বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর সংখ্যা কমছেই কেন?
অবশ্যই মনে রাখতে হবে হজ সৌদি আরবের বা কোন দেশের ব্যবসার অংশ হতে পারেনা। এটি সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য তাদের স্তম্বে বেঁধে দেওয়া একটি ফরজ কাজ বা ইবাদত । সে ফরজ কাজকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার কর্তৃক সহজ করে দেওয়া উচিত । কিন্তু সৌদি আরব খরচ বাড়াচ্ছে এবং এই প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশও প্রচুর খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় খরচ মেটাতে না পেরে হজ করতে সম্ভব হচ্ছে না অনেকেরই। তাই কমে যাচ্ছে হজ যাত্রীর সংখ্যা।
২০১৮-১৯ সালের তুলনায় হজ খরচ ৮০% বেড়েছে। সেই সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়েছে। এক হজের খরচে ছয়জন ওমরাহ করতে পারবেন। ফলে ওমরাহর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এখন এদেশ থেকে প্রতি বছর পাঁচ লাখ মুসলমান ওমরাহ করতে যান।
কেন হজযাত্রীর সংখ্যা কমছে, চার দফা হজে নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু কোটার এক তৃতীয়াংশ শূন্যই রয়েছে। এবার সরকারিভাবে ৪ হাজার ২৬০ জন এবং বেসরকারিভাবে ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনকে হজের জন্য কোটা বরাদ্দ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সময় বাড়ানো সত্ত্বেও কোনো কোটা পূরণ হচ্ছে না। এ নিয়ে হজ এজেন্সি, হজযাত্রী ও সরকারি কর্তৃপক্ষের ভিন্ন মত রয়েছে। তবে যাত্রী কমার মূল কারণ খরচ বৃদ্ধি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, হজের খরচ অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। খরচ বাড়াতে ইচ্ছে থাকলেও হজে যেতে পারছেন না অনেকে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ বেড়েছে।
এছাড়া সৌদি আরবে হজের আনুষঙ্গিক ব্যয় অনেক বেড়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে হজ প্যাকেজের খরচ নির্ধারণ করতে হবে। হজ প্যাকেজের একটি বড় অংশ যায় বিমান ভাড়ায়। সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, নির্ধারিত বিমান ভাড়া অনেক বেশি নেওয়া হয়। হজযাত্রীদের কাছে সাধারণ যাত্রীদের চেয়ে বেশি বিমান ভাড়া নেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজ বাবদ ব্যয় হবে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর বিশেষ প্যাকেজে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজের মূল্য ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজ ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। তবে আগের বছরের তুলনায় খরচ কিছুটা কমিয়ে নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। আগের বছরের মতো এবারও বেশি ব্যয়ের কারণে হজ কোটা পূরণ হয়নি। গত বছর কোটার চেয়ে ৬ হাজার কম হজযাত্রী হজে গিয়েছিলেন।
২০২২ সালে হজের অফিসিয়াল প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০১৬ সালে হজের খরচ দেড় লাখ থেকে বেড়ে প্রায় দুই লাখ একুশ হাজারে উন্নীত হয়। ২০২০ সালে এই প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল জনপ্রতি ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা।
কোন দেশে খরচ কত:
পাকিস্তান
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত বছরের ১৬ নভেম্বর পাকিস্তানের হজ নীতি ঘোষণা করে। আগের বছরের তুলনায় দেশের নাগরিকদের জন্য ১০ লাখ ৭৫ হাজার রুপিয়া খরচ হয়েছে। ডলারের বিনিময় হারের দিক থেকে বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সোয়া চার লাখ টাকার মতো।
ভারত
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভারতের হজ কমিটি প্রতি বছর হজ নীতি ঘোষণা করে। সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর তারা যে ন্যূনতম প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে তা রাজ্যের উপর নির্ভর করে তিন থেকে চার লাখ টাকা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা চার থেকে সাড়ে পাঁচ লাখের মধ্যে।
ইন্দোনেশিয়া
গত বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন মুসলিমকে হজে যেতে খরচ করতে হয়েছে তিন হাজার ৩০০ ডলার বা তিন লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ টাকা। আগের বছরের তুলনায় এই খরচ প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে। হজযাত্রীদের দেশের সরকারি ‘হজ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ তহবিল থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়।
মালয়েশিয়া
গত বছর মালয়েশিয়ায় যাদের মাসিক আয় ৯৬ হাজার টাকার কম তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে হজ ব্যয় ধরা হয়েছিল২১৮৭৫৪ টাকা। মাসিক আয় বেশি হলে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা।
বাংলাদেশ থেকে আসা হজযাত্রীদের খরচ বাড়ার পেছনে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন ধর্মমন্ত্রী।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, “সৌদি আরবে এখন বাড়ি ভাড়া বেড়েছে, ১৭% ভ্যাট যোগ করা হয়েছে। সেখানে অনেক বাড়ি ভাঙার কারণে বাড়ি ভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। সব খরচ বেড়েছে। তারপরও আমরা গত বছরের তুলনায় এক লাখ টাকা কমিয়েছি। আর কমানো সম্ভব নয়।”
তাঁর মতে, এটি একটি ব্যক্তিগত ইবাদত। তারপরও, আমরা নানাভাবে উৎসাহিত হই। কিন্তু না গেলে কিছু করার নেই। তবে যারা ওমরাহ করতে যাচ্ছেন তাদের ওমরার খরচ কম। দিন দিন বাড়ছে ওমরাহযাত্রী।
আরও পড়ুন
হজ্জের যাত্রী কোটার চেয়েও অর্ধেক কমে গেছেঃ পারছেন না খরচের সাথে পাল্লা দিতে
1 Comment