লাশ দাফনের ৯ দিন পর বাড়ি ফিরলেন তরুণী
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দাফনের ৯ দিন পর রোকসানা আক্তার (৩০) নামে এক নিখোঁজ কিশোরী বাড়ি ফিরেছে। উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের রাজবল্লবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, দাফন করা ওই নারী কে? অন্যদিকে, ফিরে আসা যুবতীকে এক ঝলক দেখার জন্য লোকেরা তার বাড়িতে ভিড় করেছিল। ফিরে আসা রোকসানা আক্তার ওই গ্রামের মৃত তাজুল ইসলামের মেয়ে।
শনিবার বিকেলে জানা যায়, রোকসানা আক্তার মে মাসের শেষের দিকে চৌদ্দগ্রামে নিজ বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের ষোলশহরে তার ছোট ভাই সালাহ উদ্দিনের বাড়িতে বেড়াতে যান। গত ১লা জুন সকালে রোকসানা বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়।
স্বজনসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। গত ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিন বিকেলে ফেনী শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকা খালাতো বোন হাজেরা আক্তার ও চাচাতো ভাই শাহজাহান খবর পান ফেনীর জিয়া মহিলা কলেজের সামনে ড্রেনে এক নারীর লাশ পড়ে আছে। শহর তারা সেখানে গিয়ে রোকসানা আক্তারের লাশের মিল দেখে ভাই ইবায়দুল হককে খবর দেন। এ সময় ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। ইবায়দুল হক রাতে জিয়া মহিলা কলেজের ড্রেন এলাকায় পৌঁছে আশেপাশের লোকজনকে তার বোনের ছবি দেখিয়ে লাশটি একই রকম কিনা জানতে চাইলে সবাই জানান, ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে। পরে ইবায়দুল হক তার স্বজনদের নিয়ে ফেনী সিটি পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে উপ-পরিদর্শক প্রতুল দাসের সঙ্গে দেখা করে লাশ উদ্ধার করে বোন রোকসানার ছবি দেখান। উপস্থিত পারস্পরিক আলোচনায় তারা উপ-পরিদর্শক প্রতুল দাসের কাছে রোকসানার লাশ শনাক্ত করেন। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে বোন রোকসানা আক্তারের মরদেহ ইবায়দুল হকের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
ওই দিন বাদ আসর গুণবতী ইউনিয়নের রাজবল্লবপুর মধ্যমপাড়ায় সমিষ্করা দিঘির দক্ষিণ পাড়ে তার লাশ দাফন করা হয়। নামাজে ইমাম মাওলানা আবু তাহের, ভাই ইবায়দুল হকসহ এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন।
লাশ দাফনের ৯ দিন পর গত ২৬ জুন বুধবার বিকেলে এ র্ঘটনা ঘটে। হঠাৎ ‘দাফন করা’ রোকসানা বাড়িতে উপস্থিত হলে সবাই হতবাক হয়ে যায়। ঘটনা জানাজানি হলে তাকে এক নজর দেখতে উৎসুক জনতা উঠানে ভিড় জমায়। এ সময় নারী-পুরুষ একবাক্যে তাকে প্রশ্ন করেন, রোকসান তোমাকে কবর দিয়েছি, তুমি কোথা থেকে এলে? তারপর বললেন, কে বলে আমি মরে গেছি? ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। শরীর খারাপের কারণে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। উল্টো এখন রোকসানাই ভাই ইবায়দুল হক ও সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন করছেন, আমার কথা ভাবছেন, আপনি কোন নারীকে দাফন করলেন, তার পরিচয় কী?
ফিরে এসে রোকসানা আক্তার বলেন, কাউকে কিছু না বলে চিটাগাং ভাইয়ের বাসা ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। আমি সেখানে একটি কাজ পেয়েছিলাম. বাসা থেকে কোন জামা না নেওয়ায় জামা নিতে বাসায় ফিরে আসি। ২৬ জুন বুধবার বাড়িতে এসে দরজায় ধাক্কা দিলে আত্মীয়রা আমাকে দেখে হতবাক হয়ে যায়। তারপর জানতে পারলাম আমি মারা গেছি এবং আমার লাশ দাফন করা হয়েছে। জীবিত ফিরে এলাম?
নিখোঁজ হওয়ার ৯ দিন পর ফিরে আসা রোকসানার ভাই ইবায়দুল হক বলেন, চাচাতো ভাই ও বোনের খবর শুনে পুলিশ লাশ নিয়ে এসে দাফন করেছে। বুধবার বিকেলে রোকসানা জীবিত বাড়ি ফিরে এলে ফেনী মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু মুসা বলেন, লোকজনের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি তবে কার লাশ দাফন করা হয়েছে সেটি এখন দেখার বিষয়।
ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক প্রতুল দাস শনিবার সন্ধ্যায় জানান, উদ্ধারকৃত লাশ বিকৃত ছিল। ইবায়দুল হক ও তার স্বজনরা উদ্ধারকৃত লাশ রোকসানার বলে শনাক্ত করে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। এখন যেহেতু তাদের বোন ব্যক্তিগতভাবে বাড়িতে এসেছেন, আমরা বিষয়টি নতুন করে তদন্ত করব।” শনিবার সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ত্রিনাথ সাহা বলেন, ওই তরুণীর নিখোঁজ, উদ্ধার, দাফন ও ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। দেখা যাক খবর নিয়ে কি হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল খন দাফনকৃত লাশটি আসলে কার?