November 24, 2024
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ তিন লক্ষের উপরে মানুষ পানিবন্দি

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ তিন লক্ষের উপরে মানুষ পানিবন্দি

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: তিন লক্ষের উপরে মানুষ পানিবন্দি

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: তিন লক্ষের উপরে মানুষ পানিবন্দি

সারাদেশে ঈদুল আজহার সুখকর মেজাজ থাকলেও সিলেট ও ​​সুনামগঞ্জ জেলার লাখো মানুষ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। আকস্মিক বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। একইভাবে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে, জেলার নিম্নাঞ্চল হিসেবে পরিচিত উপজেলাগুলোতো   পানির নিচে আছেই । ফলে ঈদের আনন্দের বদলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে এ দুই উপজেলার মানুষের মধ্যে।

দুই বছর আগে ২০২২ সালে সিলেট ও ​​সুনামগঞ্জের মানুষ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছিল। দুই বছর পর একই সময়ে তারা আরেকটি ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়। জেলার অধিকাংশ উপজেলা এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে , এ দুই জেলা এখন বছরে ৪-৫ বার ছোট-বড় বন্যার সম্মুখীন হয়। তারা বলছেন, অতিবৃষ্টি, নদীর তলদেশ উপচে পড়া পানি  ও পানি বহন ক্ষমতা হ্রাস, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সড়ক নির্মাণ, পাথর উত্তোলন বন্ধ, বন্যা প্রতিরোধ বাঁধে পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লুটপাট ও অনিয়মই বন্যার কারণ।

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে বয়ে যাওয়ায় সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যার অবনতি হয়েছে। নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। প্লাবিত হয়েছে সিলেট নগরী ও উপজেলার নিম্নাঞ্চল। আজ বুধবার (২০ জুন) সকালে ৪টি নদীর ৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ পানির নিচে রয়েছে বলে জানা গেলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল পর্যন্ত দুই লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরীর প্রায় অর্ধকোটি মানুষ পানিবন্দী।

২০ দিন পর দ্বিতীয় দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট। ২৭ মে সিলেটে একটি প্রাথমিক বন্যা পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। জেলার সব উপজেলার সাড়ে সাত লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার আগেই শনিবার (১৫ জুন) আবারও আঘাত হেনেছে সিলেটে।

রোববার (১৬ জুন) রাতে সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টিতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ জলাবদ্ধ। তবে সোমবার (ঈদের দিন) সকাল থেকেই সিলেটে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। উজান থেকে নেমে আসা স্রোত বইছেই । ফলে সোমবার সকাল নাগাদ প্রায় সব উপজেলায়  চরম বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এছাড়া সিলেট মহানগরীর অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

ঈদের দিন দুপুরের পর বৃষ্টি থামলে মহানগরীতে পানি পড়তে থাকে। তবে মঙ্গলবার ভোর থেকে সিলেটে বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে আজ সকাল থেকে আবারো বাড়তে শুরু করেছে সিলেট মহানগরীতে পানি। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি গতকালের চেয়েও খারাপ। তলিয়ে গেছে নতুন রাস্তা ও ঘরবাড়ি।

দেখা গেছে, মহানগরীর সব নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে শাহজালাল শহরতলির প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেক বাড়ির নিচতলায় ঘাড় পর্যন্ত পানি। জতারপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালীঘাট, কমলগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলা ছাড়াও মহানগরীর অধিকাংশ এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া মহানগরীর অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে আছে। বিমানবন্দর সড়ক, সিলেট-তাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর সড়কসহ বেশ কয়েকটি স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট অফিস জানায়, এ পর্যন্ত সুরমা নদীর কানিঘাট পয়েন্টে পানি সীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর কোল ঘেঁষে সিলেট

বিন্দুতে পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপরে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি লাইন থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার এবং সারিগইন পয়েন্টে পানি লাইনের ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তলিয়ে যাওয়ায় গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার অনেক গ্রামীণ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। অনেক কৃষি জমির ফসল তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে  বুধবার  সকাল ৯টা পর্যন্ত) সিলেটে ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দুই দিন সিলেটে একটানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

এবং ইন্ডিয়া মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের মতে- সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৫ মিলিমিটার। বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সিলেটের নদ-নদীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেট

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঈদের দিন ও রাতে সব উপজেলায় মোট ৫৩৮টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ উপজেলায় ৩৪৩ জন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে ঈদের দিন বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন সিলেট নগরীর কোরবানিদাতারা। অনেকে ভোগান্তি নিয়ে সোমবার পশু কোরবানি দেন। অনেক মানুষ পানি কমার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে মহানগরীতে পানি বাড়ায় তারাও বিপাকে পড়েছেন।

আরও পড়তে

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X