November 24, 2024
অনলাইন জুয়া: মানব ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার

অনলাইন জুয়া: মানব ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার

অনলাইন জুয়া মানব ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার

অনলাইন জুয়া: মানব ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার

এক সময় গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে জুয়ার আসর বসত। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে জুয়ার আধুনিকায়ন হয়েছে। এখন অনেকেই অনলাইন জুয়ায় হাজার হাজার টাকা হারাচ্ছেন। কলেজের ছাত্র থেকে শুরু করে বেকার যুবকরাও নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অনলাইন জুয়ায়।

নিঃস্ব হওয়ার পর একজনের শেষ উপায় আত্মহত্যা। গ্রামগঞ্জে নেশা হয়ে উঠেছে এই অনলাইন জুয়া। অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, জুয়ার বিরুদ্ধে সরকারের কোনো কঠোর আইন নেই।

প্রযুক্তির ব্যবহার যেখানেই হোক না কেন এই জুয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি ডলারের লেনদেন হয়। অপরাধীদের পাশাপাশি জুয়ার নেশা ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত মানুষের মধ্যে। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে অনলাইন বেটিং-এর মরণ খেলায় জড়িয়ে পড়ছে বহু শিক্ষার্থী। জুয়ার নেশায় অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছেন। কেউ আবার বেছে  নিচ্ছে  আত্মহত্যার পথ। এমনকি প্রভাবশালী পরিবার, পাবলিক সেলিব্রিটিরাও জড়িয়ে পড়ছেন এই অনলাইন জুয়ায়। অনলাইন জুয়ার কারণে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে এই ‘অপরাধী খেলা’।

তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান একটি অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে মন্ট্রিল টাইগার্সের হয়ে খেলেছেন সাকিব। সেই দলের অফিসিয়াল পার্টনার ছিল অনলাইন জুয়া সাইট ‘বাবু৮৮’। ২০২২ সালে, সাকিব আল হাসান বেটউইনার নিউজের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হন, একটি অনলাইন জুয়া সাইট Betwinner-এর একটি অনুমোদিত সংস্থা। এখানেই শেষ! গত বছর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ছোট বোন জান্নাতুল হাসান ‘‘১১রিপশবঃ.পড়স’ ‘ নামে একটি অনলাইন বেটিং অ্যাপে বিনিয়োগ করেছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তদন্তে এই চিত্র উঠে এসেছে।

অলরাউন্ড ক্রিকেটারের বোন জান্নাতুল হাসানের মতো দেশের হাজার হাজার শিশু অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। কৌতূহল থেকে এই অনলাইন জুয়া শুরু করা কেউ এখন পেশাদার জুয়াড়িতে পরিণত হয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন যে অনলাইন জুয়া অপরাধের তুলনায় ক্যাসিনো, সাধারণ জুয়ার মতো অপরাধগুলি কিশোর অপরাধ।

সারা দেশে অনলাইন জুয়ার এই ডিজিটাল অপরাধ শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই এই অনলাইন জুয়ার অপরাধে জড়িত। এতে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।

অনলাইন জুয়ার অপরাধ সমাজে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কৌতূহলী যুবক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের লোকেরা বিভিন্ন জুয়ার সাইটে আকৃষ্ট হয়। অনলাইন জুয়ায় প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা লেনদেন হয়। সাধারণ মানুষ ৫-১০ হাজার টাকা নিয়ে জুয়া শুরু করে এবং লোভে পড়ে লাখ লাখ টাকা হারায়। নেশাগ্রস্তদের অনেকেই ধার-দেনা করে জুয়ায় হেরে আত্মহত্যা করছে। যথাযথ আইন ও তথ্যের অভাবে অনলাইন জুয়ায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জুয়ায় আসক্তি ও সর্বস্ব হারানোর কারণে পারিবারিক কলহ ও দাম্পত্য কলহ বাড়ছে। জুয়া খেলার টাকা জোগাড় করতে কেউ কেউ খুন, ডাকাতি, চুরি, ডাকাতি, দস্যুবৃত্তির আশ্রয় নিয়েছে। যুবক-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ধনী-গরিব, ব্যবসায়ী, ছাত্র, দিনমজুর, শিক্ষিত বেকার, যারা এই মাদকে আসক্ত নয়। আবাসিক হোটেল, বাড়ি, রেস্ট হাউস, গেস্টহাউস থেকে শুরু করে ভাতের হোটেলেও চলছে অনলাইন জুয়ার আসর।

বেশিরভাগ অনলাইন জুয়া সাইট রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের এজেন্টরা বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব সাইট পরিচালনা করছে।

বর্তমানে দেশে ডলার সঙ্কট যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, তখন জুয়ায় বিনিয়োগ করে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। জুয়াড়িরা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং, নগদ, রকেট এবং অন্যান্য মাধ্যমে লেনদেনের জন্য অর্থ প্রদান করছে। অনলাইন জুয়ায় ছোট বাজির টাকা দিন শেষে বড় অঙ্কে পরিণত হয় এবং প্রতিদিন ডলারের মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার হয়। বিদেশে বসে গ্যাম্বলিং অ্যাপের নিয়ন্ত্রকেরা বাংলাদেশে নিযুক্ত স্থানীয় সিন্ডিকেট ও এজেন্টদের মাধ্যমে ডলারে এই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বাংলাদেশীরা প্রতিদিন ৩০০ টি সাইটে অনলাইনে জুয়া খেলছে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ইউরোপিয়ান ফুটবল লিগ, ক্রিকেট লিগসহ বিভিন্ন খেলায় বাজি ধরার ব্যবস্থা আইসিসির রয়েছে। যে কেউ চাইলে অনায়েসে ক্যাসিনো খেলতে পারে। ওয়েবসাইট ছাড়াও তাদের মোবাইল অ্যাপও রয়েছে। সাধারণ দৃষ্টিতে, এটি একটি সাধারণ অনলাইন জুয়া খেলা। কিন্তু একটু গভীরে গেলে বোঝা যাবে জুয়া খেলার নামে বিদেশে অর্থ পাচারের এ এক অন্য উপায়। দেশে ও দেশের বাইরে হুন্ডি ব্যবসার প্রচলন লক্ষ্য করা গেলেও অনলাইনভিত্তিক জুয়া খেলার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অর্থ পাচার হচ্ছে। কারণ, এসব অনলাইন ব্যবসা পরিচালনায় মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়।

সূত্র মতে, প্রতিটি ওয়েবসাইট এক বা একাধিক অ্যাডমিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তারাই মূলত এসব জুয়া খেলার নিয়মিত অংশগ্রহণকারী। অনলাইনভিত্তিক এসব অনুষ্ঠান বন্ধে কার্যত কোনো প্রশাসনিক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নজরদারি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন অভিভাবকরা। এসব অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করার জরুরি দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা। আর তা না হলে অধিকাংশ যুবক জুয়ায় আসক্ত হয়ে টাকা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে।

আরও জানতে

বাংলাদেশে ব্যবহৃত ৯০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X