লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগে বাংলাদেশ
দেশে চলমান লোডশেডিং এর কারণে সর্বত্র অস্থিরতা বিরাজ করছে। গরমের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। তাই চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতির কারণে বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকায় লোডশেডিং কম হলেও গ্রামগঞ্জে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল বিকেল ৩টায় সারাদেশে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ এ হিসাব দিলেও প্রকৃত লোডশেডিং বেশি বলে মনে করছেন খাত বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, রেকর্ড বিদ্যুত উৎপাদনের দিনেও (২২ এপ্রিল) সারা দেশে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে গড়ে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল। ঈদুল ফিতরের পর কয়েকদিন চাহিদা কম থাকায় সাময়িক স্বস্তি পাওয়া গেলেও গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে লোডশেডিং। গত কয়েকদিনে তা চরম আকার ধারণ করেছে।
দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। ফলে ঘাটতি মেটাতে প্রতিনিয়ত লোডশেডিং হচ্ছে। তবে ঢাকার তুলনায় তা অনেক কম।
অন্যান্য শহর ও গ্রামাঞ্চলে চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ করা হচ্ছে না। এতে সারাদেশে চরম লোডশেডিং হয়েছে।
গরমের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, এ এলাকার শেরপুর, নেত্রকোনা, জামালপুর জেলায় চাহিদার তুলনায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। ময়মনসিংহ এলাকায় ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে যা গতকাল ছিল ১১০০ মেগাওয়াট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণে এ লোডশেডিং হচ্ছে।
বুধবার বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা নদীতে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের স্থান পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। তবে তাপপ্রবাহ কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
লোডশেডিং বাড়ার কারণ কী জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন গতকাল বলেন, গ্যাস সরবরাহের কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ কম হচ্ছে। তিনি বলেন, এক জায়গায় যাতে বেশি লোডশেডিং না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ময়মনসিংহ এলাকায় লোডশেডিং সঞ্চালন লাইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে আরও এক বছর সময় লাগবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি তেলের অভাবে বা আমদানি করতে না পারায় গত দুই বছরে গ্রীষ্মকালে লোডশেডিং বেড়েছে। গ্রামে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হলেও শহরে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের অভিযোগ গ্রাহকদের। এবারও এমন পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকার দুই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকো জানিয়েছে, সরবরাহ ঘাটতির কারণে লোডশেডিং হচ্ছে না। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিভিন্ন সময়ে কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সূত্রে জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না তারা। তাই বিতরণে ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকটি স্থানে তুলনামূলকভাবে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের অভিযোগ ক্রেতাদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নীতিনির্ধারণী সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহে রাজধানীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা শহরের পিক আওয়ারে, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় প্রায় ৩,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। আর রাজধানীর বাইরে ঢাকার অন্যান্য জেলায় চাহিদা প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট। অন্য কথায়, শুধুমাত্র ঢাকা বিভাগেই বর্তমানে পিক আওয়ারে প্রায় ৫,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। রেকর্ড উৎপাদনের সময় ঢাকায় তেমন লোডশেডিং ছিল না। যাইহোক, ফিডারে, বিশেষ করে ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা কিছুটা বেশি হতে পারে। তাই ঢাকায় তখন কিছুটা লোডশেডিং ছিল।
পিজিসিবি জানায়, বুধবার চাহিদার তুলনায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়েছে। ময়মনসিংহ এলাকায় সর্বোচ্চ ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। ওই দিন রংপুর বিভাগে ১৩৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। তখন সর্বোচ্চ উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৪৯২ মেগাওয়াট।