দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের সম্পদের পাহাড়
দুবাইয়ে আবাসন খাতে সম্পদের পাহাড়। পৃথিবীর বিত্তবানরা জমে আছে এসব পাহাড়ে। এদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, অপরাধী, অর্থপাচারকারী ও নিষিদ্ধ ব্যক্তিবর্গ । তালিকায় রয়েছে ৩৯৪ জন বাংলাদেশি। ২০২২সালে তারা দুবাইতে ৬৪১ টি সম্পত্তির মালিক ছিল। এর দাম ২২৫ মিলিয়ন ডলার। তবে এসব বাংলাদেশির নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তালিকায় রয়েছেন ভারতীয়রাও। ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানি তাদের একজন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।
‘দুবাই আনলকড’ শিরোনামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। তদন্তমূলক প্রকল্পটি অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (OCCRP) এবং নরওয়ের e24 দ্বারা সমন্বিত হয়েছিল। এটি Tax Observatory.ট্যাক্স অবজার্ভেটরি ডট ইইউ সহ বিভিন্ন মিডিয়া। এতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে, ৪০৫ বাংলাদেশি দুবাইতে ৬৫৭ টি সম্পত্তির মালিক ছিলেন। এর দাম ছিল ২১ কোটি ১২ লাখ ডলার।
আরও বলা হয় যে সিটি-ওয়াইজ ২০২০-এ ৫৬২ বাংলাদেশি এই ধরনের সম্পদের মালিক ছিলেন। এর মূল্য ছিল ৩৭৫৩ মিলিয়ন। কিন্তু ২০২২ সালে এ ধরনের বাংলাদেশির সংখ্যা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৫৩২ জনে। তাদের সংখ্যা কমে গেলেও সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।
দুবাইয়ে ৩৯৪ বাংলাদেশির ৬২১ বাড়ি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আবাসন খাতে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বিশ্বের বিত্তবানরা। তাদের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকরাও। দুবাইয়ে ২,৬৩৬কোটি টাকার ৬৪১ টি সম্পত্তির মালিক ৩৯৪ বাংলাদেশি।
সম্পত্তির মালিকদের এই তালিকায় বিভিন্ন দেশের বড় ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও রয়েছে। এমনকি বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা, অর্থপাচারকারী এবং অপরাধীরা সেখানে বিপুল সম্পদের মালিক।
মঙ্গলবার একটি বৈশ্বিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্প এই তালিকা প্রকাশ করেছে। ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির পাশাপাশি রয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির পরিবারের সদস্যরাও।
তালিকায় দেখা গেছে, দুবাইতে ভারতীয়দের সম্পদ সবচেয়ে বেশি। সেখানে ২৯ হাজার ৭০০ ভারতীয় ৩৫ হাজার সম্পত্তির মালিক। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানিরা। দেশটির ১৭,০০০ নাগরিক দুবাইতে ২৩,০০০ টি সম্পত্তির মালিক। এর মূল্য ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশি নাগরিকদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে সংবাদে প্রকাশিত মানচিত্রে বাংলাদেশিদের সংখ্যা, সম্পদের পরিমাণ ও দাম দেখানো হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তাদের বিষয়ে একটি পৃথক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে।
অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট এবং নরওয়েজিয়ান মিডিয়া ই-টুয়েন্টি-ফোর এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্পের সমন্বয় করেছে ‘দুবাই আনলকড’। ৫৮ টি দেশের ৭৪টি মিডিয়া এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছে। প্রতিবেদনটি OCCRP-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
দুবাইয়ের ভূমি বিভাগসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ তল্লাশি চালানো হয়। এটি বিশেষ করে ২০২০থেকে ২০২২পর্যন্ত বিদেশীদের সম্পদের মালিকানার একটি বিশদ চিত্র দেয়।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ এই তথ্য সংগ্রহ করেছে। ইনস্টিটিউট আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং সংঘাতের উপর গবেষণা পরিচালনা করে। পরে কোম্পানিটি ই-টোয়েন্টি-ফোর এবং ওসিসিআরপি-র সাথে এই তথ্যগুলি শেয়ার করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ফোর্বসও এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অংশ নেয়। সব মিলিয়ে, ফোর্বস ২২ বিলিয়নেয়ার এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন $৬০০ মিলিয়নেরও বেশি মূল্যের ৭৬ টি সম্পত্তি খুঁজে পেয়েছে। তারা বিশ্বের চারটি মহাদেশের ১০ টি দেশ থেকে এসেছে।
ফোর্বসের প্রতিবেদনের শুরুতেই রয়েছে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির নাম। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ কৃত্রিম দ্বীপে তার আনুমানিক ২৪০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে। দেশের আরেক নাগরিক, এম এ ইউসুফ আলী এবং তার পরিবারের পাম জুমেইরাহ, দুবাই মেরিনা এবং ইন্টারন্যাশনাল সিটিতে $৭০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে।
যুক্তরাজ্য, মিশর, সাইপ্রাসের নাগরিকদেরও দুবাইতে সম্পদ রয়েছে। দুবাইয়ে গোপনে সম্পদ গড়ে তোলার এই তালিকায় দারিদ্র্যপীড়িত ও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অন্তত সাতজন নাগরিকের নামও রয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন রাজনীতিবিদ এবং একজন নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছেন।
পাকিস্তানি দৈনিক ডন জানিয়েছে যে ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, ১৭,০০০ পাকিস্তানি দুবাইতে সম্পদের মালিক। তবে তথ্য ও অতিরিক্ত সূত্র ব্যবহার করে এ সংখ্যা ২২ হাজারের মতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এই তালিকায় নাম রয়েছে রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, বখতাওয়ার ভুট্টো জারদারি এবং আসিফা ভুট্টো জারদারি; মিসেস আশরাফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভির স্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলে হুসেইন নওয়াজ এবং বিতর্কিত সাবেক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ারের ছেলে সাদ সিদ্দিক বাজওয়ার।
দেশটির সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফসহ অনেক সাবেক জেনারেলের সম্পদের কথাও তুলে ধরেছে ডন।
এ ছাড়া তালিকায় চীন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের পাশাপাশি ইয়েমেন, নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার নাগরিকও রয়েছে। সেখানে মিয়ানমারের নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবসায়ীও রয়েছে।
এদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি তালিকায় দেখা গেছে, আমিরাতে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে। শুধুমাত্র ওই বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি থেকে জুন) দুবাই চেম্বার অব কমার্সে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সদস্যতার হার ৪৭ শতাংশ বেড়েছে।
ছয় মাসে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন ১ হাজার ৪৪টি কোম্পানি দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ নিয়েছে। দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ পাওয়া বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন মোট কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭৫। দুবাইয়ে অনেক বাংলাদেশির অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
আরও জানতে
দুবাইয়ে সম্পত্তির শীর্ষ ক্রেতা বাংলাদেশি, ৪৫৯ জনের বিরুদ্ধে রিট