বাংলাদেশি কূটনীতিকদের গ্রহণ করতে চাচ্ছেনা বাহরাইন
বাহরাইন
বাহরাইন মধ্যপ্রাচ্যের একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বীপরাষ্ট্র। বাহরাইন পারস্য উপসাগরের পশ্চিম অংশে ৩৬ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এর পূর্বে কাতার এবং পশ্চিমে সৌদি আরব। বৃহত্তম এই দ্বীপটি বাহরাইন নামেও পরিচিত এবং এটি দেশের বৃহত্তম শহর এর রাজধানী মানামা।
বাহরাইনের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ সেখানেই জন্ম-নেওয়া। । এছাড়া বাহরাইনে শিয়া মুসলমানের সংখ্যা সুন্নি মুসলমানদের প্রায় দ্বিগুণ। তবে বাহরাইনের সরকার নিয়ন্ত্রণ করে সুন্নিরা ।
বাহরাইন ১৯৩০-এর দশকে পারস্য উপসাগরে প্রথম তেল-ভিত্তিক অর্থনীতি গঠন করে, যদিও ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক, দেশটি অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত ছিল বাহরাইন, এবং দেশের অর্থনীতি এখনও সমৃদ্ধ হচ্ছে। বাহরাইন দিনার বিশ্বের দ্বিতীয় দামি মুদ্রা।
একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের কাঠামো রয়েছে বাহরাইনে । বাদশাহ শেখ হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা সরকার পরিচালনার জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ করেন। বাহরাইনের আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। নিম্নকক্ষের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। উচ্চকক্ষ বা শূরা পরিষদের সদস্যরা রাজা কর্তৃক নিযুক্ত হন। বর্তমানে খলিফা ইবনে সুলমান আল-খলিফা দেশটির প্রধানমন্ত্রী। যুবরাজ শেখ সালমান বাহরাইনের সেনাবাহিনীর কমান্ডার।
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের গুরুত্ব
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাহরাইনের সাথে ৬ ই জুন ১৯৭৪ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করে। উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে মানামাই প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির অনেক মিল রয়েছে। উভয় দেশই ১৯৭১ সালে (একই বছর) স্বাধীনতা লাভ করে। বাহরাইন ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস উদযাপন করে, বাংলাদেশ একই দিনে বিজয় দিবস উদযাপন করে। ১৯৮৩ সালে বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাস খোলা হয়। দুই দেশ ২০২৪ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে। বাহরাইনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণও সন্তোষজনক। দুই দেশের মধ্যে প্রায় চার কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য। দেশে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। ২০২২ সালে, প্রবাসীরা বাহরাইন থেকে প্রায় ৫৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (রেমিটেন্স) পাঠিয়েছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাহরাইন অন্যতম। ২০১৮ সালে, বাহরাইনে একজন ইমামকে হত্যার পর বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য কাজের ভিসার উপর একটি অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বাংলাদেশের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করছে না বাহরাইন। যদিও মানামায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পদটি প্রায় ৬ মাস ধরে শূন্য রয়েছে। কাউন্সেলর পদমর্যাদার একজন কূটনীতিক মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশটির রুটিন ডিউটির দায়িত্বে থাকেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করার জন্য বাহরাইনকে রাজি করাতে, মানামায় রাষ্ট্রপ্রধানের অফিস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়েছে। দিল্লিতে বাহরাইন মিশনের মাধ্যমেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনা করা হয়। কিন্তু না, প্রস্তাবিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করার জন্য মানামা থেকে কোনো ইতিবাচক সংকেত পাওয়া যায়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নতুন কাউকে রাষ্ট্রদূত করার কথা ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা।
সেগুনবাগিচা সরকারি সূত্র বলছে, রাষ্ট্রদূত গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান আয়োজক দেশের একক সার্বভৌম সিদ্ধান্ত। এখানে প্রস্তাবকারী রাষ্ট্রের অনুরোধ বা দাবি ছাড়া আর কিছুই করার নেই। একটি রাষ্ট্রদূতের অভিপ্রায় পত্র পাঠানোর পর সর্বনিম্ন দুই মাস থেকে সর্বোচ্চ ৩ মাস অপেক্ষা করা সাধারণত প্রচলিত আছে। যদি আয়োজক দেশ এটাতে ‘হ্যাঁ’ (সম্মতি) না বলে, তাহলে ধরে নিতে হবে যে প্রস্তাবিত দূতকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে রেস্ট্রিকশন আছে।
সেক্ষেত্রে জানার ও বোঝার চেষ্টা করা হয় । অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করা হয়, যদি তারা গুরুতর না হয় তবে আপত্তিগুলি কাটিয়ে উঠতে পাল্টা বর্ণনা পাঠানো হয়। যেমনটি গত বছরের শুরুর দিকে ভিয়েনায় হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রস্তাবিত একজন বাংলাদেশি কূটনীতিককে রাষ্ট্রদূত হিসেবে গ্রহণ করেনি ভিয়েনা।
মানামার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন দাবি করে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বাহরাইনে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূত খোরশেদ আলম খাস্তগীর গত সেপ্টেম্বরে চলে গেছেন। সেই হিসাবে, ধারণা করা হয়েছিল যে ডিসেম্বরের মধ্যে তার এগ্রিমো পরিষ্কার হয়ে যাবে। দেশের দ্বাদশ নির্বাচনের ডামাডোলে সে সময় কেটে গেছে। নির্বাচনের পর ঢাকা অপেক্ষা করছিল কখন নতুন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু আসেনি। পরে এ নিয়ে যোগাযোগ শুরু হয়। এক পর্যায়ে মানামার আপত্তি ওপেন-সিক্রেট হয়ে যায়।
অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রস্তাবিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সম্পর্কে মানামা কী ধারণা দিয়েছেন জানতে চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, তারা কোনো কারণ জানাননি। তারা এটা বলতে বাধ্যও নয়। ঢাকা মনে করে মানামা কোনো কারণে খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে পছন্দ নাও করতে পারে। হয়তো তারা কোথাও থেকে তার সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ না করার এটাই প্রথম ঘটনা। এটি অনেক বছর আগে সৌদি আরবে ঘটেছিল বলে রেকর্ডে রয়েছে।