ে রাখি।
রাজধানীর উত্তরার নাইমা সুলতানা (১৫) মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সড়কে ভাড়া বাসার চতুর্থ তলার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন ওই তরুণী। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে।
নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় বাড়ির ছাদে খেলতে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন রিয়া গোপ। মেয়েটিকে কোলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথায় গুলি করা হয়। মেয়েটি তার বাবার কোলে লুটিয়ে পড়ে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। শিশুটির বয়স তখন সাড়ে ছয় বছর।
ওই দিনই বাড়ির জানালা থেকে একটি গুলি সাফকাত সামিরের চোখে ঢুকে তার মাথার খুলি দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১১ বছরের শিশুটির। ওই দিন মিরপুরের কাফরুল থানার সামনের সড়কে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়।
আর নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় বাড়ির ছাদে খেলতে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন রিয়া গোপ। মেয়েটিকে কোলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথায় গুলি করা হয়। মেয়েটি তার বাবার কোলে লুটিয়ে পড়ে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। শিশুটির বয়স তখন সাড়ে ছয় বছর।
Read more…