January 17, 2025
ক্রিকেট আনন্দে বাংলাদেশ?

ক্রিকেট আনন্দে বাংলাদেশ?

ক্রিকেট আনন্দে বাংলাদেশ?

ক্রিকেট আনন্দে বাংলাদেশ?

হ্যাঁ ক্রিকেটের সাময়িক আনন্দে হলেও আমরা উল্লাসিত হৃদয়ে আত্মহারা হয়ে যাই । এবং আমাদের খেলোয়াড়দের পিছনে করা সমস্ত ভুলকে সমানভাবে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। এটাই আমাদের বাংলাদেশের সরলমনা ক্রিকেটপ্রেমীদের আন্তরিকতার প্রধান লক্ষণ।

কিন্তু ব্যবসা আর রাজনীতির ফাঁকে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন এমপি সাকিব সাহেব । কারণ তিনি বুঝে গেছেন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় খেলায় মনোনিবেশ করা কঠিন। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ক্লান্ত তিনি। যা তার পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিসিবি একজন কর্মকর্তাকে সাকিবের অবস্থা জানতে চাওয়া হলে তার জবাব ছিল- ‘বিগ স্যারের বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না।’ দেশের ক্রিকেটে সাকিবের অবদান  এতটাই মনে করা হয় যে, তাকে নিয়ে কেউ কিছু বলতে সাহসই করে না। তবে এই বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ১১১ রান ও তিন উইকেট সাকিব। সমর্থকদের ধারণা, এটা দেশের সেরা ক্রিকেটারের শেষের  শুরু।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর অটোচয়েস হয়ে ওঠা মাহমুদউল্লাহ তার অষ্টম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ মিশন খারাপভাবেই শেষ করেছেন। মনে করা হচ্ছে এটিই তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সমাপ্তি, তবে মাহমুদউল্লাহ নিজেও এ নিয়ে ভাবছেন কিনা জানা নেই। না মনে করলেও সমর্থকরা ঠিকই ভেবেছেন। এ নিয়ে ফেসবুকেও চলছে সমালোচনার ঝড়। বিশ্বকাপের আগে যারা মাহমুদউল্লাহর সমর্থক হয়েছিলেন, তারাও গতকালের পর ডুব দিয়েছেন অজানায় ।

কারণটাও পরিষ্কার, ২০ ওভারের ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ৯টি বিশ্বকাপ খেলা টাইগাররা ‘শূন্য’ অর্জনের রেকর্ড নিয়ে দেশে ফিরছে। অন্যদিকেসাতটি  বিশ্বকাপ  খেলারু  আফগানিস্তান রয়াল বেঙ্গলদের  পরাজিত করে তাদের প্রথম সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। ২০০৭ সালে, বাংলাদেশ তাদের প্রথম টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচ জিতে সুপার এইটে পৌঁছেছিল। পরের তিন ম্যাচ হেরে বিদায়। ১৭  বছর পর, টাইগাররা আবার সুপার এইটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু এবারও সেই  তিন ম্যাচেই হেরেছে। এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অর্জন সুপার এইট। ১৭ কোটি বাঙালির ক্রিকেটের স্বপ্ন ও ভালোবাসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল বাংলাদেশ।

চারটির মধ্যে তিনটি ম্যাচ জিতে তারা সুপার এইট নিশ্চিত করেছে এবং প্রত্যাশার পারদ  বাড়িয়েছে। যা শেষ হয়েছে চরম হতাশা ও লজ্জায়। মাত্র ১১৬ রান তাড়া করতে নেমে ৮ রানে হেরে মাঠ ছাড়ে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্রিকেট দল। আফগানিস্তান যখন সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নোস ভ্যাল স্টেডিয়ামে তাদের ক্রিকেটের সূর্যোদয় দেখেছিল, তখন আমাদের  নতুন অধিনায়ক ক্ষমা চেয়ে দেশবাসীকে সান্ত্বনা দিতে চেয়েছেন। তবে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা ক্ষমার চেয়ে সাহস দেখতে চেয়েছেন! শান্ত বলেন, ‘বিশ্বকাপের পুরো যাত্রা নিয়েই বলব, দল হিসেবে আমরা বাংলাদেশের সব সমর্থকদের হতাশ করেছি। যারা আমাদের খেলা অনুসরণ করে, তাদের আমি ‘নিচু করে দিয়েছি’, তাই দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।

শেষ আটে বাংলাদেশের প্রথম দুই প্রতিপক্ষ ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। দুটি ম্যাচেই বাজেভাবে হেরেছে শান্তর দল। সেখানেই শেষ হয়ে গেল  ক্রিকেট  বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেমি স্বপ্ন। কিন্তু আফগানিস্তান ও ক্যারিবীয়দের বৃষ্টি হঠাৎ করেই উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়।অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে জমিয়ে দেয় সেমিফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়েরে উত্তেজনা। দু’টি ম্যাচ হেরেও শেষ চারে খেলার সুযোগ এসেছিল টাইগারদের। পরিসংখ্যানগত ফাঁদে আফগানরা পরাজিত হলেও এটা নিশ্চিত ছিল। আর তা না হলে অন্তত সিরিজে চতুর্থ জয়ের সান্ত্বনা নিয়ে দেশে ফেরার সুযোগ ছিল,  টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম সুযোগ আসে আফগানদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১১৫ রানে। বাংলাদেশ ১২.১ ওভারে ১১৬ রানের এই লক্ষ্য তাড়া করতে পারলে শেষ চার নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু টপ অর্ডারের দুর্বল ব্যাটিংয়ে তা হয়নি। ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। তারপর বার বার বৃষ্টি এল আর গেল। তখন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে গেলেও সামনে থেকে কে জিতবে তা নিয়ে আরেক লড়াই হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দেখে একবারেই মনে হয়নি বৃষ্টি আইনের হিসাব মাথায়  নিয়ে তারা মাঠে লড়াই করছেন।

