বিষাক্ত সাপ, রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি করবেন ?
রাসেল ভাইপার
রাসেল ভাইপার একটি অত্যন্ত বিষধর ছোট্ট আকৃতির সাপ। যেটা ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাস করে। এবার বাংলাদেশের ২৮ জেলায় ছড়িয়েছে রাসেল’স ভাইপার, বিভিন্ন চরাঞ্চলে এ সাপের আনাগোনা বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে কিছুদিন যাবত ফরিদপুর অঞ্চলে এবং চাঁদপুর অঞ্চলে সাপের ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে রাসেল ভাইপার সহজে নিজে তেড়ে এসে কাউকে কামড় দেয় না । বরঞ্চ তাকে অতিরিক্ত বিরক্ত করলে অথবা নিজের জীবনের শঙ্কা থাকলে তবেই সে কারো উপর কামড় বসিয়ে দেয়।
রাসেল ভাইপার পৃথিবীর বিষধর সাপের তালিকায় ৫ নম্বরে থাকলেও আক্রমণের দিক দিয়ে ১ নম্বরে। কারণ এ সাপটি এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যেই তার বিষক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে এবং কামড় ফুটিয়ে দিতে পারে। এজন্য রাসেল ভাইপার থেকে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধান।
সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ফরিদপুরের বাসিন্দারা রাসেল ভাইপারের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে চর এলাকার বিভিন্ন স্থানে এ সাপের আনাগোনা দেখা গেছে। সাপের আতঙ্কে কৃষকরা মাঠে কাজ করতে যাচ্ছেন না। সবাই আতঙ্কিত।
এ অবস্থায় ফরিদপুর কোতয়ালী এলাকায় রাসেলের ভাইপার হত্যা করতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে নগরীর রাসেল স্কয়ারস্থ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
বৈঠকে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সাপ মেরে আনলে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। যে যত বেশি সাপ মারতে পারবে তাকে প্রতি সাপ প্রতি ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
সাপে কামড়ালে মানুষ ভয় পায়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। ফলে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের একটি বড় অংশ ডাক্তার বা হাসপাতালের সেবা না নিয়েই তাঁরা ওঝা বা সপুদের আশ্রয় নেয়।ফলে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এ জন্য সাপে কামড়ালে কী করা উচিত তা জানা দরকার। আর কি করা উচিত নয় তাও জানা দরকার। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও গবেষণা অনুষ্ঠিত হয়। এটি একটি সাপে কামড় পরে কি করতে হবে বিস্তারিত.
সাপে কামড়ালে কি করবেন
যেকোনো সাপের কামড়ের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সেইভ করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিকে আশ্বস্ত করতে হয় এবং সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এর মধ্যে রয়েছে-
শুরুতেই, ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করা উচিত যে সাপের কামড়ের অর্থই মৃত্যু নয়। প্রকৃতির বেশিরভাগ সাপই অ-বিষাক্ত। এমনকি যারা বিষাক্ত বলে পরিচিত তারাও সবসময় কামড় দিয়ে পর্যাপ্ত বিষ ঢুকাতে করতে পারে না। আর বিষ যেমনই হোক , তার চিকিৎসা ও প্রতিকারও আছে।
- কামড়ের স্থান থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে বিষ যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
- সাপের কামড়ের পরে শিকারকে স্থির রাখতে হবে। নড়াচড়া করতে দিবেননা। যতই নাড়াচাড়া করবেন, ততই বিষ শরীরের রক্তে মিশে যাবে।
- পায়ে কামড় দিলে বসে পড়তে হবে।
- হাত বা অন্য কোন অংশ কামড়ালে সেই অংশ নড়াচড়া করা যাবে না।
- সবচেয়ে ভালো হয়, হাড় ভাঙলে যেভাবে দুপাশে সহায়ক হিসেবে কাঠ বা অন্য কিছু দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়, ঠিক সেভাবে আক্রান্ত স্থানকে মাঝে রেখে বেঁধে ফেললে। এই ক্ষেত্রে, ক্ষত পরিষ্কার করা আবশ্যক। ক্ষতটি অবিলম্বে ব্যান্ডেজ করা উচিত।
- ডাক্তার বা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে এই ব্যান্ডেজটি কোনওভাবেই খোলা উচিত নয়।
- চুড়ি, আংটি, নূপুর বা টাইট পোশাক রাখা যাবেনা।
- যদি শ্বাস কষ্ট হয়, মুখ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের চেষ্টা করুন।
- সাপকে মারতে বা তাকে ধরতে সময় নষ্ট করবেন না।
- যদি সাপ মেরে ফেলা হয়, সাপটিকে আপনার সাথে হাসপাতালে নিয়ে যান।
সাপে কামড়ালে কি করবেন না
- ক্ষত অতিরিক্ত শক্ত করবেন না।
- ক্ষত কেটে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না।
- সাপুরে বা ওঝা দেখিয়ে আপনার সময় নষ্ট করবেন না।
- বমি, মুখে ফেনা বা কথা বলতে অসুবিধা হলে মুখে কিছু দেবেন না।
- কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করে বা অন্য কোনো উপায়ে ক্ষত ঢেকে রাখার চেষ্টা করবেন না।
- কোন পাথর, লালা, পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, কাদা, গোবর, কোন বীজ বা ভেষজ ঔষধ প্রয়োগ করবেন না। সাপের কামড় নির্ণয়ে তারা কিছুই করতে পারে না।
- অ্যালকোহল বা এই জাতীয় কিছু প্রয়োগ করবেন না।
- অ্যাসপিরিন বা কোনো ব্যথানাশক ওষুধ দেবেন না।
- গৃহস্থালীর পণ্য যেমন তেল, ঘি, মরিচ ইত্যাদি প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। এগুলো শুধুই কুসংস্কার।
- আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করুন ।
- চিকিৎসা সেবা পেতে দেরি করে এমন কোনো কার্যকলাপ এড়িয়ে চলুন।
আরও পড়তে