চলতি মাসেই রোহিঙ্গা শিবিরে ১৭ খুন মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে গ্রেনেডসহ ভারী অস্ত্র ঢুকছে বাংলাদেশে
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যার তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। চলতি মাসেই রোহিঙ্গা শিবিরে ১৭ টি খুন। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে গ্রেনেডসহ ভারী অস্ত্র ঢুকছে বাংলাদেশে । হত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক। এতে আতঙ্কিত সাধারণ রোহিঙ্গারা। এ ছাড়া ক্যাম্পের আশপাশের এলাকাবাসীও উদ্বিগ্ন।
সেই সুবাধে আবারও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ভারী অস্ত্র। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইতোমধ্যে বেশ কিছু ভারী অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু ‘মিলিটারি আর্মস’, যেগুলো সাধারণত যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী ব্যবহার করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বুধবার ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আর্গাস গ্রেনেডসহ অস্ত্রের চালান জব্দ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ ঘটনায় মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসার) কমান্ডারসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত চালান থেকে পাঁচটি আর্গোস গ্রেনেড, তিনটি রাইফেল গ্রেনেড, ১০ টি দেশীয় হাতবোমা, ১৩ টি হাতবোমা, একটি বিদেশী রিভলবার, একটি এলজি এবং বিপুল পরিমাণ গানপাউডার ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সেনাবাহিনীর বোমা ডিসপোজাল ইউনিট বিস্ফোরকগুলো নিষ্ক্রিয় করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, অপরাধীদের হাতে এ ধরনের গ্রেনেড পড়া উদ্বেগজনক। কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “আমরা কিছু অস্ত্র পেয়েছি, যেগুলো সাধারণত সামরিক অস্ত্র নামে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে আর্গোস ও রাইফেল গ্রেনেড। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের তথ্য দিয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। সব সংগঠন সেখানে সক্রিয়।
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করতে পারছে না সে দেশের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধ অস্ত্র আসছে বলে খুন হচ্ছে। শুধু এই মাসেই রোহিঙ্গা শিবিরে ১৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে চারজন আরসাবিরোধী রোহিঙ্গা নেতাও রয়েছে।
এপিবিএন জানায়, চলতি বছর এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে হ্যান্ড গ্রেনেডসহ ৪৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৩৫টি মামলায় ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 8 এপিবিএন-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আমির জাফর বলেন, “ভারী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টহল জোরদার করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা যাতে কোনো অস্ত্র ক্যাম্পে আনতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে।”
ক্যাম্পে অবৈধ অস্ত্রের পেছনে একটি আন্তর্জাতিক চোরাচালান নেটওয়ার্ক থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। তারাই মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অস্ত্রের চালান নিয়ে আসছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, কক্সবাজারের ৩২টি ক্যাম্পে মাদক, মানব পাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ ব্যবসা ও দোকান দখলের মতো তুচ্ছ ঘটনায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মে মাসে কমিউনিটি নেতাসহ ১৭ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৪ মে উখিয়ার একটি ক্যাম্পের প্রধান মাঝি মোহাম্মদ ইলিয়াসকে (৪৩) বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে গত ৬ মে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে বাসা থেকে রোহিঙ্গা নেতা জাফর আহমদকে তুলে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডে আরসা জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগের দিন বালুখালীতে রোহিঙ্গা সংহতি সংস্থার (আরএসও) সদস্য নূর কামালকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে, তাই হত্যাকাণ্ডও বেড়েছে।
অস্ত্র-গোলাবারুদসহ গ্রেফতার ৫
৭২ ঘণ্টার অভিযানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় পেশাদার অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত এক নারীসহ ৫ জনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে দুটি ওয়ান শুটার গান (এলজি), ৭৭ রাউন্ড গুলি, ২৪ টি শেল ক্যাসিং, একটি বিদেশী জি-৩ রাইফেল, একটি ম্যাগাজিন এবং ১৫রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এসপি মাহফুজুল ইসলাম এ তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উখিয়ার মাদারবনিয়া এলাকার মোহাম্মদ ছায়েদের ছেলে মোস্তাক আহমদ, তার স্ত্রী লতিফাহ আক্তার, একই এলাকার মৃত নুরুন্নবীর ছেলে কাশেম ওরফে মনিয়া, মহেশখালী উপজেলার মাদারদেল এলাকার অঞ্জু মিয়ার ছেলে রবিউল আলম। এবং নতুন বাজার এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে বেল্লাল হোসেন।