সমীকরণে সেমিফাইনালের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাওয়ায়, ক্রিকেট টাইগারদের লক্ষ্য একটি জয়ের মাধ্যমে বিব্রতকর অবস্থা এড়াতে। এই ম্যাচে একটি জয় জয়ের সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে সফল মৌসুম হবে। ১২ওভার শেষে বাংলাদেশের জয়ের জন্য ৪২ বলে ৩২ রান প্রয়োজন। তখন স্কোর বোর্ডে ৮৭ রান বাকি তিন উইকেট। শুরু থেকেই ক্রিজে দলের হয়ে লড়ছেন লিটন দাস। একে একে তাকে সঙ্গ দিতে আসেন ৬ ব্যাটার। তাদের মধ্যে দেশের হয়ে টানা ৯টি বিশ্বকাপ খেলা সাকিব আল হাসানও আছেন। সেখানে ছিলেন আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু দু’জনেই দলকে হার মানায়। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়ে শুরুটা পুরো ক্রিকেট সিরিজেই ব্যর্থ।

ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে তিনি ২৯ রানের ইনিংস খেলে ফর্মে ফিরেছিলেন, কিন্তু শেষ ম্যাচে আবারও ব্যর্থ হন। অন্যদিকে আগের দুই ম্যাচে চল্লিশের বেশি রানের ইনিংস খেলা অধিনায়ক শান্ত। তবে স্নায়ুচাপে  ম্যাচে আসছে  মাত্র ৫ রানে। ২.৪ ওভারে মাত্র ২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। নবীনের বলে পরের বলেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। তার গোল্ডেন ডাক দলকে অনেক চাপ ও বিপদে ফেলেছে। সৌম্য সরকার এসে চেষ্টা করলেও ব্যাটে ১০ রানের বেশি পাননি। তার স্ট্যাম্প ভেঙে দেন রশিদ খান। ৬.৩ ওভারে ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।

সেখান থেকে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালের দৌড়ে ফিরতে দেননি রশিদ। বাংলাদেশের ইনিংসের মেরুদণ্ড ভেঙে পরের তিনটি উইকেট দ্রুত নিয়ে নেন তিনি। দারুণ ছন্দে থাকা তাওহীদই মূলত ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। ৯ বলে ১৪ রান করেন হৃদয়। এরপর নড়বড়ে মাহমুদউল্লাহকে ১০.৫ ওভারে ফেরত পাঠানোর পর রিশাদকেও খালি হাতে পথ দেখান। ১১ ওভারে ৮০ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। গুলবাদিন তানজিম সাকিবকে ৯২ রানে ফেরত পাঠালে চাপ বেড়ে যায়। যদিও লিটন দাস দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, শেষ পর্যন্ত ছিলেন, কিন্তু দলকে জিততে পারেননি। তাকে দর্শক বানিয়ে অপর প্রান্ত থেকে আউট হন তাসকিন ও মুস্তাফিজ। লিটন ৪৯ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকলেও জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করে আফগানরা। ১০.৪ ওভারে প্রথম উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। আফগানদের জমানো ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তিনি। তানজিদ ক্যাচ বানিয়ে ফেরত পাঠান ইব্রাহিমকে। ২৯ বলে ১৮ রান করে আউট হন এই ব্যাটসম্যান। ইব্রাহিম আউট হলেই চাপ বাড়ে  ক্রিকেট আফগানদের ওপর। পরের ১৮ বলে মাত্র ৪ রান! সেই চাপ বজায় রেখে দ্রুত আরও কয়েকটি উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। এই ব্যবধানে আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে ফেরান মোস্তাফিজ। ১২ বলে ১০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। পরের ওভারে আবারও দৃশ্যে রিশাদ। তিনি গুরবাজকে ফেরত পাঠান, যিনি ১৬.১ ওভারে স্থির হয়েছিলেন, তিনি হুমকি হওয়ার আগেই। ৫৫ বলে ৪৩ রান করে আউট হন গুরবাজ। এই লেগ স্পিনার গুলবাদিন নাইবকেও ফেরান এক বলে ৪ রানে। পরের ওভারে মোহাম্মদ নবী ১ রানে তাসকিনের শিকার হন। শেষ পর্যন্ত রশিদ খানের ১০ বলে ১৯ রানের ঝড় আফগানিস্তানকে ১১৫ রানে পৌঁছে দেয়। মূলত ব্যাট-বলে রশিদের কাছে হেরে যায় সাকিবরা।

মোদ্দাকথা হল বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে নিয়ে ভাবনার সময় অনেক আগেই এসে গেছে।  কিন্তু বাংলাদেশ এ ব্যাপারে হয়তোবা নীরবতার ভূমিকা পালন করছে।  ইচ্ছা থাকলেও দুঃসাহসিকভাবে কেউ কিছু বলতে পারছে না।  এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট টিমে একগুয়েমি চলছে।   এটাও সবাই বুঝতে পেরেও কিছুই বলতে চাচ্ছে না।   তাই  নতুনভাবে সাজিয়ে সামনে এগিয়ে নেওয়ার পথে কিছু খেলোয়াড় নেতার বড়ই প্রয়োজন।

অন্যথায় সাময়িক কিছু চেতনার আনন্দ দেওয়া ছাড়া বাংলাদেশ টিম আর কিছুই করতে পারবে না এই দেশের কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তকে।

আরও জানুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X