তাপপ্রবাহ কমছে না, বাড়ছে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু
এক সপ্তাহ ধরে তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের প্রায় সব জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে। রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবস্থাও কাছাকাছি। আগামী তিন দিনে এ অবস্থা থেকে উন্নতির কোনো পূর্বাভাস নেই।
বরং তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সিলেট বিভাগ আপেক্ষিক স্বস্তিতে রয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুরে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় তাপপ্রবাহ কিছুটা সহনীয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র ইশতিয়াক ওয়ারেশ তূর্য মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে তিনি মারা যান। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে তার স্বজনদের ধারণা।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও জনসংযোগ দফতরের উপ-পরিচালক আসিফ বিন আলী এ তথ্য জানান।
এদিকে হিট স্ট্রোকে রাজধানী ঢাকা ও জামালপুরে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর বৃষ্টির আশায় ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গায় নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। আর হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
অন্যদিকে টানা দুই দিন তাপমাত্রা কমার পর আবারও বেড়েছে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আজ বাড়তে পারে। গত শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সেদিন রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি। দুই দিন পর তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি। মঙ্গলবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু তাপ ৪০ ডিগ্রির মতো অনুভূত হয়েছিল। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, আগামী কয়েকদিন অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পের কারণে জনজীবনে অস্বস্তি হতে পারে। নিম্নচাপের অতিরিক্ত অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কাছে অবস্থিত। এ কারণে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের বাকি অংশ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে প্রচণ্ড গরমে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলিস্তানের রাস্তায় এবং জামালপুরে বাড়িতে হিটস্ট্রোকে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে আলমগীর শিকদার নামে এক ব্যক্তি হানিফ ফ্লাইওভার ব্রিজ দিয়ে বাসে করে গুলিস্তানে নামেন। সেখান থেকে রাস্তায় হাঁটার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। লোকেরা তাকে দেখে প্রথমে তার মাথায় পানি ঢেলে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চারটি নির্দেশনা
দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহে সবাই হাঁপিয়ে উঠছে। এর ফলে একদিকে যেমন অস্বস্তি বাড়ে, তেমনি বেড়ে যায় হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোকের ঝুঁকি। আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, এই পরিস্থিতি থেকে তাৎক্ষণিক কোনও ত্রাণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সুস্থ থাকতে সতর্কতার বিকল্প নেই। নির্দেশনা হল তীব্র তাপ থেকে দূরে থাকা এবং মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়া; প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করা । হেপাটাইটিস এ, ই, ডায়রিয়া সহ মারাত্মক পানিবাহিত রোগ এড়াতে প্রয়োজনে রাস্তার খাবার ও পানীয় পরিহার করা এবং একাধিকবার গোসল করা; গরম আবহাওয়ায়, ঢিলেঢালা, পাতলা এবং হালকা রঙের পোশাক পরুন, সম্ভব হলে গাঢ় রঙের পোশাক এড়িয়ে চলা। এছাড়াও, ঘাম বন্ধ হওয়া, বমি বমি ভাব, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, প্রস্রাব কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, খিঁচুনি এবং গরম আবহাওয়ায় অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার দাবি
বীর মুক্তিযোদ্ধা, অভিভাবক ইউনিয়ন ফোরামের সভাপতি মো. তীব্র গরমে আবারও স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ না করে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন জিয়াউল কবির দুলু। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
এতে বলা হয়, সারাদেশে প্রবল তাপপ্রবাহের কারণে এবং সরকার তাপ সতর্কতা জারি করায় অভিভাবক ঐক্য ফোরাম দেশের সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সাত দিনের জন্য বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করলেও আবারও কিছু জায়গায় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে আরও এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং হিট স্ট্রোক এড়াতে অভিভাবকদের অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি মনে করেন যে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধের সময় শিক্ষার ঘাটতি পূরণে অনেক সাহায্য করবে।