November 21, 2024
রাজনীতি ধ্বংসের পথে, অর্থনীতি ঠিক থাকবে কীভাবে: সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ

রাজনীতি ধ্বংসের পথে, অর্থনীতি ঠিক থাকবে কীভাবে: সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ

রাজনীতি ধ্বংসের পথে, অর্থনীতি ঠিক থাকবে কীভাবে: সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ

রাজনীতি ধ্বংসের পথে, অর্থনীতি ঠিক থাকবে কীভাবে: সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ

দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। শনিবার বিকেলে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “শুধু অর্থনীতির কথা বললে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে না। রাজনীতি এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা। রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক থাকবে না। দেখতেই পাচ্ছেন, ভয়ানক পরিস্থিতি। যদি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঠিক না হয় , অর্থনীতি ঠিক হবে না।রাজনীতিটা মেইন।’

অর্থনীতির এই টেকনিক্যাল কথা-বার্তা, গ্রোথ রেইট ৫ পয়েন্ট হলো না ৭ হলো, তারপরে ইনফুয়েশন ৮ দশমিক ২ হলো না ৮ দশমিক ৩ হলো এগুলো ভেতরে কচকচালি করলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। মূল সমস্যা হলো যে, আমাদের ইন্সটিটিউশনগুলো ধবংস হয়ে গেছে, রাজনীতিটাও অনেকটা ধবংসের পথে এবং সেখানে অর্থনীতি কিভাবে ঠিক থাকবে?’

সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ,‘যে রাজনীতিতে ছাত্র জীবন পজেটিভ রাজনীতি, ভালো রাজনীতি, মানুষের কল্যাণে রাজনীতি যদি না করেন, তবে কিন্তু ভবিষ্যতে ভালো মানুষও হবেন না। ভ্যালুজ কিছু থাকতে হয়। আমাদের সময়ে কিছু ভ্যালুজ ছিল, মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের তো ছিলই। সৎভাবে জীবন-যাপন করেছেন, অনেক কিছু হতে পারতেন।’

‘আমরাও করেছি, আমার বন্ধু আলমগীর (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) ও সৎভাবে জীবন-যাপন করেছেন। একেবারে করেছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে ভ্যালুজগুলো বারে বারে তাড়া করত। এখনো আমাদেরকে এটা তাড়িত করে। মানুষের জন্য চিন্তা, সাধারণ মানুষের জন্য চিন্ত, এসব চিন্তার জন্য এখনো আমাদের তাড়িত করে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহফুজ উল্লাহর লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ প্রকাশ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৫৯২ পৃষ্ঠার এই ট্র্যাক্টটি প্রকাশ করেছে ‘বাঙ্গালা রিসার্চ’।

এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, নাজমুল হক নান্নু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, ভাসানী আনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রোতা এবং আলোচনা শুনতে. প্রকৌশলী, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর ছোট ভাই প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান।

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, “দেশ আজ কঠিন সংকটে। এই সংকট থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়, সন্দেহ নেই, ৮/১০টি দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখে আমরা বিচার করতে পারি না। আমাদের পথ বেছে নিতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে। ১৯০৫ সালে রাশিয়ায় সংঘটিত পাঠ্য বিপ্লবের পর, লেলিন বলেছিলেন, “এখন আমাদের প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে কাজ করতে হবে, এটি সেই সময়ের জন্য একটি নিখুঁত কৌশল ছিল, যে কারণে ১৯১৭ সালে (রাশিয়ান বিপ্লব) হয়েছিল।” আমাদের তাদের বুঝতে হবে।

তবে এই মুহুর্তে আমাদের লক্ষ্য খুব সীমিত। লক্ষ্যটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, যেই বাংলাদেশে আমরা কথা বলতে পারব, মুক্তভাবে আমাদের মত প্রকাশ করতে পারব এবং আমাদের দেশের যে সার্বভৌমত্ব যেটা নানা কারণে সেটা কমপ্রোমাইজড হচ্ছে, আমি যেটাকে বলি‘নিম সার্বভৌম অবস্থা’ সেই নিম সার্বভৌম অবস্থা থেকে কিভাবে মুক্তি পাব, এই সব কিছু নিয়ে আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং শুধু চিন্তার মধ্যেই নিবিষ্ট থাকলে হবে না আমাদেরকে পথ বের করে নিতে হবে, আমাদের সেই পথে চলতে হবে। সেই পথ হচ্ছে সংগ্রামের, সেইপথ হচ্ছে আত্মদানের, সেই পথ হচ্ছে মানুষকে ভালোবাসার, দেশকে ভালোবাসার। আজকে আমরা যদি সবাই সেই স্বাধীনতার মঞ্চে, দেশকে ভালোবাসার মঞ্চে, সাধারণ মানুষের জীবন সামান্য স্বস্তি আনার যে সংগ্রাম সেখানে যদি আমরা কিছু অবদান রাখতে পারি সেটাই যথেষ্ট।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং ব্যাংককের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন দেশের বর্তমান ভোট ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা তরুণ বয়স থেকেই এই বাংলাদেশ দেখে আসছি। ভোটের দিনটি ছিল উৎসবের দিন। আমি ১৯৫৪ সালে তরুণ ছিলাম, কিন্তু যুক্তফ্রন্টে্র নির্বাচনের  কিছু কথা আমার সামনে মনে আছে।” আমার বাবা ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। আমরা তো ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ভোটের দিন দেখতাম, এখন তা কীভাবে হারিয়ে গেল?’

“আমি নিজে ২০১৮ সালে ভোট দিতে কেন্দ্রে প্রবেশ করছিলাম। আমার স্ত্রীও আমার সাথে ছিলেন। বলছিলেন বিএনপিকে ভোট দিতে চাইলে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করবেন না। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। কোথায় আমাদের সাধনা, সংগ্রাম। , আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কি সেই সময়ে বিরল ছিল সেই ইতিহাসের এই জিনিসগুলো আজকে হারিয়ে যাচ্ছে যা মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের বইতে আছে।’

‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ফলেই বর্তমানে রাজনৈতিক ও ভোট ব্যবস্থায় এই দুরাবস্থা’ বলে মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X