November 22, 2024
৮৭% ধনীরা আয়কর দেয়না

৮৭% ধনীরা আয়কর দেয়না

৮৭% ধনীরা আয়কর দেয়না

৮৭% ধনীরা আয়কর দেয়না

কর দুই প্রকার
১. প্রত্যক্ষ কর ২. পরোক্ষ কর
  • ১. প্রত্যক্ষ করঃ- সরাসরি আয় থেকে যে কর দেওয়া হয় তাই হলো প্রত্যক্ষ কর ।
  •  ২. পরোক্ষ করআর পন্যের সাথে সরকারি ভাবে যে ভ্যালু  টেক্স এডেড=মূল্য সংযোজন কর  ভ্যাট) যোগ করে জনগণ থেকে এবং সাধারণ মানুষ থেকে গোপনভাবে কর নেয়া হয় তাহলে পরোক্ষ কর । 

যে দেশে প্রত্যক্ষ কর ধনীরা দিতে ফাঁকিবাজি করে সে দেশে সাধারণ জনগণের উপর কর এর চাপ বেড়ে যায় এবং সেখানে নিষ্পেষিত হয় সাধারণ জনগণ আর এই  ভ্যাট  এর কারণেও  দ্রব্যমূল্যের দাম প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়।  যা অকর্মণ্যতা ও অযোগ্যতার কারণে বহু বছর যাবত ঘটেই চলছে বাংলাদেশে । দেশের ৮৭ শতাংশ ধনী ও উচ্চ মধ্যবিত্ত মানুষ কোনো আয়কর দেন না, যা খুবই অগ্রহণযোগ্য। এই পরিস্থিতির সমাধান বের করতেই হবে।

বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ৮৭ শতাংশ ধনী ও উচ্চ মধ্যবিত্ত আয়কর দেন না। তারা বলছেন, কর প্রশাসনের অদক্ষতা ও কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে তারা এ কর ফাঁকি দিচ্ছেন। এ কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কখনই কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না।

এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে অর্থনৈতিক সমিতি জানিয়েছে, এ দেশে ১৮ লাখ মানুষ কর দেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ সরকারি চাকরি ও অন্যান্য চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছে। আমাদের মতে, দেশে ধনী ও উচ্চ মধ্যবিত্তের মধ্যে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা হবে ৯-১০ লাখ। এ সংখ্যা ৭৮ লাখ ৩২ হাজার হওয়ার কথা। এর মানে হল ৮৭ শতাংশ ধনী এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত কোন আয়কর দেয় না।

অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আইনুল ইসলাম বলেন, গবেষণায় আমরা সেই তথ্য পেয়েছি৷ এদেশের মানুষ এমনিতেই আয়কর দেওয়ার প্রতি ঝোঁক কম। আর উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের মধ্যে তা আরও কম। ৮৭ শতাংশ যারা পরিশোধ করেন না তাদের কাছ থেকে আয়কর আদায় করতে পারলে রাজস্ব ঘাটতি থাকত না।

এনবিআর কখনই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না। IMF ঋণের অন্যতম শর্ত হল রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। কিন্তু চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়েছে এনবিআর। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ায় তা এখন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায়।

অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল ২৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এ প্রেক্ষাপটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমলেও শেষ পর্যন্ত তা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশে, প্রত্যক্ষ কর মোট করের ৩০ শতাংশ, এবং বাকি ৭০ শতাংশ পরোক্ষ। এই পরোক্ষ করের বোঝা বেশির ভাগই দেশের সাধারণ মানুষের ওপর।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রত্যক্ষ কর সবার উপরে থাকা উচিত। সেটা হল আয়কর। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির আয়ের উপর। কিন্তু বাংলাদেশে ঘটছে তার উল্টোটা। এবং এখানে কর জিডিপি অনুপাত এখনও প্রায় ১০ শতাংশ – যা  এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান অর্থনৈতিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.আবুল বারাকাত বলেন, মানুষ কোটি কোটি টাকা সিন্দুকে রেখে দিচ্ছে। পরে অভিযান চালিয়ে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেকের বাসা থেকে টাকা ভর্তি বুক উদ্ধার করা হয়েছে। এখন ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ৮৭ শতাংশ ধনী ও উচ্চ মধ্যবিত্ত আয়কর দেন না। আমি জরিপ করিনি যে সংখ্যা ভাগ হবে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা হল যে অধিকাংশই তা করে না।

অধ্যাপক মোঃ আইনুল ইসলাম বলেন, আয়কর ফাঁকি দেওয়া ধনী ব্যক্তিরা ব্যাংকে টাকা থাকলেও তা দেখান না। আর এ জন্য ব্যাংক ও এনবিআরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা তাদের সুবিধা বিনিময়ে সহায়তা করেন। এবং তারা তাদের আয়ের একটি অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে রেখে তা দেশের বাইরে পাচার করে। তবে এটি সনাক্ত করা খুব কঠিন কাজ নয়। বিভিন্ন টুলস আছে, যেগুলো ব্যবহার করেই শনাক্ত করা যায়। এনবিআর এখানে আগ্রহী নয়। আর যারা ফাঁকি দেয়, তারা অনেক দিক দিয়েই চালাক ও চতুর।

তার মতে, দেশে যাদের টিআইএন নম্বর আছে তাদের সবার কাছ থেকে কর আদায় করা গেলেও কোনো কমতি নেই। তা না করে এনবিআর পরোক্ষ কর বাড়ায়। নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের ওপর এ কর দিতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। আর যারা ধনী তারা রেহাই পায়।

এ জন্য দেশে কর কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে ইকোনমিক সোসাইটি। যেখানে ট্যাক্স বোঝে এমন জ্ঞানী মানুষ থাকবে। তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লেনদেন ডিজিটাল করার পরামর্শ দিয়েছেন। আর এনবিআর ওই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হলে প্রত্যেকের আয়-ব্যয়ের তথ্য পাবে, শনাক্ত করতে পারবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশে বছরে কোটি টাকা আয় করে ৬৭ শতাংশ লোক করের নাগালের বাইরে। তারা বড় করদাতা ইউনিটগুলির মধ্যে নয়, তারা সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু তাদের উপর কর আরোপ করা যাবে না।

বদিউর রহমান বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র সুষ্ঠু না হলে ধনীদের কাছ থেকে আয়কর আদায় করা সম্ভব নয়। তারা চালাক হওয়ায় রাষ্ট্রযন্ত্রেও তারা জড়িত। তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দেশে গ্রাম পর্যন্ত এখন বহু লোক গাড়ি-বাড়ি হাঁকায়, কিন্তু তারা আয়কর দেয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X