কমছেই বাংলাদেশের রিজার্ভ: নানা উদ্যোগেও হচ্ছেনা কোন কাজ
কিভাবে রিজার্ভ তৈরি করা হয়?
রেমিটেন্স, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে প্রাপ্ত ডলার দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা ছাত্রশিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয় তার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর অবশিষ্ট ডলার রিজার্ভে যোগ করা হয়। আর খরচ বেশি হলে রিজার্ভ কমে যায়।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলারের সংকট চলছে। নানা উদ্যোগ নিয়েও এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। যে হারে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয় সে হারে রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয় আসছে না। ফলে আমদানির চাহিদা মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় বাজারে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ ক্রমাগত শুধু কমছেই ।
সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তারপরও সংকটের সমাধান হয়নি। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বাজার নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ থেকে ক্রমাগত ডলার বিক্রি করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪৫ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, বিপিএম-৬ অনুযায়ী ৬ মার্চ রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১১৫ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪৫ মিলিয়ন ডলারে। অন্য কথায়, বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২১ দিনে ১৬৯ মিলিয়ন ডলার কমেছে।
অন্যদিকে, ৬ মার্চ গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৬৩৪ মিলিয়ন ডলার। গতকাল ২৭ মার্চ রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৮১ মিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে রিজার্ভ কমেছে ১৫২ মিলিয়ন ডলার।
কিন্তু এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব আছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ব্যয়যোগ্য রিয়েল রিজার্ভ এখন প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের এই রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে।
সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকা উচিত। বাংলাদেশ এখন সেই মানদণ্ডের তলানিতে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হল এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে কয়েকটি শর্তে বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। বাংলাদেশ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছে।
আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কারের পাশাপাশি আইএমএফ ঋণ দেওয়ার সময় বেশ কিছু শর্তও অন্তর্ভুক্ত করে। শর্ত অনুযায়ী, গত জুন শেষে নেট রিজার্ভ থাকা উচিত ছিল ২ হাজার ৪৪৬ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু তখন তা ছিল ২ হাজার ৪৭ মিলিয়ন ডলার।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংসদ নির্বাচনের পর রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের শর্ত পূরণ করা সম্ভব হবে। এই প্রেক্ষাপটে আইএমএফ রিজার্ভ বজায় রাখার শর্ত শিথিল করেছে।
আইএমএফের নতুন শর্ত অনুযায়ী গত ডিসেম্বরে প্রকৃত রিজার্ভ ১ হাজার ৭৭৮ বিলিয়ন ডলার রাখতে হবে। মার্চে তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৯২৬ মিলিয়ন ডলার এবং জুনে ২ হাজার ১০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলারের মতো ক্রয় করেছে, যার পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে গত অর্থবছর ২০২২-২৩ তে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। আর আগের অর্থবছরে ডলার বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
ডলার সংকট নিরসনে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কারেন্সি সোয়াপ কার্যক্রম শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আওতায় সঙ্কটে থাকা কয়েকটি ব্যাংক প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন ডলার রেখে ১৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি তারল্য সহায়তা নিয়েছে। জমাকৃত ডলার মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ করা হয়। এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আকুসহ আমদানি বিল পরিশোধের চাপে চলতি মাসে রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে।
বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়
ডলার সংকট নিরসনে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কারেন্সি সোয়াপ কার্যক্রম শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আওতায় প্রায় ১৭৫ কোটি (১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) ডলার রেখে ১৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি তারল্য সহায়তা নিয়েছে সংকটে থাকা কয়েকটি ব্যাংক। জমাকৃত ডলার মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ করা হয়। এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আকুসহ আমদানি বিল পরিশোধের চাপে চলতি মাস থেকেই রিজার্ভ ক্রমাগত কমছেই।