কোটা বাতিল আন্দোলনঃ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা সার্কুলার পুনর্বহালের দাবিতে আজ রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব রোড ও শাহবাগ এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অবশেষে বিকেল ৪টার দিকে বিক্ষোভকারীরা সড়ক ছেড়ে দেয়।
এ সময় একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল দুপুর আড়াইটায় দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে তারা এ ঘোষণা দেন।এর আগে দুপুর আড়াইটায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে ভিসি চট্টোপাধ্যায়-নীলক্ষেত-ঢাকা কলেজ-সায়েন্স ল্যাব প্রদক্ষিণ করে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রজ্ঞাপন জারি করে কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল করে সরকার।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীরা কোটা ব্যবস্থা চায় না। তারা প্রতিবাদ জানায়। ফলে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা বা ঝগড়া করার আর কিছু নেই।
তবে ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার কিছু সন্তান।ওই রিটের শুনানি শেষে ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। ওই রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে বেআইনি বলে রায় দেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে শাহবাগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর-নীলক্ষেত-ঢাকা কলেজ-সায়েন্সল্যাব হয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়।
বিকেল ৪টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় শিক্ষার্থীদের শাহবাগ মোড়ে বসে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তাদের অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষকে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের পথ তৈরি করে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে আপাতত ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। চলাচল শেষ হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।
ঢাবি ছাত্র সালমান বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত, ২০১৮ সালের কোটা সার্কুলার বহাল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। আমরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
৪ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো—
- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
- পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)।
- সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।
- দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২০১৮ সালের অক্টোবরে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সময় বলেছিলেন, ছাত্ররা কোটা ব্যবস্থা চায় না। তারা আন্দোলন করেছে। ফলে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আর আলোচনা করার বা হা-হুতাশ করার কিছু নেই।
তবে ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করেন।সে রিটের শুনানি নিয়ে কেন ওই ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।ওই রুলের বিষয়ে শুনানি শেষে গেল ৫ জুন হাইকোর্ট রায় দেন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ।