গোলাগুলিতে কেঁপে উঠছে সেন্টমার্টিন শাহপরীর দ্বীপ
শাহপরীর দ্বীপ-
শাপরী বা শাহপরীর, নাফ নদীর মুখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত একটি দ্বীপ। প্রথম অ্যাংলো-বর্মী যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা দ্বীপটি দাবি করেছিল। শাহপরী দ্বীপ হল টেকনাফের সর্ব দক্ষিণের স্থলবেষ্টিত দ্বীপ, যা টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন ঘেঁষে এবং টেকনাফ উপজেলার উপদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। শাহপরী দ্বীপের বাম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নাফ নদী যা বাংলাদেশকে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
স্বাধীনতার আগে শাহপরী দ্বীপের আয়তন ছিল প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে ১০ কিলোমিটার। বর্তমানে এটি দৈর্ঘ্যে ৪ কিমি ও প্রস্থে ৩ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। বর্তমানে এই দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।
যোগাযোগ:
সড়কপথে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৮৯ কিলোমিটার এবং টেকনাফ থেকে শাহপরী দ্বীপের দূরত্ব ১৩.৭০ কিলোমিটার।
সেন্ট মার্টিন-
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম অংশে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ছোট দ্বীপ। সেন্টমার্টিন স্থানীয় ভাষায় নারকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত। দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রের নীল জলের সাথে নীল আকাশ, সারি সারি নারকেল গাছ এই দ্বীপটিকে অনন্য করে তুলেছে।
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে দীর্ঘ। দ্বীপের তিনটি দিক হল বেডরক যা উচ্চ জোয়ারে ডুবে যায় এবং ভাটার সময় উঠে যায়। যদি সেগুলি নেওয়া হয় তবে এর ক্ষেত্রফল প্রায় প্রায় ১৭ বর্গ কিলোমিটার হবে। এই দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। দ্বীপের প্রস্থ কখনও ৭০০ মিটার এবং কখনও ২০০ মিটার। দ্বীপের পূর্ব, দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকে সমুদ্রের মধ্যে অসংখ্য পাথরের স্তূপ রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের গড় উচ্চতা ৩.৬ মিটার। সেন্ট মার্টিন্সের পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে জুড়ে রয়েছে প্রায় ১০-১৫ কিমি প্রবাল প্রাচীর।
যোগাযোগ:
কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও জান্তা সরকারের মধ্যে সংঘর্ষে মর্টার শেল ও গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শাহপরী দ্বীপের সীমান্ত জুড়ে গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় এপারের মানুষের। রাত ১১টা পর্যন্ত গুলির শব্দ শোনা যায়।
শাহপরী দ্বীপের এক বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকট গুলির শব্দে অনেকেই আতঙ্কিত। অন্য দিনের তুলনায় বেশি গোলাগুলি হয়। সীমান্তের জেলেরা মর্টার শেল ও বুলেটের শিকার বেশি। দ্বীপের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানান, সকাল থেকে সীমান্তে বৃষ্টির মতো গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। সীমান্তের ওপারে আগুনের ধোঁয়া ও কুণ্ডও দেখা যায়।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের একটি আবাসিক হোটেলের পরিচালক। ইসহাক বলেন, ভারী মর্টার শেল ও গোলাগুলির শব্দে দ্বীপের ভবনগুলোও কেঁপে ওঠে। এমন শব্দ আগে কখনো শুনিনি।
কৃষক মোহাম্মদ আমিন বলেন, সকালে নাফ নদীর পাশের মাঠে কাজ করতে যাই। সে সময় মিয়ানমার থেকে গুলির শব্দ শুনতে পাই। এক ঘণ্টায় শতাধিক গুলির শব্দ শোনা গেছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি সেন্ট মার্টিন-শাহপারী দ্বীপে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির খবর পেয়েছেন। সীমান্তে আমাদের বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমারের মংডুতে শাহপরী দ্বীপের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। সীমান্তের ওপারের গ্রামগুলোতে দেশটির জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। উভয় পক্ষই ভারি অস্ত্র ব্যবহার করছে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন জানান, নয়াপাড়া, শাহপরী দ্বীপ সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত। কেউ কেউ ডাকছে। স্থানীয়দের মধ্যে যাতে কোনো আতঙ্ক না থাকে সেজন্য খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
এদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী জানান, সীমান্তে বিজিবির টহল ও জনবল বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের একজন নাগরিককেও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
প্রথমবার গুলির শব্দ শুনে এলাকার অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, “মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলাকালীন গুলির শব্দ এই প্রথম শুনলাম। এগুলি খুব ভারী শব্দ। দ্বীপের সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।”
এদিকে টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, ওপার থেকে গুলি ও মর্টার শেল আসায় ভয় পাচ্ছি। এ ছাড়া রোহিঙ্গাসহ অন্যদের অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বেড়েছে। তবে সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে কোস্টগার্ড-বিজিবি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, সকাল থেকে মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই গোলাগুলি হচ্ছিল।
অন্যদিকে হোয়াইক্যং, উলুবুনিয়া, হ্নিলা, নয়াপাড়ায় অন্য দিনের মতো গুলির শব্দ শোনা যায়নি।
1 Comment